Skip to main content

সুরা আল কাহ্ফ

সুরা আল কাহ্ফ [সুরা কাহ্ফ একটি ফজিলতপূর্ণ সূরা। বিশেষ করে শুক্রবারে সুরা কাহ্ফ পাঠ সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায়। একটি দীর্ঘ সুরায় বর্ণিত বিষয়গুলো অতি সংক্ষেপে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। আগ্রহী হলে একবার পাঠ করা যায়।] মক্কায় অবতীর্ণ। রুকু সংখ্যা ১২ এবং আয়াত ১১০ নামকরণ : প্রথম রুকুর দশম আয়াতে উল্লেখিত কাহ্ফ শব্দকেই নাম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। নাযিলের সময়কাল : মক্কী যুগের সুরাগুলো নাজিলের সঠিক সময় অর্থাৎ সন তারিখ জানা বেশ কঠিন। বরং সুরাগুলোয় উল্লেখিত বিষয়াবলীর আলোকে কোন্ অধ্যায়ে নাজিল হয়েছে তা উপলব্ধি করা যায়। দাওয়াতের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো কোনো তাফসিরকারক রসুল (সা)-এর মক্কীজীবনকে চারটি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন। নবুওয়াত লাভের পর প্রথম তিনটি বছর গোপন দাওয়াত দানের সময়। আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিত বন্ধু-বান্ধবের কাছে সে সময়ে দাওয়াত প্রদান করা হয়। পরবর্তী দুই বছর প্রকাশ্য দাওয়াত যার ফলশ্রুতিতে নানা অপপ্রচার, নিন্দাবাদ ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। তখনও শারীরিক নিপীড়ন-নির্যাতন তেমন শুরু হয়নি। তৃতীয় অধ্যায়ে (৫ম নববী বছর থেকে দশম বছর) শুরু হয় প্রচন্ড বিরোধীতা, জুলুম-নির্যাতন, আবিসিনিয়ায় হিজরত ও সামাজিক বয়কট। চাচা আবু তালেব এবং খাদিজা (রা)-এর ব্যক্তিত্ব ও পারিবারিক প্রভাবে মুহাম্মদ (সা)-কে সরাসরি আঘাত করতে সাহসী না হলেও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের ওপর চলে সীমাহীন নির্যাতন। বিশেষ করে গরীব ও সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তিহীনদের প্রতি নির্যাতন ছিল অসহনীয়। আত্মীয়তা ও বংশীয় সম্পর্কের কারণে আবু তালেব এবং তাঁর বংশের লোকজন অনেকেই ইসলাম গ্রহণ না করেও রসুল (সা)-কে সাহায্য-সহায়তা করেছেন। দশম নববী সনে আবু তালেব ও খাদিজা (রা) উভয়ই মারা গেলে নবুয়তের চতুর্থ অধ্যায় (হিজরতের পূর্ব পর্যন্ত) শুরু হয়। অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন এমনকি মুহাম্মদ (সা)-কে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও হত্যা করার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। মক্কায় টিকতে না পেরে ত্রয়োদশ বছরে আল্লাহপাকের নির্দেশক্রমে রসুলুল্লাহ (সা) মুসলমানদের সাথে নিয়ে মদীনায় হিজরত করেন। সুরার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করলে বোঝা যায়, তৃতীয় অধ্যায়ে এই সুরাটি নাযিল হয়। মনে হয় ৫ম নববী সনে বা কাছাকাছি সময়ে নাযিল হয়। প্রচন্ড বিরোধীতা শুরু হলেও আবিসিনিয়ায় হিজরত তখনও হয়নি। আসহাবে কাহাফের কাহিনী উল্লেখ করে ঈমানদারদেরকে বোঝানো হয়েছে, ঐ যুবকদের কাছে ঈমান ছিল অত্যন্ত দামী এবং তারা দেশ ত্যাগ করতে রাজি কিন্তু ঈমান ছাড়তে রাজি হয়নি। বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য : মক্কার মুশরিকদের তিনটি প্রশ্নের জবাবে এই সুরাটি নাযিল হয়। প্রশ্ন তিনটি ছিল : এক, আসহাবে কাহ্ফ কারা ছিলেন? দুই. খিজির (আ)-এর ঘটনা এবং এর তাৎপর্য কী? তিন. যুলকারনাইনের ঘটনা কী? এ-সব চর্চা আরবের মুশরিকদের মাঝে ছিল না। মুহাম্মদ (সা) সত্য নবী কি না তা জানার জন্য ইহুদিদের সাথে পরামর্শ করলে তাদের শেখানো প্রশ্নই তারা মুহাম্মদ (সা)-কে করেন। এর বাইরে কুরআনের পরিচয়, কাফিরদের সতর্ককরণ ও পরিণতি এবং ঈমানদারদের নেক আমলের পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : (১-৮) মুহাম্মদ (সা)-এর ওপর কুরআন অবতীর্ণ করার কারণে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজেরই প্রশংসা করে কুরআন মজিদের পরিচয় পেশ করে বলেন, এর মধ্যে কোনো বক্রতা নেই, সোজা কথা বলার কিতাব এবং আল্লাহর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে ও ঈমান এনে যারা সৎ কাজ করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয়। শিরক সম্পর্কে মানুষকে কঠিনভাবে ভয় দেখায়। নবী-রসুলগণ নিজেদের ওপর জুলুম-নির্যাতনের চেয়ে স্বজাতি ঈমান না আনার কারণে বেশি পেরেশান হয়ে পড়তেন। ঈমান না আনার কারণে মুহাম্মদ (সা) যেন নিজেকে ধ্বংস করে ফেলার উপক্রম করেছিলেন। আল্লাহপাক তাঁকে সান্ত¡না দিয়ে বলেছেন, পেরেশানির কিছু নেই। দুনিয়ার জীবনে সব সাজ-সরঞ্জাম পরীক্ষা বিশেষ এবং আল্লাহ দেখতে চান এ-সব পেয়ে কে ভালো কাজ করে। (৯-২৬) গুহাবাসীদের বিষয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কয়েকজন যুবক ঈমান আনার ফলে সীমাহীন নির্যাতনের কারণে তারা তাদের জনপদ ছেড়ে গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আল্লাহর ওপর ছিল তাদের অগাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতা। তারা জানতেন, দেশে থাকলে অত্যাচারী শাসক তাদেরকে হত্যা করবে নয়তো তাদেরকে ঈমান থেকে বিচ্যুত করবে। শত প্রতিকূলতার পরও তারা ঈমানের ওপর অবিচল থাকতে রাজি ছিল এবং আল্লাহপাক তাদেরকে সাহায্য করেছেন। তিনি সুদীর্ঘ সময় তাদেরকে তৃপ্তির ঘুমে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন। তাদের সাথে ছিল একটি কুকুর। গুহার ভেতরে প্রশস্ত জায়গায় তারা ঘুমিয়েছিলেন এবং কুকুর দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে তাদের পাহারায় নিয়োজিত ছিল। বাইরে থেকে কেউ উঁকি মেরে দেখতে চাইলে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। ঘুমে থাকার সময়টা ছিল ৩০০ বছর বা তার কমবেশি। আল্লাহপাক তাদেরকে পাশ ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং সূর্যের আলো তাদের কষ্টের কারণ হয়নি। যুবকরা জাগ্রত হওয়ার পর তাদের একজনকে খাবার (ভালো খাবার অর্থাৎ হালাল খাবার) ক্রয় করতে বাজারে পাঠালে নগরবাসী উপলব্ধি করে, অনেক পূর্ববর্তী শাসকের সময়কালের মুদ্রা এবং এভাবেই আল্লাহপাক নগরবাসীকে তাদের অবস্থা জানিয়ে দেন। গুহায় অবস্থানকালটা তাদের কাছে মনে হয়েছে একদিন বা এর থেকে কিছু কম। এরপর তাদের মৃত্যু হলে লোকজন সেখানে একটি প্রাচীর দাঁড় করে দিতে বা কোনো ইবাদতখানা তৈরী করতে চেয়েছিল। নেককারদের কবর নিয়ে মাতামাতি একটি প্রাচীন জাহেলিয়াত। এখানে যুবকের সংখ্যা এবং সময় আল্লাহপাক স্পষ্ট করেননি। মানুষ এ-সব নিয়েই বিতর্ক করে অথচ আল্লাহপাক এর মধ্য দিয়ে তাঁর অসীম ক্ষমতা ও মৃত্যুর পরে পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সাথে সাথে ঈমানদারদের সান্ত¡না (ইতোপূর্বের যারা ঈমান এনেছিল এমনই আচরণ তাদের সাথে করা হয়েছে তার একটি দৃষ্টান্ত) এবং কাফিরদেরকে সতর্ক করা যে জুলুম-নির্যাতন কখনই মানুষকে ঈমান থেকে বিচ্যুত করা যায় না। মাঝখানে বলা কথা, ভবিষ্যতে কোনো কাজ সম্পাদন করতে চাইলে ইনশা-আল্লাহ বলতে হবে। কারণ মানুষ কর্মসম্পাদনকারী নন। আল্লাহতায়ালা না চাইলে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়। (২৮-৩১) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নাজিল হয় তা হুবুহু প্রকাশ করার দায়িত্ব রসুলের (সা)। এর মধ্যে কোনো কম-বেশি করার সুযোগ নেই এবং তাতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। যারা আল্লাহর অনুগত ও সকাল-সাঁঝে আল্লাহকে ডাকে তাদেরকে সঙ্গ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহর স্মরণ থেকে যারা গাফেল তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত চলে এসেছে যার ইচ্ছা মেনে নেবে এবং যার ইচ্ছা অস্বীকার করবে। অস্বীকারকারীর পরিণতি জাহান্নাম। পক্ষান্তরে সৎকর্মশীলদের প্রতিদান কখনই নষ্ট হবে না এবং তারা পাবে চির বসন্তের জান্নাত। (৩২-৪৯) বাগান মালিকের ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দু’টি বাগান চতুর্দিকে খেজুরের গাছ এবং মাঝখানে কৃষি ক্ষেত। বাগানের মাঝে ছিল নহর এবং অত্যন্ত ফলবান বাগান। এক মালিক আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে অহঙ্কার প্রকাশ করে এবং এ বাগান তার নিজের উপার্জন ও কখনই হাতছাড়া হবে না বলে মনে করে। তার এই কুফুরির কারণে আল্লাহ তার বাগান ধ্বংস করে দেন এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির শুকরিয়া জ্ঞাপনের কারণে আল্লাহপাক নেয়ামত বাড়িয়ে দেন। ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সাময়িক সৌন্দর্য। আসলে সৎকাজসমূহই স্থায়িত্ব লাভকারী এবং ফলাফলের দিক থেকে উত্তম। কিয়ামতের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে সেদিন রবের সম্মুখে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং মানুষ ছোট-বড় সকল আমলই দেখতে পাবে। (৫০-৫৫) আদম (আ) প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলা হয়েছে আদমকে সেজদা করার আদেশ দেয়া হলে ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করে। ইবলিস মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। শয়তানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণকারীকে আল্লাহ জালেম বলেছেন। আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি কাজে আল্লাহ কারো সাহায্য গ্রহণ করেননি। পথভ্রষ্টদের সাহায্য করাও আল্লাহর রীতি নয়। কিয়ামতের দিন শিরককারীকে তাদের উপাস্যদের ডাকতে বলা হবে। সেদিন কেউ এগিয়ে আসবে না। এ-সব অপরাধীদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কুরআনের মাধ্যমে তাদেরকে নানাভাবে বোঝানো হয়েছে কিন্তু পরকাল অবিশ্বাস কুরআন মানার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। (৫৬-৫৯) রসুলদের দায়িত্ব সুসংবাদ প্রদান ও সতর্ক করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা হেদায়াত যারা মানে না তার মূলত জালেম। আল্লাহ তাদের অন্তরে আবরণ ও কানে বধিরতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তারা সৎ পথে আসবে না। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল। ফলে শাস্তিদানে বিলম্ব হচ্ছে। মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্য দিনক্ষণ নির্দিষ্ট রয়েছে। (৬০-৮২) মুসা (আ) ও খিজির (আ)-এর ঘটনার দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। সৃষ্টিজগতের অনেক গোপনীয় বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহপাক খিজির (আ)-কে দান করেছেন। খিজির (আ)-এর কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য মুসা (আ) তাঁর সাথে থাকতে চাইলে তিনি শর্ত আরোপ করেন, তাঁর কাজে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। চলার পথে খিজির (আ) নৌকা ফুটো করে দেন। অহেতুক একটি নৌকা ফুটো করে দেয়া মুসা (আ) মেনে নিতে পারেননি। ফলে তিনি প্রশ্ন করে বসেন। আবার কিছুদূর যাওয়ার পর খিজির (আ) এক বালককে হত্যা করেন। এতেও মুসা (আ) আপত্তি করেন। সর্বশেষে তাঁরা ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে কোনো লোকালয়ে উপস্থিত হয়ে খাবার চাইলে তারা মেহমানদারি করতে অস্বীকার করে। অথচ খিজির (আ) তাদের একটি জীর্ণ দেয়াল মেরামত করে দেন। অহেতুক এই উদারতা প্রদর্শন মুসা (আ)-এর পছন্দ হয়নি। খিজির (আ) বলেন, আপনার আর আমার সাথে থাকার দরকার নেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। তিনটি ঘটনারই ব্যাখ্যা দেন খিজির (আ)। নৌকাটি ছিল কয়েক গরীব মানুষের। তারা সেটি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সামনে জালেম শাসকের লোকজন নৌকা অধিগ্রহণ করছিল। ত্রুটিযুক্ত নৌকা তারা নেবে না। তাই তিনি নৌকাটি ছিদ্র করে দেন। বালকটি এক নেক বান্দার সন্তান, বড় হয়ে সেই বালকটি কুফুরি করবে। তাই তাকে হত্যা করেছেন এবং আশা করেছেন আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে নেক সন্তান দিবেন। দেয়ালের বিষয়টি হলো এই যে, দু’জন ইয়াতিম বালকের পিতা সন্তানের জন্য কিছু সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন। খিজির (আ) চাইলেন ছেলে দু’টি বড় হয়ে সম্পদের সন্ধান পাক। এ-সব জ্ঞান আল্লাহই খিজির (আ)-কে দান করেন। আসলে আল্লাহপাকের সৃষ্টির অনেক বিষয়াবলী আমাদের উপলব্ধির বাইরে। তাই মেনে নেয়া ও ধৈর্য ধারণের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। (৮৩-১০১) মুশরিকদের প্রশ্নের জবাবে যুলকারনাইন সম্পর্কে দীর্ঘ বর্ণনা দেয়া হয়েেেছ। যুলকারনাইন নিছক একজন শাসকই নন, একজন ন্যায়পরায়ণ ও তাওহীদবাদী ছিলেন। আমাদের সমাজে সামান্য ক্ষমতা পেয়ে অনেকে অত্যাচারী হয়ে পড়ে, কিন্তু যুলকারনাইন তা থেকে ব্যতিক্রম। যুলকারনাইন কে ছিলেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। প্রাচীন বিশ্বজয়ী বিভিন্ন শাসকদের সম্পর্কে নানাজন যুলকারনাইন কল্পনা করেছেন। কেউ মনে করেন আলেকজান্ডারই যুলকারনাইন আবার কেউ মনে করেছেন ইরানী শাসক খুরসই ছিলেন যুলকারনাইন যার ন্যায়পরায়ণতা তাঁর শত্রুও স্বীকার করতেন। খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৯ অব্দের কাছাকাছি সময়ে তাঁর উত্থান হয়। এখানে যুলকারনাইনের তিনটি অভিযানের কথা আল্লাহ নিজেই উল্লেখ করেছেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত বলতে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে স্থলভাগের সীমানা পর্যন্ত বোঝানো হয়েছে। বিস্তৃর্ণ ভূখন্ডের অধিকারী যুলকারনাইনের সম্মুখে এটি ছিল একটি পরীক্ষা, তিনি সুশাসন না জুলুম-নির্যাতন করেন। তিনি বলেছিলেন, তাঁর সা¤্রাজ্যে যারা জুলুম করবে তাদেরকে তিনি শাস্তি দেবেন এবং যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে। তারপর তৃতীয় এক অভিযানে বের হয়ে দুই পাহাড়ের মাঝামাঝি তিনি এমন এক জাতির সম্মুখিন হন যারা ছিল জ্ঞান-বুদ্ধি ও ক্ষমতায় দুর্বল। সেখানকার অধিবাসীরা ইয়াজুজ-মাজুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে তারা লুটতরাজ করে ও শান্তি ব্যাহত করে। তারা যুলকারনাইনকে কর দেয়ার প্রস্তাব করে এবং বিনিময়ে ইয়াজুজ-মাজুজ ও তাদের মাঝে একটি দেয়াল নির্মাণের আবেদন করে। তিনি জবাবে বলেন, আল্লাহ যা দিয়েছেন সেটিই যথেষ্ট, তোমরা শুধু শ্রম দাও আমি দেয়াল নির্মাণ করে দেব যা তারা অতিক্রম করতে পারবে না বা সুড়ঙ্গও তৈরি করতে পারবে না। যুলকারনাইন নিজের কোনো কৃতিত্ব দাবী না করে বলেন, সবই আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তিনি যতদিন চাইবেন ততদিন এই দেয়াল টিকে থাকবে। এরপর সিংগায় ফুতকার ও কিয়ামতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। জাহান্নামকে কাফিরদের সামনে আনার কথা বলা হয়েছে। এরা উপদেশ শোনার ব্যাপারে একেবারেই অন্ধ হয়েছিল। (১০২-১১০) এখানে কাফিরদের প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্যদেরকে কর্মসম্পাদনকারী বানিয়ে নিয়েছে। যারা এভাবে শিরক করে তাদের আপ্যায়নের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো অথচ মনে করতো, তারা সঠিক পথেই রয়েছে। এ-সব লোক মূলত আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর সামনে হাজির হওয়াকে অস্বীকার করে। যারা কুফুরি করে ও রসুলদের সাথে বিদ্রুপ করে তাদের প্রতিদান জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে আপ্যায়নের জন্য রয়েছে ফেরদৌসের বাগান, সেখানে চিরকাল থাকবে এবং কখনো সেখান হতে বের হতে তাদের মন চাইবে না। আল্লাহর বড়ত্ব, মাহাত্ম্য ও প্রশংসা এতো উচ্চে যা উচ্চারণ করে বা লিখে শেষ করা যায় না। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে সমুদ্রের পানিকে যদি কালি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং আরো সমপরিমাণ কালি আনা হয় তাহলেও শেষ করা যাবে না। এখানে মুহাম্মদ (সা)-এর মর্যাদা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তিনি অন্যান্যদের মতই একজন মানুষ, এক আল্লাহই কেবল ইলাহ, দ্বিতীয়ত কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রত্যাশী সকলের কর্তব্য নেক আমল করা এবং ইবাদতে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করা। ১৭.০২.২০২১

Comments