Skip to main content

দরসুল কুরআন (সুরা তওবা ৩৮-৪২)

হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের কী হলো, তোমাদের যখন আল্লাহর পথে বের হতে বলা হয়, তোমরা জমিনকে আঁকড়ে ধরে থাকো? তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবন পছন্দ করে নিয়েছ? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের ভোগের সামগ্রী একেবারেই তুচ্ছ। ৩৮ 

তোমরা যদি বের না হও, আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন। আর তোমাদের বদলে অপর কোনো লোকদের নিয়ে আসবেন এবং তোমরা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহ শক্তিমান। ৩৯ 

তোমরা যদি তাকে (নবিকে) সাহায্য না করো, তবে জেনে রাখো, ইতোপূর্বেও আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন, যখন কাফিররা তাকে বের করে দিয়েছিল এবং সে ছিল দুইজনের দ্বিতীয় জন। যখন তারা দু’জনেই গুহার মধ্যে ছিল এবং সে তার সাথিকে বলেছিল, ‘চিন্তা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।’ ফলে আল্লাহ তার ওপর নিজের পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাজিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে সাহায্য করেন যা তোমরা দেখনি। তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নিচু করে দেন। আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই। আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাবন। ৪০ 

তোমরা বেরিয়ে পড়ো হালকা অবস্থায় কিংবা ভারী অবস্থায় এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করো নিজের ধনপ্রাণ দিয়ে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে। ৪১

যদি সম্পদ লাভের আশু সম্ভাবনা থাকতো আর সফর যদি সহজ হতো, তাহলে অবশ্যই তারা তোমার অনুসরণ করতো। কিন্তু তাদের কাছে দীর্ঘ পথের যাত্রা কষ্টকর মনে হলো। তারা অচিরেই আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, ‘সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই আমরা আপনাদের সাথে বের হতাম।’ তারা নিজেদেরই ধ্বংস করছে। আল্লাহ জানেন তারা মিথ্যাবাদী। ৪২

নামকরণ : এই সুরার দু’টি নাম। এক. তওবা, দুই. বারায়াত। তওবা নামকরণ এই কারণে যে কতিপয় ঈমানদারের তবুক যুদ্ধে শরীক না হওয়ার জন্য যে গুনাহ হয়েছিল এই সুরায় তাদের তওবা কবুল করে ক্ষমা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। আর বারায়াত (সম্পর্কচ্ছেদ) এই অর্থে যে সুরার শুরুতে মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে।

বিসমিল্লাহ না লেখা : এই সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লেখা হয়নি। না লেখার কারণ প্রসঙ্গে নানাজনে নানা কথা বলেছেন। তবে ইমাম রাজী রহ.-এর বক্তব্যই সঠিক। তিনি বলেছেন, নবি মুহাম্মদ সা. এই সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লেখেননি, তাই সাহাবায়ে কেরামও লেখেননি এবং পরবর্তীকালে সবাই এই রীতি অবলম্বন করেছেন। বর্তমান কুরআন যে হুবুহু মুহাম্মদ সা. থেকে এবং কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই আমাদের হাতে এসেছে এটি একটি বাড়তি প্রমাণ।

নাজিলের সময়কাল : এই সুরা তিনটি ভাষণের সমষ্টি। প্রথম থেকে পঞ্চম রুকু পর্যন্ত ৯ম হিজরির জিলকদ মাস বা কাছাকাছি সময় নাজিল হয়। নবি সা. সে বছর হজরত আবু বকর রা.-কে আমিরুল হজ করে মক্কায় পাঠানোর পরে এই ভাষণটি নাজিল হয়। নাজিলের সংগে সংগে নবি সা. আলী রা.-কে এই ভাষণটিসহ পাঠান যাতে হজে আগত লোকদের সম্মুখে পেশ করতে পারেন। তখনো আরবের মুশরিকরা হজ করতে পারতো এবং তারা উলঙ্গ হয়ে হজ করতো। হজের মহাসমাবেশে এই ভাষণটি পেশের মধ্য দিয়ে মুশরিকদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে পরবর্তী বছর থেকে তাদের হজ নিষিদ্ধ করা হয়।

দ্বিতীয় ভাষণটি (৬ষ্ঠ রুকু থেকে ৯ম রুকুর শেষ পর্যন্ত) ৯ম হিজরির রজব মাসে বা তার কিছু আগে নাজিল হয়। সে সময়ে নবি সা. তবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করছিলেন। ইসলাম বিজয়ী শক্তি হিসেবে মাথা উঁচু করে টিকে থাকবে না এখানেই শেষ হয়ে যাবে সেই প্রশ্নে জান-মাল দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য ঈমানদারদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং যাদের মধ্যে ঈমানের দুর্বলতা বা আলস্য পেয়ে বসেছিল তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে। 

তৃতীয় ভাষণটি ১০ম রুকু থেকে শেষ পর্যন্ত যা তবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর নাজিল হয়। এখানে মুনাফিকদের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। আল্লাহর পথে জিহাদের ব্যাপারে যারা দুর্বলতা প্রদর্শন করবে তাদের ঈমান সংশয়পূর্ণ। জিহাদ ঈমান ও কুফরের মাপকাঠি। নিষ্ঠাবান কিছু মুসলমান দুর্বলতার কারণে যুদ্ধে শরীক না হওয়ার কারণে তাদের অপরাধ ক্ষমা করার কথা এখানে বলা হয়েছে।

ঐতিহাসিক পটভূমি : তবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম রুকু নাজিল হয়। হুদায়বিয়ার সন্ধির (অনাক্রম চুক্তি) পর এক অনুকূল পরিবেশে ইসলাম দ্রুত প্রসার লাভ করে। মাত্র দুই বছরের মধ্যে (৮ম হিজরি) এর প্রভাব বলয় এতটা বেড়ে যায় যাতে আরব জাহিলিয়াত অসহায় হয়ে পড়ে। কুরাইশদের অতি উৎসাহী ব্যক্তিবর্গ সন্ধি ভেঙ্গে দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে চাচ্ছিল। রসুলুল্লাহ সা. তাদেরকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ৮ম হিজরির রমজান মাসে আকস্মিকভাবে মক্কা আক্রমণ করেন। এরপর হোনায়েনের ময়দানে তারা শেষ মরণকামড় দিতে চেষ্টা করে। সেখানে ব্যর্থ হওয়ার পর ফয়সালা হয়ে যায় যে আরবকে দারুল ইসলাম হিসেবেই টিকে থাকতে হবে। এক বছরের মধ্যে সমগ্র আরবের বেশির ভাগ লোক ইসলাম গ্রহণ করে এবং কতিপয় বিচ্ছিন্ন লোক পুরনো জাহেলিয়াত আঁকড়ে থাকলেও তাদের শক্তি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।

মক্কা বিজয়ের পরে ইসলামের দাওয়াত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রসুলুল্লাহ সা. উত্তরে রোম সাম্রাজ্য ও তাদের প্রভাবাধীন বিভিন্ন অংশে প্রতিনিধি দল পাঠান। এর মধ্যে যাতুত তালাহ নামক স্থানে কাফেররা ১৫ জন মুসলমানকে হত্যা করে। এর মধ্যে প্রতিনিধি দলের নেতা হজরত কাব ইবনে উমাইর গিফারি মাত্র প্রাণে বেঁচে ফিরে আসেন। রসুল সা. বুসরার গভর্নর শুরাহবিল ইবনে আমরের নামেও দাওয়াতপত্র পাঠান। কিন্তু সে নবি সা.-এর দূত হারেস ইবনে উমাইরকে হত্যা করে। এই সরদারও ছিল খৃষ্টান এবং রোম সম্রাট কাইসারের অনুগত। ৮ম হিজরির জমাদিউল উলা মাসে রসুল সা. তিন হাজার মুজাহিদের এক সেনাবাহিনী পাঠান। ক্ষুদ্র মুজাহিদ বাহিনীর মোকাবেলার জন্য শুরাহবিল এক লক্ষ সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়। অপরদিকে কাইসার তার আপন ভাই থিয়েডরের নেতৃত্বে আরো এক লাখের এক সেনাবাহিনী রওয়ানা করে দেন। এতসব খবর শোনার পরও ক্ষুদ্র মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হতে থাকে এবং মুতা নামক স্থানে শুরাহবিলের এক লাখের বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সমগ্র আরব ও মধ্যপ্রাচ্য বিষ্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে যায় যে, এক ও তেত্রিশের এ মোকাবেলায় কাফেররা মুসলমানদের ওপর বিজয় লাভ করতে পারলো না। এই যুদ্ধে মুসলমানদের দুইজন সেনাপতি পরপর শাহাদত বরণের পরে খালিদ বিন ওয়ালিদ সেনাপতি হন।

পরের বছর মুতার যুদ্ধের প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য কাইসার সিরিয়া সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে। রসুলুল্লাহ সা. খুটিনাটি সকল বিষয়ের খবর রাখতেন। ইরানীদের পরাজিত করার পর দূর ও কাছের সকল এলাকায় কাইসারের দোর্দণ্ড প্রতাপ ও দাপট ছড়িয়ে পড়িয়েছিল। রসুলুল্লাহ সা. ইতস্তত না করে কাইসারের মোকাবেলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে দেন। এখানে দুর্বলতা প্রদর্শন করলে আরবের ক্ষয়িষ্ণু পুরাতন জাহিলিয়াত ও মদিনার মুনাফিকরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতো। ঐ সময়টায় ছিল প্রচণ্ড গরম, রাস্তার দূরত্বও অনেক, ফসল কাটার মওসুম এবং চলছিল দুর্ভিক্ষ। এতো প্রতিকূলতার পরও এই যুদ্ধে সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য রসুলুল্লাহ সা. নির্দেশ প্রদান করেন। যুদ্ধের বিষয় সাধারণত তিনি গোপন রাখতেন কিন্তু এবারে তিনি বলে দেন যে, যুদ্ধ হবে রোম সম্রাটের সাথে এবং তাদের এলাকা সিরিয়া সীমান্তে। নাজুকতা উপলব্ধি করে নিষ্ঠাবান সাহাবিরা তাদের সর্বস্ব দান করেন। হজরত উছমান রা. ও আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রা. বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করেন। উমর রা. তার সকল সম্পদের অর্ধেক এবং আবু বকর রা. তাঁর সম্পদের পুরোটাই রসুল সা.-এর কাছে পেশ করেন।

নবম হিজরির রজব মাসে রসুলুল্লাহ সা. ৩০ হাজারের মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে সিরিয়ার পথে রওয়ানা হন। তাঁর সাথে ছিল দশ হাজার সওয়ার। রসুলুল্লাহ সা. তবুকে পৌছার পর দেখেন কাইসার ও তার মিত্ররা সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ না হয়ে সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে। এর আগের বছরে সে দেখেছে তিন হাজারের মোকাবেলায় তার এক লক্ষ সৈন্য টিকতে পারেনি। এবার ত্রিশ হাজার এবং সেনানায়ক হলেন স্বয়ং মুহাম্মদ সা.। ফলে কাইসার ভয়েই পালিয়ে যায়। কাইসারের এভাবে পিছু হটে যাওয়াকে রসুলুল্লাহ সা. নৈতিক বিজয় মনে করে রোম সাম্রাজ্য ও দারুল ইসলামের মধ্যবর্তী এলাকায় যেসব ছোট রাজ্য যা রোমানদের প্রভাবাধীনে ছিল সেগুলোকে সামরিক চাপ প্রয়োগ করে ইসলামী সাম্রাজ্যের অনুগত করদ রাজ্যে পরিণত করেন। ছোট অনেকগুলো রাজ্যের খৃষ্টান শাসক জিযিয়া দিয়ে মদিনার বশ্যতা স্বীকার করে। এর ফলে ইসলামী সাম্রাজ্যের সীমানা রোম সাম্রাজ্যের সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যেসব আরব গোত্রকে আরবদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতো তা এখন রোমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগী হয়ে যায়। আরব ভূমিতে বসে যারা রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় কল্পনা করছিল বিজয়ীর বেশে মুসলমানদের প্রত্যাবর্তনের ফলে তাদের কোমর ভেঙ্গে যায় এবং অধিকাংশই ইসলামের কোলে আশ্রয় নেয়।

ব্যাখ্যা : 

(৩৮) আল্লাহপাক উদ্বুদ্ধ করার সাথে সাথে তিরস্কারও করেছেন। রসুলুল্লাহ সা.-এর পক্ষ থেকে অভিযানে বের হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে; এমতাবস্থায় জমিন আঁকড়ে বসে থাকা, এটিই প্রমাণ করে যে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ার জীবনের সাজ-সরঞ্জাম ও ভোগ্যদ্রব্য আখেরাতের তুলনায় খুবই নগন্য। দুনিয়ার জীবন খুবই স্বল্পাস্থায়ী ও নানাবিধ রোগব্যাধি ও ঝামেলা-ঝক্কিতে পূর্ণ, পক্ষান্তরে আখেরাতের জীবন স্থায়ী এবং সেখানকার সরঞ্জাম ও ভোগ্যদ্রব্য অতি লোভনীয় যা কখনই কল্পনা করা যায় না।

(৩৯) যদি রসুলের সা. নির্দেশ মেনে বের না হওয়া যায় তার পরিণতি বলে দেওয়া হয়েছে যে, সব আমল বরবাদ করে দিয়ে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রদান করা হবে। মুসলমানদের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে তার নাগরিকদের যুদ্ধের ডাক দেওয়া হলে তা ফরজে আইন হয়ে যায়। সেসময়ে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ থাকে না। এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসলমানদের সশস্ত্র যুদ্ধের নির্দেশ মদিনায় একটি ইসলামী সরকার গঠনের পরই দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দল যুদ্ধের ডাক দিতে পারে না। দেশের প্রচলিত আইনে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারে। সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করার অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত এবং আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার অধিকারও রয়েছে।

(৪০) দীন প্রতিষ্ঠার কাজটা একান্তভাবে আল্লাহর এবং যারা এই কাজ করে তারা মূলত আল্লাহর সাহায্যকারী। আল্লাহর পক্ষে নবি-রসুলগণ এই কাজটি করেছেন। মক্কায় দীর্ঘ তেরোটি বছর রসুলুল্লাহ সা. নানাভাবে নিপীড়ন -নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন এবং সেসময়ে আল্লাহই তাঁকে সাহায্য করেছেন। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় উল্লেখ করে আল্লাহপাক বলেছেন সেই কঠিন সময়ে তিনিই তাঁর নবি সা.-কে সাহায্য করেছেন। সাওয়ার গুহায় আত্মগোপন করে থাকার সময় শত্রুরা যখন গুহার নিকটে চলে এসেছিল তখন আবু বকর রা. ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং সে সময়ে রসুলুল্লাহ সা. তাঁর সাথিকে সাহস যুগিয়েছেন, আমরা দু’জন মাত্র নই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে প্রশান্তি দান করেন এবং এমন বাহিনী দ্বারা শক্তি যুগিয়েছেন যা কেউ দেখেনি। আল্লাহপাক কাফেরদের কথাকে নিচু করে দিয়েছেন আর তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। তাঁর সাথে মোকাবেলায় কারো টিকে ওঠা সম্ভব নয়।

(৪১) মুসলমানদের সাজ-সরঞ্জাম ও লোকবল যাই হোক যখন যুদ্ধের ডাক দেওয়া হয় তখন বেরিয়ে পড়া ফরজ হয়ে যায়। জানমাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা সর্বোত্তম আমল; এটা ঈমানদার সবারই উপলব্ধি করা উচিৎ।

(৪২) এই আয়াতে মুনাফিকদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। তবুক যুদ্ধ ছিল তৎকালের সুপার পাওয়ার রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে। ছিল প্রচণ্ড গরম এবং মদিনা থেকে অনেক দূর সিরিয়া সীমান্তে সর্বোপরি সময়টা ছিল ফসল উঠানোর মওসুম। মুনাফিকরা এই যুদ্ধে নিজেদের বিপদ উপলব্ধি করছিল। আল্লাহ সেটিই স্মরণ করে দিয়েছেন, যাত্রাপথ যদি সহজ হতো এবং গণিমতের মাল লাভের সম্ভাবনা থাকতো তাহলে অবশ্যই তারা নবিকে সা. অনুসরণ করতো। এখন তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নানা ওজর পেশ করবে। ওজর পেশ করা আল্লাহ তায়ালার পছন্দ নয়।

শিক্ষা :

জিহাদ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল। নামাজ হলো দীনের ভিত্তি এবং জিহাদ হলো তার চূড়া। ইসলামের চারটি স্তম্ভের ছাদ হলো জিহাদ। ছাদবিহীন স্তম্ভ মূল্যহীন। ছাদ নির্মাণের লক্ষ্যেই মানুষ ভিত্তি গড়ে। এই ছাদ রোদ, বৃষ্টি, ঝড় ও শীত থেকে রক্ষা করে। ইসলামী হুকুমাত বা রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষকে শান্তি-স্বস্তি ও নিরাপত্তা দান করে। ইসলামী হুকুমাত বা সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চেষ্টা-প্রচেষ্টাকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বলা হয়। জিহাদের চূড়ান্ত রূপ হলো কেতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ। এই কেতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ অবশ্যই রাষ্ট্রশক্তির এখতিয়ারে। খেলাফত দান আল্লাহর মর্জি এবং সেটি নির্ভর করে একদল সংঘবদ্ধ ব্যক্তি যদি ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ হয় তাহলে আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি যে, তিনি তাদেরকে খেলাফত দান করবেন (সুরা নূর ৫৫)। এই রাষ্ট্রশক্তিকে সংরক্ষণ ও রাষ্ট্রের সম্প্রসারণে সরকার নিয়মিত বাহিনী গড়ে তুলবে বা প্রয়োজনে তার নাগরিকদের যুদ্ধের জন্য বাধ্য করবে। রসুলুল্লাহ সা. সুদীর্ঘ তেরোটি বছর একতরফা মার খেয়েছেন কখনই বদলা গ্রহণ করেননি বা পারেননি। কিন্তু মদিনায় তিনি শুধু আত্মরক্ষা নয় অগ্রসর হয়ে আক্রমণ করেছেন।

এখানে ৩৮-৪২ আয়াতগুলোতে তবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে আল্লাহপাক সর্বশক্তি নিয়ে রসুলুল্লাহ সা.-এর নেতৃত্বে অভিযানে বের হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। এব্যাপারে যারা গাফেলতি প্রদর্শন করেছে তাদের তিরস্কার করেছেন এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির কথা বলেছেন। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ডাক আসলে শৈথিল্য প্রদর্শনের কোনো সুযোগ নেই। জিহাদ হলো ঈমানের মাপকাঠি এবং সেটি সর্বক্ষণ। দীন কায়েমের লক্ষ্যে সকল ধরনের কর্মপ্রচেষ্টাকে বলা হয় জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। ২৩.০৫.২০২৩

Comments