Skip to main content

হায়! মানুষ যদি জুলুমের পরিণতি বুঝতো!



চতুর্দিক শুধুই জুলুম। কে বলবে আখেরাতেবিশ্বাসী এ একটি জাতি? জুলুম অর্থ কারো অধিকার হরণ। যেমন শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম। কারণ আল্লাহর অধিকার হলো যে, তাঁর বান্দারা একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্য করবে এবং এই আনুগত্যে কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না। মানুষ আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টি এবং সকল মানুষ আদমের সন্তান ও পরস্পরের সমান। সবাই সবার প্রতি সদাচরণ করবে এবং কেউ কারো কোন ক্ষতি করবে না বা ক্ষতি করার চিন্তাও করবে না-এটা মানুষের অধিকার। কোন মানুষ যদি জেনে-বুঝে কারো ক্ষতি করে, তবে সে যার ক্ষতি করলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষমা না করলে আল্লাহও তাকে ক্ষমা করবেন না। মানুষের কথা, কাজ, লেনদেন বা ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরী-বাকুরী ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাউকে কথায় কষ্ট দেয়া বা সম্মানহানি বা আর্থিক ক্ষতি সবই জুলুম এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। আল্লাহর বাণী-নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। একটু পরেই বলা হয়েছে তাদেরকে হুতামায় নিক্ষেপ করা হবে। আর সেই হুতামার পরিচয় হলো-আল্লাহর আগুন, প্রচন্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত, অন্তর পর্যন্ত স্পর্শ করে। আমার জানামতে জাহান্নামের ভয়াবহতা ও আল্লাহর ক্ষোভ প্রকাশের ক্ষেত্রে এই এক জায়গাতেই জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষের একটি সম্মানবোধ রয়েছে। গোপন বা প্রকাশ্যে কখনই সেই সম্মান বিনষ্ট করা যাবে না। সব ধরনের মানুষ-আপন পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, শ্বশুর-শাশুড়ি,ছেলেবৌসহ নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন, চলারপথের সাথী, অধীনস্থ, ধনী-দরিদ্র, পথের ভিখেরি-এক কথায় সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ সম্মান পাওয়ার অধিকারী। কথায়-কাজে-আচরণে কারো অধিকার হরণই জুলুম। কথার কারণে যদি এই পরিণতি হয় তাহলে মানুষকে হত্যা করা, শারীরিকভাবে আহত করা, গুম করা, চাকুরীচ্যুত করা, মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, ঘুষ নেয়া, ওজনে কম ও ভেজাল দেয়া ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা কত ভয়াবহ জুলুম ও এর পরিণতি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহর রাসূল (সা)ও কম বলেননি। তাঁর বাণী-ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়,মুমিন নয়,মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ঠ থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। মানুষের প্রতি জুলুম করা নিরেট নাস্তিক ও খোদাদ্রোহীর পক্ষেই কেবল সম্ভব। রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে তার নাগরিকদেরকে সর্বপ্রকার জুলুম থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে। যে কোন জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাগরিকদের অধিকার হলো রাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় গ্রহণের। এ জন্য রাষ্ট্রের রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিচারালয় এবং প্রশাসন। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা তাদের মৌলিক কাজ। কিন্তু কখনো যদি তারা রাষ্ট্রের নাগরিকদের ওপর জুলুম করে তাহলে সাধারণ মানুষের করা জুলুম অপেক্ষা তা হবে বড় ভয়াবহ ও আল্লাহর বড় ক্রোধউদ্রেগকারী। কারণ তারা তো নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব পালনের পরিবর্তে উল্টো জুলুমের পথ বেছে নিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের আইন-শঙ্খলা বাহিনীর মর্যাদা অতি উচ্চে। হাদিসের ভাষায়-দুটি চোখকে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনে পোড়াবেন না। তার একটি হলো, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে অশ্রুঝরায় এবং যে চোখ জনগণের জান-মালের রক্ষায় বিনিদ্র যাপন করে। শেষোক্তটা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কে বলা হয়েছে। একটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। জনগণ সেখানে গেলে পূর্ণ নিরাপত্তা বোধ করবে এবং জনগণ তাদেরকে নিয়ে গর্ব করবে; যেমন গর্ব করে বৃটিশ ও জার্মান জাতি তাদের পুলিশকে নিয়ে। দুর্ভাগ্য আমাদের। গুম-খুন-জনহয়রানি সকল নির্যাতনমূলক কাজে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা লক্ষণীয়। নিরীহ-নিরপরাধ নারীরা পর্যন্ত পুলিশী হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। পর্দানশীন নারী যারা কখনো একটি মানববন্ধনেও অংশগ্রহণ করে না, অথচ কুরআনের মাহফিল বা দোয়া মাহফিল থেকে ধরে আনা কতবড় জুলুম তা কল্পনা করতেও শিহরে উঠতে হয়। পবিত্র রমযান মাসে এমন আচরণ আল্লাহ সম্পর্কে বেপরোয়া মনোভাব ও চরম ঔদ্ধত্য বৈ আর কিছু নয়। আল্লাহর বাণী-যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি। এ দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। এখানে মুমিনের হারাবার কিছু নেই। আল্লাহ উভয়েরই পরীক্ষা নিচ্ছেন। মুমিনের পরীক্ষা হলো সে কতখানি ধৈর্যাবলম্বন করে, আর কাফিরের পরীক্ষা হলো সে কতখানি বাড়াবাড়ি বা সীমালঙ্ঘন করে। আল্লাহর চোখকে ফাঁকি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। আজকে হয়তো জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে বিশাল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আখিরাতে এটাই হবে তার কাল। একদিন রাসূল (সা) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি জান কে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র? সাহাবায়ে কেরাম জবাবে বলেছিলেন যে, যার অর্থবিত্ত বা ধন-সম্পদ নেই, সেই সবচেয়ে দরিদ্র। রাসূল (সা) বলেছিলেন, না, আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র সেই, যে নামায-রোযার মত নেক আমলের সাথে সাথে মানুষের ওপর জুলুম করে। আখিরাতে প্রতিটি জুলুমের বদলা জালিমকে দিতে হবে এবং তা দিতে হবে নেক আমল দিয়ে। এক সময় তার সকল নেক আমল শেষ হয়ে যাবে এবং তখন মজলুমের গুনাহ জালেমকে দিয়ে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সকল জালেমের পরিণতি এমনই হবে। একটি আশার বাণী হলো-অতঃপর তাওবা না করে। তাওবা করে নিজেকে সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ করে নেয়ার মাঝে একটি বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আমরা মহান আল্লাহর কাছে এই বলে দেয়া করি-হে আমাদের রব! তুমি আমাদের ওপর এমন বিপদ দিও না যা আমরা সহ্য করতে না পারি, আর যারা আমাদের ওপর জুলুম করছে তুমি তাদেরকে হেদায়াত দান করো, আর হেদায়াত নসিবে না থাকলে, তুমি তাদের থেকে জুলুম করার ক্ষমতা ছিনিয়ে নাও, আর আমরা যখন তোমার কাছে ফিরে যাব তখন পূর্ণ মুসলিমরূপে ফিরিয়ে নিও। আমিন। ০৭/০৬/২০১৭

Comments