Skip to main content

জুমুয়া বক্তৃতা



বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

কাটাবন মসজিদে ১২-৩০টায় খতিব মহোদয় মিম্বরে আরোহণের পরে আযান এবং আযান শেষে খুতবা হয় (আরবি-বাংলা মিশ্রণে)। খুতবার পরে ইকামত ও নামায এবং নামায শেষে কোন মোনাজাত নেই। আযানের বাক্যগুলো দুবার এবং ক্বদকামাতিচ্ছলা (দুইবার) বাদে ইকামতের বাক্যগুলো একবার বলা হয়। হুবহু মক্কা-মদীনার অনুকরণে।

০২/০৬/২০১৭ কাটাবন জামে মসজিদের সম্মানিত খতিব মাওলানা আনম রফিকুর রহমান আল মাদানী রমযানের প্রথম জুমায় কুরআন মজিদ থেকে সিয়াম সম্পর্কীয় আয়াত ও রাসূল (আ.)-এর বেশ কিছু হাদিস পাঠ করে বলেন যে, রোযার উদ্দেশ্য হলো চরিত্রবান মানুষ তৈরী করা। চরিত্র মানব জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। যার মধ্যে চরিত্র নেই সে সমাজের জন্য একটি আপদ। তিনি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন যে,পূর্ণ ঈমানদার সেই যে চরিত্রের দিক দিয়ে উত্তম। উন্নত চরিত্রগঠনের জন্য প্রয়োজন তাকওয়া, আর তাকওয়া অর্জনের ক্ষেত্রে রোযার কোন বিকল্প নেই। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে রোযাদার বিরত থাকে কেবল আল্লাহরই ভয়ে। রোযাদার জানে দুনিয়ার কেউ না দেখলেও আল্লাহ দেখছেন-এই বোধ-উপলব্ধি রোযার মধ্য দিয়ে একজন রোযাদার লাভ করে। যার মাঝে তাকওয়া রয়েছে তার পক্ষে কখনই মানুষের জন্য অকল্যাণকর কোন কিছু করা সম্ভব নয়। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বর্জনের সাথে সাথে সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নাফরমানিমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার নামই রোযা। রাসূল (সা.) বলেছেন,রোযা রেখে যে মিথ্যা পরিহার করে চলতে পারলো না, তার এই পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। তিনি রাসূল (সা.)-এর বাণী উদ্ধৃত করে বলেন,ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ঠ থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। সমাজে যারা মানুষের প্রতি জুলুম করে ও গুম-খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা কখনই মুমিন হতে পারে না। এ ছাড়াও যারা খাদ্যে ভেজাল দেয়, ওজনে কম দেয় ও ধোকা-প্রতারণা করে তারাও রোযার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়। সে রোযা রেখে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে সমর্থ হয় না। তার এ রোযা নিছক উপবাস বৈ আর কিছু নয়। রাসূল (সা.) একদিন সাহাবীদেরকে প্রশ্ন করেন-তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে গরীব কে? সাহাবায়ে কেরাম জবাবে বলেন,যার অর্থবৃত্ত ও সহায়-সম্পদ নেই, সেই আমাদের মাঝে সবচেয়ে গরীব। রাসূল (সা.) জবাব শুনে বলেন,না. গরীব সেই যে নামায-রোযার মত ইবাদত-বন্দেগী করার সাথে সাথে মানুষের প্রতি জুলুম করে. তার হক নষ্ট করে, নানাভাবে তার ক্ষতি করে। কিয়ামতের দিন জুলুমের প্রতিকার হিসেবে জালেমের নেক আমলের ছাওয়াব মজলুমকে দিয়ে দেয়া হবে এবং যখন পূর্ণমাত্রায় প্রতিকার সম্ভব হবে না তখন মজলুমের গুনাহের বোঝা জালেমকে দিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। ফলে আমাদের সবাইকে জুলুম থেকে সাবধান থাকতে হবে।

কুরআন নাযিলের মাস রমযানুল মুবারক-কুরআনের কারণেই এত ফজিলত ও মর্যাদাপূর্ণ। তাই এই মাসে তিনি সবাইকে বেশি বেশি করে কুরআন পড়ার জন্য বলেন। রোযা ফরজ সম্পর্কীয় আয়াতের মাঝখানে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়ার জন্য বলেছেন। আল্লাহকে যে কোন সময়ই ডাকা যায় এবং তিনি তাঁর বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন। তারপরে রমযান মাসে তিনি তাঁর বান্দাহদের প্রতি আরো বেশি দয়া ও অনুগ্রহপরায়ণ হয়ে থাকেন। তাই তিনি রমযান মাসে বিশেষ করে ইফতারপূর্ব সময় ও শেষ রাতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাওয়ার জন্য বলেন। তারাবীহ নামাযসহ যে সব নামাযে কিরআত জোরে পড়া হয় সে সব নামাযে চুপ থেকে ইমাম সাহেবের কিরআত শ্রবণের জন্য তিনি মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান। তিনি তাঁর খুতবায় আল্লাহতায়ালার কাছে মুসলিম উম্মাহর সার্বিক কল্যাণসহ উপস্থিত সকলের নামায, সিয়াম ও নেক আমলসমূহ কবুলিয়াতের জন্য দোয়া করেন। ০৩/০৬/২০১৭ (সংক্ষেপিত)। শ্রুতিলিখনে প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী, উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

Comments