বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
আজ সূর্যাস্তের পর ২১শে রমযান শুরুর মধ্য দিয়ে আমরা রমযানের
শেষ দশক পেলাম। এই দশকেই রয়েছে মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর যা আল্লাহর ভাষায়
সহস্র মাস অপেক্ষাও উত্তম। এই শেষ দশক রাসূল (সা)-এর কাছে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, প্রধান
বিচারপতি, প্রধান সেনানায়ক, তিনিই সব। সব ব্যস্ততাকে উপেক্ষা করে তিনি নিবিষ্ট মনে
পূর্ণ দশক মসজিদে ইতিকাফে কাটাতেন। অথচ তিনি ত্রুটিমুক্ত, হাউজে কাউছারের পানি পান
করানোর একক কর্তৃত্ব তাঁর, তিনিই প্রথম সুপারিশকারী-সেই তিনিই আল্লাহর
ইবাদত-বন্দেগীর কঠোর শ্রমে নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন। লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে তিনি
বলেছেন-‘যে ঈমান ও এহতেছাবের সাথে এই রাতে দন্ডায়মান হবে আল্লাহ তার
অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দিবেন’।
বান্দার অপরাধ ক্ষমা করে নেয়ার এ এক অপূর্ব সূযোগ। হ্যাঁ, বান্দা ফিরে আসুক তা
আল্লাহও চান। রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে শবে কদরের রাত তালাশ করার জন্য
রাসূল (সা) বলেছেন। যারা ইতেকাফে বসেছেন তারা মহা সৌভাগ্যবান। আশা করা যায় তাদের
নছিবে লাইলাতুল ক্বদর ধরা দেবে। এই বাইরে যারা আছেন তারাও একটু চেষ্টা করে দেখতে
পারেন। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে দেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। তিনি উদার ও প্রশস্ততার
অধিকারী, কোন ধরনের সংকীর্ণতা তাঁর মধ্যে নেই। তাই আসুন, প্রতি রাতের শেষ অংশে
আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেই ও নামাযে খুশু-খুজু আনার জন্য একটু ধীরস্থিরভাবে নামায
আদায় করি এবং নামাযে আল্লাহর কাছে কী বলি একটু জানার চেষ্টা করি। আমরা পাঁচ ওয়াক্ত
নামায জামাতের সাথে আদায় করি। হাদিসের ভাষা- যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের জামাতে শরীক
হলো সেতো সারা রাত ইবাদতের মাঝেই কাটালো। আর নামাযের মধ্যেই আল্লাহর কাছে চাই।
আল্লাহ বলেছেন-‘তোমরা ধৈর্য
ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও’। সালাম ফেরালে নামায শেষ হয়ে যায়। তাই নামাযের মধ্যে বিশেষ
করে সেজদায় গিয়ে, দুই সেজদার মাঝখানে ও শেষ বৈঠকে দোয়া মাছুরা পড়ার পর নিজের সব
প্রয়োজন মহান মালিকের কাছে পেশ করি। আর ফরজ নামায শেষে রাসূল (সা)-এর শেখানো মতে
আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ি ৩বার, আয়াতুল কুরছি, সূরা ফালাক ও সূরা নাছ পড়ি এবং তাছবিহ
পড়ি ছোবহানাল্লাহ ৩৩বার, আলহামদু লিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৩বার, লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলক ও লাহুল হামদ পড়ি ১বার। রাসূল (সা)
ও ছাহাবায়ে কেরামের আমল এমনই ছিল। মু’মিনদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-‘ওরা রাতের আঁধারে মাগফেরাতের জন্য কাঁদে’। তাই শেষ রাতে একেবারে নিরিবিলি সময়ে মহান আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে কাতরভাবে বলি-হে পরোয়ারদেগার! আমার দোষ-ত্রুটি,
দুর্বলতা ও অক্ষমতা ক্ষমা করে দাও। আমার নামায, রোযা ও সকল নেক আমল কবুল কর। হে
রব, তুমি আমার হালাল রুজিতে বরকত দান কর ও তাতে আমাকে সন্তুষ্ট রাখ। এমন বিপদ দিও
না যা আমি সহ্য করতে না পারি। পরোয়ারদেগার, একবার যখন দয়া করে হেদায়াত দান করেছ,
তখন আর নতুন করে গোমরাহ কর না, আমার প্রিয়জন যারা তোমার কাছে চলে গেছেন তাদেরকে
তুমি ক্ষমা কর (রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছগিরা)। হে আল্লাহ, আমার স্ত্রী
ও সন্তান-সন্ততিসহ পরিবারের সবাইকে তোমার পথে চলাটা সহজ করে দাও এবং স্ত্রী ও
সন্তানদের দ্বারা চোখকে শীতল করে দাও। হে রব, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঈমানের
ওপর অবিচল রাখ এবং যারা তোমার ত্বরে জীবন দিয়েছে তুমি তাদের শাহাদত কবুল করে নাও
এবং আমাদের প্রিয় দেশটিকে তোমার দ্বীনের জন্য কবুল কর। সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে
হিয়ে পরস্পর মিলেমিশে বসবাস করার মত তাওফিক তুমি আমাদেরকে দান কর। আমিন।
এভাবে আপনার মনের সকল চাওয়া মহান মনিবের কাছে একান্ত গোপনে পেশ
করুন। দোয়া অবশ্যই কবুল হবে। দোয়া করার দায়িত্ব আমার-আপনার এবং কবুল করার দায়িত্ব
আল্লাহর। এই দোয়ার মাধ্যমে নিজের অসহায়ত্ব ও বিনয় এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ
পায়। কারণ তিনি আমাদের মনিব এবং আমরা তাঁর গোলাম। আল্লাহর নিজের উক্তি-‘যে আমাকে ডাকে আমি তার জবাব দেই’। তিনি কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। তাই পরিপূর্ণ আস্থার
সাথে রমযানের শেষ দশকে আল্লাহর কাছে চাইতে থাকুন। হে আল্লাহ, এ মোবারকময় দশকে রাত
জাগার ও তোমার কাছে বেশি বেশি চাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৬/০৬/২০১৭
Comments
Post a Comment