রমযান ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস ও ক্ষমা করার মাস
মানুষ আল্লাহতায়ালার বড় আদরের ও প্রিয় সৃষ্টি। মানুষকে
শাস্তিদান আল্লাহর অভিপ্রায় নয়। সৃষ্টির প্রথম মানুষকে দিয়ে তিনি তা দেখিয়ে দিয়েছেন।
ইবলিস ও আদম (আ.) দু’জনেই
আল্লাহর নাফরমানি করেছিল। ইবলিস দম্ভ ও অহঙ্কার প্রকাশ করে আল্লাহর অভিশপ্ত হয়েছিল।
পক্ষান্তরে আদম (আ.) অপরাধ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। আল্লাহ
তাঁর বান্দাকে শুধু ক্ষমাই নয় নবুয়তি দান করে সম্মানিত করেছেন। বান্দার অপরাধ হওয়াটা
অসম্ভব নয় বরং ভুল করাটাই মানবীয় প্রকৃতি। ভুল করার সাথে সাথে বান্দা যদি ক্ষমাপ্রার্থী
হয় তাহলে সে আর পূর্বের ভুলের জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর
কাছে ফিরে আসার জন্য বারবার আহবান জানিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা সব সময়ই তাঁর বান্দাকে ক্ষমা
করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এর মধ্যে রমযান মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য আরো বেশি
রহমত প্রদর্শন করতে চান। রাসূল (সা.) একদিন মিম্বরে আরোহন করছেন আর আমিন আমিন বলছেন।
সাহাবায়ে কেরাম আমিন আমিন বলার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-‘এইমাত্র জিবরাইল (আ.) বলে গেলেন,
যে রমযান মাস পেল অথচ গুনাহ মাফ করে নিতে পারলো না, সে যেন ধ্বংস হয়, আমি বললাম-আমিন’। এতে বোঝা যায়, রোযার উদ্দেশ্যকে
(তাকওয়া অর্জন) খেয়াল রেখে রোযা পালন করলে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার বান্দার গুনাহ মাফ
করে দেন। প্রতিটি দিনেই রাতের শেষপ্রহরে আল্লাহপাক নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে জানতে
চান-‘কে আছ
গুনাহ মাফ করে নিতে? আমি মাফ করতে চাই’। রোযা পালন ও নামাযে দন্ডায়মান হয়ে যখন কেউ আল্লাহর কাছে
কিছু পেশ করে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেন না। আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্য কতভাবেই না তিনি
বলেছেন। আল্লাহ বলেন-‘হে নবী!
আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে জানতে চায় তখন বলো, আমি তাদের অতি নিকটে; যে ডাকে
আমি তার ডাক শুনি ও জবাব দেই। কাজেই আমার আহবানে সাড়া দেয়া ও আমার প্রতি ঈমান আনা তাদের
একান্ত কর্তব্য’। কোন
নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করা নয় বা কোন পথ অতিক্রম করে নয় বা কাউকে মাধ্যম বানিয়ে
নয়, যে কোন সময়, যে কোন স্থানে সরাসরি আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন পেশ করার এ এক অপূর্ব
সুযোগ এবং দোয়া শ্রবণ ও জবাবদানেরও নিশ্চয়তা রয়েছে। রমযান মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা
এবং বেহেশ্তের দরজাসমূহ উন্মুক্ত ও জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়াতে এ মাসে মানুষের
হৃদয়-মন আল্লাহমুখি হয়ে থাকে। যে এই সুযোগের পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে সেই তো ভাগ্যবান,
সে তো পুরোপুরি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে।
রমযান মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির এক মহা
সুযোগ। এখন প্রশ্ন হলো আল্লাহর বান্দাদের আচরণ কেমন হওয়া দরকার? তারাও হবে আল্লাহর
গুণে গুণান্বিত। রাসূল (সা.) এমনিতে অত্যন্ত দয়ার্দ ও কোমল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন, তদুপরি
তিনি এ মাসে মানুষের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়তেন। আমাদের উচিৎ আল্লাহর বান্দাদেরকে
ক্ষমা করা ও তাদের সাথে কোমল আচরণ করা। সবশ্রেণি ও পেশার মানুষের সাথে নম্র ব্যবহারের
প্রতিদান আল্লাহর কাছ থেকে নম্র ও ক্ষমাশীল আচরণ। রাসূল (সা.) বলেছেন-‘যে তার ভাই-এর দোষ-ত্রুটি ক্ষমা
করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করবেন’। তিনি আরো বলেছেন-‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না’। ‘যমীনে যারা আছে তাদের সাথে সদাচরণ
করো তাহলে আসমানে যিনি আছেন তিনিও তোমাদের সাথে সদাচরণ করবেন’। মানুষের প্রতি জুলুম করা আল্লাহর
ক্রোধ-উদ্রেগকারী বিষয় এবং তাদের জন্য রয়েছে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন। ওরা হতভাগা, কপালপোড়া,
বদনসিব আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি। তারপর রমযান মাসে যারা মানুষের ওপর জুলুম করে তারা
মুসলিম নয়, মুসলিম নামের কলঙ্ক শয়তানের সাক্ষাত অনুচর। দুনিয়া ও আখিরাতে ধ্বংসই ওদের
কাম্য। আল্লাহ জালেমের জুলুম থেকে তাঁর বান্দাদেরকে হেফাজত করুন। ২৭/০৫/২০১৭
Comments
Post a Comment