জুমার খুতবা
১৯.০৫.২০২৩
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। তিনি বলেন, আল্লাহপাক দয়া করে সর্বোত্তম স্থান আল্লাহর ঘর মসজিদে আসার তৌফিক আমাদের দান করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ। তিনি সুরা আলে ইমরানের ১৮৫ নং আয়াত উদ্ধৃত করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করবে।’ তৎসঙ্গে আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত মুসলমানদের পারস্পরিক হক সম্পর্কীয় একটি হাদিস উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, একজন মুসলমানের আর একজন মুসলমানের কাছে পাঁচটি হক রয়েছে। হকগুলো হলো-
১. সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া। সালাম দেওয়া সুন্নাত এবং জবাব দেওয়া ওয়াজিব।
২. কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। দেখতে যাওয়া, খোঁজ-খবর নেওয়া সুন্নাত। অমুসলিম হলেও।
৩. কেউ মারা গেলে জানাযার নামাজে শরিক হওয়া। জানাযায় শরিক হওয়া ফরজে কেফায়া।
৪. কেউ দাওয়াত দিলে তাতে অংশগ্রহণ করা। মুসলমানের দাওয়াতে শরিক হওয়া তার ভাইয়ের একটি হক।
৫. কেউ হাঁচি দিলে তার উত্তর দেওয়া। হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। বুখারি ও মুসলিম।
অন্য একটি হাদিসে ছয়টি হকের কথা বলা হয়েছে। পাঁচটির সাথে অতিরিক্ত হলো কেউ উপদেশ চাইলে তাকে উপদেশ দেওয়া।
অদ্যকার জুমায় খতিব মহোদয় ছয়টি হকের মধ্যে জানাযায় শরিক হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি কুরআনের আয়াত ‘কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত’ উল্লেখ করে বলেন, শুধু মানুষ নয়, প্রাণী মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। মৃত্যু থেকে কেউ পালাতে পারবে না এবং মৃত্যুকে কেউ অস্বীকারও করে না। দুর্ভাগ্য, মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে সকলের ধারণা একরকম নয়। যারা মনে করে মৃত্যু তার জীবনের শেষ পরিণতি, এরপর আর কিছু নেই তাদের জীবনধারা হয় খাও দাও ফুর্তি করো, ওদের কাছে আল্লাহর বিধানের কোনো মূল্যায়ন নেই। ন্যায়-অন্যায় বোধ তাদের নেই। পক্ষান্তরে যারা মনে করে দুনিয়ার জীবন খুবই স্বল্প ও ক্ষণস্থায়ী এবং আখিরাত বিশাল ও চিরস্থায়ী তারা আল্লাহকে ভয় করে জীবন পরিচালনা করেন।
একজন মুসলমান মারা গেলে তার হক হলো তাকে গোসল শেষে জানাজার নামাজ পড়ে দাফন করা। জানাযার নামাজ মৃতের জন্য দোয়া। হাদিসে প্রচুর সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি কেবল জানাযায় শরিক হলে তার জন্য এক কিরাত পরিমাণ সওয়াব এবং জানাযা শেষে দাফনে শরিক হলে দুই কিরাত পরিমাণ সওয়াব (বুখারি ও মুসলিম)। এক কিরাত হলো ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সওয়াব। জানাযায় লোকসমাগম বেশি হওয়া উত্তম। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, কারো জানাযার নামাজে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে নাই এমন ৪০জন লোক শরিক হলে আল্লাহপাক মৃত ব্যক্তির জন্য তাদের সুপারিশ কবুল করেন।
জানাযায় শেষে দাফনের উদ্দেশ্যে মৃত ব্যক্তির সাথে উচ্চস্বরে দোয়া-দরুদ পাঠের প্রয়োজন নেই। মৃতের পাশাপাশি যারা জানাযা ও দাফনে শরিক হয় তাদের কল্যাণের লক্ষ্যে জানাযা। এই জানাযা স্মরণ করে দেয় যে মৃত ব্যক্তির মতো আমাদেরও এমনিভাবে খাটিয়ায় বহন করে কবরস্থানের দিকে যে কোনো মুহূর্তে নেওয়া হতে পারে। নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করে নীরব হয়ে চলাটা নিয়ম। দাফন শেষে মানুষ যখন চলে আসে তখন কবরে শায়িত ব্যক্তি পায়ের আওয়াজ শুনতে পায়।
কবর আজাব সম্পর্কে আমাদের মাঝে অনেকে সন্দেহ পোষণ করেন। সন্দেহ পোষণ করার কোনো সুযোগ নেই। কুরআন ও হাদিসে কবর আজাব সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সুরা মুমিন ৪৬ নং আয়াতে ফেরাউনের কবর জগতে শাস্তি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘(সে আজাব হলো) দোজখের আগুন, যার সামনে তাদের সকাল ও সন্ধ্যায় পেশ করা হয়। যখন কিয়ামত হবে তখন হুকুম হবে, ফেরাউনের গোষ্ঠীকে আরো বেশি কঠিন আজাবে ফেলে দাও।’ কবরের আজাব বলতে মাটির অভ্যন্তরে তাকে রেখে দেয়া হলো সেখানে আজাব দেওয়া হবে এটা শুধু তেমন নয়, মূলত কিয়ামত সংঘটনের পূর্ব পর্যন্ত আলমে বরযোখে শাস্তি। রসুলুল্লাহ সা. কবরের আজাব সম্পর্কে নানা বর্ণনা দিয়েছেন। হাদিসে এমনটি পাওয়া যায় কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত একজন ব্যক্তির (নেককার হোক বা বদকার হোক) প্রকৃত বাসস্থান দেখানো হবে। এবিষয়ে প্রকৃত জ্ঞান আল্লাহর। আল্লাহপাক আমাদের সকলকে তাঁর নেক বান্দা হিসেবে কবুল করুন। সংক্ষেপিত ও সামান্য সংযোজিত।
Comments
Post a Comment