আজ ১লা রমযানে এশা ও তারাবীহ জামাতে
জুমুয়ার দিনের মত মসজিদ পূর্ণ হয়ে রাস্তায় মানুষ নামায আদায় করলো। মনে হয় শয়তানকে
শৃঙ্খলিত করারই এটা ফলশ্রুতি। রমযানের আগমনে সমগ্র মুসলিম জাহানে এক পবিত্র
পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তবে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পেলেও কখনই শূন্য হয় না। না হওয়ার
কারণ হলো আসল শয়তানকে বন্দী করা হলেও শয়তানের অনেক শাগরেদ-মুরীদ রয়েছে যাদেরকে
শৃঙ্খলিত করার দায়িত্ব ছিল আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের। কিন্তু সমাজে
ঈমানদারদের সেই কর্তৃত্ব নেই, বরং কর্তৃত্ব রয়েছে শয়তানের প্রতিনিধিদের হাতে। তাই
রমযানের পূর্ণ ফললাভ সম্ভব হয়ে উঠে না। সমাজে যারা অশ্লীলতা-বেয়াপনা,ঘুষ-দুর্নীতি
এবং জুলুম-নির্যাতন চালায় এরা সবাই শয়তানের মুরীদ। রমযানের এত বড় সুযোগও তারা কাজে
লাগাতে পারে না। সত্যিই তারা হতভাগা, বদনসিব,তাদের জন্যই রয়েছে জাহান্নামের আযাব।
এই রমযান মাসেও স্রেফ ঈমান ও ইসলামের কারণে আল্লাহর অনেক বান্দা নির্যাতিত হচ্ছে।
যারা নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে ওরা যদি বুঝতো আল্লাহর কতখানি ক্রোধের ওরা ভাগিদার
হচ্ছে, তাহলে হয়তো তাদের কপালে হেদায়াত জুটতো। কিন্তু তারা দূর্ভাগা, তাদের নসিব
মন্দ। আল্লাহর বাণী-‘যারা
ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের
আযাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি-‘হে
আল্লাহ! এই জালেমদেরকে হয় হেদায়াত দাও, নয় তাদেরকে ধ্বংস করে দাও এবং জুলুমমুক্ত
পৃথিবীতে তোমার বান্দাদেরকে একটু স্বস্তির জীবন যাপন করার সুযোগ দাও’।
আমিন। ২৭/০৫/২০১৭
ওরা আমাদের ভাই
আজ ১লা রমযানে মসজিদের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। যেখানে
বড়জোর দুই কাতার মুছল্লি হয়, সেখানে আজ মসজিদ পূর্ণ হয়ে একেবারে রাস্তায় মুছল্লি, মনে
হয় যেন জুমুয়া আদায় করছে। এ দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই আল্লাহপাক খুশি হয়ে তাঁর বান্দাদের
ক্ষমা করে দেবেন। দেশটা আবার পেছনের দিকে চলে
যায় কি-না ভেবে শয়তানের চেলারা অস্থির হয়ে পড়বে।পবিত্র রমযানের মাধ্যমে আল্লাহপাক একটি
অনুকূল পরিবেশ তৈরী করে দিয়েছেন যার মাধ্যমে তাঁর বান্দারা তাঁর পথে ফিরে এসেছে। ফজর
ও এশার জামাতে হাজির হওয়াকে রাসূল (সা.) অনেক বড় করে দেখেছেন। তিনি বলেছেন-‘আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য
হলো ফজর ও এশার সালাতে হাজির হওয়া’।মসজিদভর্তি সকল মুছল্লি পরস্পরের ভাই। কোন হিংসা-বিদ্বেষ
নেই, নেই কোন সংকীর্ণতা-সবার একই পরিচয় ‘আমরা মুসলমান’। এর বাইরে আমাদের কোন পরিচয় নেই এবং এই পরিচয় নিয়েই আমরা
আমাদের মহান প্রভূর কাছে হাজির হতে চাই। আশা করা যায় আমাদের মহান রব ও মালিক আমাদেরকে
মাফ করে দেবেন। হ্যাঁ, এমনটি আশা করা তখনই সম্ভব যখন আমরা আমাদের জীবনে রমযানের যে
অনুশীলন গ্রহণ করছি তা ধরে রেখে আমৃত্যু তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবো। আল্লাহপাক
আমাদেরকে তাওফিক দান করুন যাতে মুসলমান হয়ে তোমার কাছে ফিরে যেতে পারি। আমিন। ২৮/০৫/২০১৭
মাহে রমযানের আহবান
গতকাল চাঁদ দেখার সাথে সাথে রমযান মাস শুরু হয়ে গেল।
মসজিদের সামনে সবার সাথে চাঁদ দেখলাম। মানুষের মধ্যে কত আবেগ, কত আনন্দ, মসজিদসমূহ
মুছল্লিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। সর্বত্র একটি পবিত্র পরিবেশ।গুনাহ মাফের এক মহা সুযোগ। রাসুল
(সা.) কখনো ধন-সম্পদ ও হায়াত বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করতেন না। কিন্তু
রজব মাস এলে তিনি রমযান পর্যন্ত তাঁর হায়াত বৃদ্ধি করে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা
করতেন। আমরা ভাগ্যবান যে রমযান মাস পেয়ে গেছি।তাই আসুন, আমাদের এই জীবনে রমযানের রোযাকে
অর্থবহ করে তুলি।
১. পরিবারের সবাইকে নিয়ে পূর্ণমাস রোযা আদায় করি।
বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত জনদেরকেও উদ্বুদ্ধ করি।
২. সমাজে যারা কর্তৃত্বশীল নিজ নিজ এলাকায় রমযানের
পবিত্রতা রক্ষায় এগিয়ে আসি। অর্থাৎ যাঁরা চেয়ারম্যান, মেম্বার বা প্রতিষ্ঠানপ্রধান
(বাজার কমিটি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাই হোক)তাঁরা তাঁদের প্রভাবাধীন এলাকায় প্রকাশ্যে
পানাহার ও অশ্লীলতা-বেয়াহাপনা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করি।
৩. রোযার বড় উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন অর্থাৎ গুনাহ
থেকে দূরে থাকা। তাই অবৈধ উপার্জনের সকল পথ পরিহার করে হালাল উপার্জনে আমরা সন্তুষ্ট
থাকি। হালাল উপার্জনে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ।
৪. মানুষের ওপরে সবধরনের জুলুম থেকে নিজেদেরকে দূরে
রাখি। কাউকে গালি দেয়া, চড়-থাপ্পড় মারা বা মানুষ কষ্ট পায় এমন সকল আচরণ থেকে দূরে থাকি।ব্যবসায়
সততা রক্ষা করি। ভেজাল প্রদান, ওজনে কম-বেশি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি
থেকে দূরে থাকি। এ সবও জুলুমের পর্যায়ে পড়ে।
৫. গীবৎ বা অপরের সমালোচনা কবিরা গুনাহ এবং এ ভয়াবহ
গুনাহ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখি।
৬. আল্লাহর নাফরমানির পর্যায়ে পড়ে এমন সকল কর্মকান্ড
থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি।
৭. রমযান মাস নেকি কুড়াবার মাস। তাই অহেতুক সময় নষ্ট
না করে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতে আদায়ের সাথে সাথে প্রতি ওয়াক্তের প্রচলিত সুন্নাত
নামাযের সাথে তারাবীহ ও তাহাজ্জুদের নামায আদায়ের চেষ্টা করি।
৮. কুরআন নাযিলের কারণেই এ মাস এত মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ।
তাই প্রতিদিন সামান্য হলেও অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস পাঠ ও মাসলা-মাসায়েল ও দ্বীনসম্পর্কীয়
কিছু লেখাপড়া করি।
রোযা রেখেও যদি মিথ্যা বা অন্যায় অপকর্ম থেকে নিজেকে
মুক্ত করতে না পারি তাহলে সে রোযায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। হাদিসের ভাষায়-এমন রোযাদারের
জন্য ক্ষুৎ-পিপাসায় কষ্ট পাওয়া ছাড়া কিছুই জুটে না।হে আল্লাহ! এ রোযা যাতে তোমার কাছে
গ্রহণীয় হয় এবং আমরা পাপমুক্ত হতে পারি এমন উপলব্ধি নিয়ে রোযা রাখার তাওফিক আমাদেরকে
দান করো। আমিন। ১লা রমযান ১৪৩৮, ২৮/০৫/২০১৭
Comments
Post a Comment