Skip to main content

যাকাতের নেছাব ও অলঙ্কারের যাকাত



বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
যাকাতের নেছাবের ব্যাপারে নানা জন নানা কথা বলেন। আমাকেও কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন। ড. ইউসুফ আল কারযাভীর ইসলামের যাকাত বিধান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত ও মাওলানা আব্দুর রহীম অনূদিত ২ খন্ডে ৫০৩+৭০৯=১২১২ পৃষ্ঠার এক অনবদ্য কীর্তি) বইটি পড়ার পর আমার মনে হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণই মানদন্ড হওয়া উচিৎ। নিম্নে আমার যুক্তিসমূহ উল্লেখ করছি।
১. বর্তমান সময়ে যাকাতের নেছাব স্বর্ণের ভিত্তিতেই হওয়া উচিৎ। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ ও সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য মূল্যমানে ব্যাপক পার্থক্য। এ ছাড়া বর্তমানে আমাদের দেশসহ অধিকাংশ দেশে স্বর্ণকেই মূল্যমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদের মালিককে সাহেবে নেছাব বলে। শরীয়তে যেখানে অথবা রয়েছে সেখানে আমার দৃষ্টিতে যে কোন একটি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
২. যাকাত ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করে দরিদ্রদের মধ্যে বন্টনের জন্য বলা হয়েছে। সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যমান একজন ধনীর মানদন্ড হতে পারে না। যেখানে বলা হয়েছে যে, উটের ৫টির কমে যাকাত নেই, গরু-মহিষে ৩০টি এবং ছাগল-ভেড়া ৪০টির কমে যাকাত নেই। এ সব বিবেচনায় আনলে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণই উপযুক্ত মানদন্ড হতে পারে। উট, গরু, ছাগল একত্র করে নেছাব নির্ধারিত হয় না, বরং পৃথক পৃথকভাবে সংখ্যা থাকতে হয়।
৩. মহিলাদের ব্যবহৃত গহনার ব্যাপারে বেশ ভিন্নমত রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে যাকাত না ধরার ক্ষেত্রে মতটিই প্রবল ও যুক্তিযুক্ত। যাকাতের ক্ষেত্রে বর্ধনশীলতা একটি শর্ত। অর্থাৎ যে মালে প্রবৃদ্ধি আছে তা নেছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। মহিলাদের অলঙ্কার যদি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কেবল হয়ে থাকে এবং তা নির্দিষ্ট পরিমাণের মধ্যে হয় তাহলে তার যাকাত হবে না। কারণ তাতে কোন প্রবৃদ্ধি নেই এবং যাকাত প্রদানের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সম্পদ হিসেবে অলঙ্কাররূপে স্বর্ণ-রৌপ্য মজুদ রাখে তখন তা নগদ টাকার মতই বিবেচিত হবে এবং তার যাকাত দিতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ একজন মহিলার কাছে ২/৩ ভরি স্বর্ণ বা ৩/৪ ভরি রৌপ্য আছে (বিয়ের সময় পিতা ও শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে উপঢৌকন হিসেবে প্রাপ্ত) এবং তার বাড়িতে নিজের পরিচালনায় লবন-তেলের একটি ছোট্ট দোকান বা কিছু নগদ টাকা আছে এবং সব একত্র করে রৌপ্যের হিসেবে যাকাতের নেছাব ধার্য করার রেওয়াজ আমাদের সমাজে চালু রয়েছে। আসলে ঐ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী একজন দরিদ্র মহিলা। সে তার আয় দিয়ে সম্মানজনক জীবন পরিচালনা করতে পারে না। রাসূল (সা)-এর স্পষ্ট উক্তি-ধনাঢ্যতার প্রকাশ থেকে যাকাত হবে-এই শর্ত এখানে প্রতিপালিত হয় না। তার ব্যবসায় পণ্য ও নগদ টাকা যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণমানের সমপরিমাণ হয় তাহলে তার মধ্যে ধনাঢ্যতার প্রকাশ পেত। এমতাবস্থায় আমার ধারণা তার যাকাত নেই। আমার দৃষ্টিতে ঐ মহিলার স্বর্ণ-রৌপ্য একান্তই ব্যবহার্য এবং তার গহনারও কোন যাকাত নেই। যাকাতের ক্ষেত্রে মূলধন দ্রব্য এবং ব্যবহার্য দ্রব্যের যাকাত হয় না। একজন মহিলাকে স্বর্ণ এবং রৌপ্য ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সম্পদ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে ও যাকাত দেয় না মূলত হুশিয়ারী তাদের উদ্দেশ্যেই।
আমি এখানে কোন ফতোয়া দিতে চাইনি। বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফকীহ ও ইসলামী চিন্তানায়ক ড. ইউসুফ আল কারযাভীর দৃষ্টিভঙ্গি মাত্র তুলে ধরেছি। উনি সবার বক্তব্য তুলে ধরেছেন এবং নিজের মতের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। যাদের পক্ষে সম্ভব বইটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি বইটি এখন নিজে পড়ছি এবং আগামীতে যাকাত সম্পর্কে আরো লেখার ইচ্ছা রয়েছে। মতপার্থক্য সম্পর্কীয় বিষয়সমূহে একটু উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আল্লাহর বাণী-যে স্বীয় মনের সংকীর্ণতা থেকে নিজেকে রক্ষা করলো সেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করলো। ১৭/০৬/২০১৭

Comments