Skip to main content

রমযানে শিক্ষা-৬



রোযা মানুষকে সংযমী করে

মানুষের জীবনের স্বাভাবিক যে চাহিদা ইসলাম তা কখনই অস্বীকার করে না। ক্ষুধা লাগলে খাবে, ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নেবে বা বয়স হলে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করবে, এ সবই স্বাভাবিক। ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। মানুষের স্বভাব-প্রকৃতি যা দাবী করে ইসলাম মূলত তাই। সন্যাসজীবন ইসলাম স্বীকার করে না।পরিশুদ্ধি বা নফসের দমনের জন্য নিজের ওপর অহেতুক কষ্ট-কঠোরতা আরোপ ইসলামের পছন্দ নয়। মানুষের জীবনের স্বাভাবিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে ইসলাম হালাম-হারামের একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখানেও কোন বাড়াবাড়ি নেই। হারাম কয়েকটি সুনির্দিষ্ট, গোটা দুনিয়া তার জন্য হালাল। প্রবৃত্তিকে দমন বা ধ্বংস নয়, বরং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে সুপথে পরিচালনা করাই ইসলামের উদ্দেশ্য। রোযা মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খল ও নিয়মানুবর্তি করে। সেহরী ও ইফতারী খাওয়া এবং রাতে নামায আদায়ের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে একটা নির্দিষ্ট ছকে আনতে চায়। মানুষ পানাহার করতে চায় এবং এই পানাহারের ক্ষেত্রে বলা হলো সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার বন্ধ। যে সব জিনিস তার জন্য হালাল ছিল তা সাময়িকভাবে তার জন্য হারাম হয়ে গেল। এই হারাম হওয়ার পেছনে একটিই যুক্তি যে, মহান আল্লাহ তা হারাম করেছেন। ইফতারের পর ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম চায়,কিন্তু কিছুক্ষণ পর এশার সাথে শুরু হয় দীর্ঘ নামায এবং শেষ রাতে সেহরী খাওয়া। এ সবের মধ্য দিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চমৎকার ট্রেনিং রোযার মাধ্যমে লাভ করা যায়।দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আল্লাহর আইন পালনে অভ্যস্ত করাটাই হলো রোযার উদ্দেশ্য। এভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর হুকুম পালন করাই হলো বান্দাহ হিসেবে মানুষের কর্তব্য।রোযা শুধু খানাপিনা ও বিশ্রামের মধ্যে সংযম নয়। কথাবার্তা, আচার-আচরণ সকল ক্ষেত্রে সংযম প্রদর্শনের জন্য বলা হয়েছে। রোযা রেখে ঝগড়া-ঝাটি, পরনিন্দা ও মানুষকে কটুকথা বলা সবই নিষেধ। কেউ ঝগড়া করতে চাইলে হাদিসের ভাষায় বলা হয়েছে যে, সে বলবে-আমি রোযাদার।অর্থাৎ আমার পক্ষে এমন আচরণ সম্ভব নয়।গীবতের তো প্রশ্নই ওঠে না। দুজন মহিলা রোযা রাখার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়ার পর তাদের পক্ষে রাসূল (সা.)-কে বলা হলে তিনি বলেন যে, তারা তো দুপুরেই রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে। এ কথা শুনে সবাই বিস্মিত হয়ে পড়েন, কারণ তারা রোযা রাখার কারণেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।রাসূল (সা.) তাদেরকে ডাকান এবং মুখে আঙ্গুল দিয়ে বমি করার কথা বললে তারা উভয়ে তাজা গোশত বমি করে।রাসূল (সা.) বলেন যে, তারা দুপুরে যখন গীবৎ করছিলো তখনই তাদের রোযা ভেঙ্গে গেছে (আল্লাহ তাঁকে জানিয়ে দিয়েছিলেন)।ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কথাবার্তা সকল ক্ষেত্রেই রোযা সংযম দাবী করে। আর যদি সে সংযমী না হয় তাহলে এমন রোযায় আল্লাহর কোনই প্রয়োজন নেই। রমযানের রোযার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে খাঁটি সোনায় পরিণত করতে চান, অর্থাৎ যারা সকল কাজে-কর্মে কেবল আল্লাহকেই ভয় করে চলবে। আল্লাহপাক রোযার মাধ্যমে আমাদেরকে সংযমী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ০৫/০৬/২০১৭

Comments