Skip to main content

মুসলিম- আল্লাহর বাছাইকৃত বান্দা

 ইসলাম এক রাষ্ট্রীয় দীন। সকল নবি-রসুলের দীন ছিল ইসলাম এবং সকলকে একই দায়িত্ব (দীন কায়েম করো) দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছে। কুরআনের ভাষায়, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সে বিধানই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নুহকে এবং যা আমি তোমার কাছে ওহি করে পাঠিয়েছি, উপরন্তু যার আদেশ আমি ইবরাহিম, মুসা ও ইসাকে দিয়েছিলাম, তোমরা এ দীন প্রতিষ্ঠিত করো এবং এতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না’- সুরা আশ শূরা ১৩। শেষনবি মুহাম্মদ সা.-কেও আল্লাহ তায়ালা একই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁর বাণী, ‘তিনি তাঁর আপন রসুলকে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন যাতে সকল দীন বা ব্যবস্থাপনার ওপর তাঁর দীনকে বিজয়ী করতে পারেন, মুশরিকরা যতই অপছন্দ করুক না কেন’- সুরা সফ ৯। একই কথা সুরা তওবা (৩৩ নং আয়াত) ও ফাতাহ (২৮ নং আয়াত) একটু পরিবর্তন করে বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেছেন, ‘দীন কায়েমের প্রশ্নে কাফের-মুশরিকরা কখনই ছাড় দিবে না।’

আল্লাহপাক প্রেরিত সকল নবি-রসুলের সাথে সমসাময়িক শাসক ও তাদের সুবিধাভোগীদের সাথে দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের পেছনে মূল কারণ ছিল দীন প্রতিষ্ঠা। নমরুদের সাথে ইবরাহিম আ. ও ফেরাউনের সাথে মুসা আ.-এর দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের মূলে দীন কায়েম ছাড়া ভিন্ন কোনো কারণ ছিল না। নবি-রসুলদের স্লোগান ছিল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আসলে কালিমা তাইয়্যেবাহ এক বিপ্লবাত্মক ঘোষণা। এর মধ্য দিয়ে সকল শাসককে অস্বীকার করে এক আল্লাহকে মেনে নেয়ার আহবান রয়েছে। আল্লাহপাকের দাবি, ‘আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো’- সুরা আন নহল ৩৬। আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানার নামই শিরক। 

ইসলাম আল্লাহপাক প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ দীন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের জীবনের ব্যাপকতা যতখানি ইসলাম ঠিক ততখানি। পরিপূর্ণভাবে দীন মেনে চলা আল্লাহর দাবি। তাঁর বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কারণ, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’- সুরা বাকারা ২০৮। আল্লাহর দীনের যতটুকু অমান্য করা হয় ততটুকু শয়তানের অনুসরণ করা হয়। আংশিক দীন মানা অর্থ আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরিক করা, এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি দীনের কিছু অংশ মানবে এবং কিছু অংশ অমান্য করবে, তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব’- সুরা বাকারা ৮৫। পরিপূর্ণ দীন তখনই মানা সম্ভব যখন দীন রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং মানুষ দীন মানার মতো অনুকূল পরিবেশ পায়। মদিনায় দীন কায়েমের পরই আল্লাহ তায়ালা শরিয়ত দান করেছেন।

সকল নবি-রসুল তাঁর অনুসারিদের কাছে দীন কায়েমের আহবান জানিয়েছিলেন। ইসা আ. তাঁর অনুসারিদের (হাওয়ারিগণ) বলেছিলেন, কে আছ আল্লাহর পথে আমার সাহায্যকারী? জবাবে হাওয়ারিগণ বলেছিলেন, আমরা আছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আল্লাহপাক শেষনবির অনুসারিদেরকে তাঁর এই কাজে (দীন প্রতিষ্ঠা) মনোনীত করেছেন (সুরা হজ ৭৮)। তিনি মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠতম বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, তোমাদের আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ করবে, মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে এবং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা রাখবে’- সুরা আলে ইমরান ১১০। রাষ্ট্র বা সমাজে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ না করলে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব নয় এবং আল্লাহপাক তাঁর বাছাইকৃত বান্দাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের আসনে দেখতে চান। সকল নবি-রসুলের দীন হলো ইসলাম এবং সবাই ছিলেন মুসলিম (অনুগত)। তবে মুসলিম হিসেবে আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেন হজরত ইব্রাহিম আ.। আল্লাহর বাণী, ‘তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের মিল্লাতের (আদর্শের) ওপর প্রতিষ্ঠিত হও। সে আগেও তোমাদের নাম রেখেছিল মুসলিম এবং এর (কুরআনে) মধ্যেও, যাতে করে রসুল তোমাদের ওপর সাক্ষী হন এবং তোমরাও সাক্ষী হও লোকদের ওপর (সুরা হজ ৭৮)। ইব্রাহিম আ. ছিলেন সম্পূর্ণ শিরকমুক্ত ও নির্ভেজাল মুসলিম। শেষনবি মুহাম্মদ সা. তাঁর উম্মতের কাছে দীনকে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়ে বিদায় হজের ভাষণে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে এই দীনের জিম্মাদারী উম্মতে মুহাম্মদীর ওপরে। সকল মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিয়ে উম্মতকে দায়িত্বমুক্ত হতে হবে। আল্লাহপাক আখেরাতে আমাদের কাছ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। 

আখেরাতের জবাবদিহি ও ভয়ঙ্কর আজাব থেকে রেহাই পাওয়ার পথ হলো আল্লাহর পথে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহপাকের ভাষায়, ‘বলবো কি এমন একটি ব্যবসায়ের কথা যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে? তা হলো আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি বিশ্বাস এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা; এটিই সবচেয়ে কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে’- সুরা সফ ১০-১১। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর বিনিময়ে আল্লাহপাক মুমিনদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে জান্নাতে দাখিল করাবেন এবং আল্লাহর ভাষায় এটিই সবচেয়ে বড়ো সাফল্য (সুরা সফ ১২)। আরো দেবেন, যা মুমিনরা পছন্দ করে, আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয় (সুরা সফ ১৩)। এটি আল্লাহর অতিরিক্ত দান। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, আকিমুস সালাত (নামাজ কায়েম করা) যেমন ফরজ তেমনি আকিমুত দীনও (দীন কায়েম) ফরজ। দুর্ভাগ্য, মুসলিম জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ দীন কায়েমের চেতনা থেকে মুক্ত এবং এমন অনেকে আছেন ব্যক্তিগত জীবনে নামাজ-রোজা-হজ- জাকাত পালন এবং মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হলেও ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর সাথে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত রাখে। 

আল্লাহ তায়ালা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করবেন না। তাঁর বাণী, ‘যদি কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো জীবন বিধান অনুসন্ধান করে তবে তার কাছ থেকে সে (উদ্ভাবিত) ব্যবস্থা কখনো গ্রহণ করা হবে না, পরকালে সে চরমভাবে ব্যর্থ হবে’- সুরা আলে ইমরান ৮৫। এ জাতীয় লোকেরা দীন ও দুনিয়াকে ভাগ করে নিয়েছে। নামাজ- রোজা-হজ-জাকাত-কুরবানি সব দীনদারী এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, রাজনীতি সবই দুনিয়ারী। ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনীতিতে ধোকা-প্রতারণা রয়েছে, তাই ধর্মের মতো পবিত্র জিনিসকে এই অঙ্গনে তারা আনতে চায় না এবং তাদের দাবি তারা ধর্মনিরপেক্ষ। রাজনীতির অঙ্গনে যারা ধর্মনিরপেক্ষ তারা রাজনীতির ক্ষেত্রে সততা-বিশ্বস্ততা-আমানতদারী ও ওয়াদা- প্রতিশ্রুতি পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। হ্যাঁ, দেশীয় আইন ও বৈষয়িক উন্নয়নের স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন সেটি তারা পালন করে। তাদের কাছে সততা একটি পলিসি (Honesty is the best policy), কিন্তু একজন মুসলিমের কাছে সততা আখেরাতে নাজাতের অন্যতম উপায়। আবার অনেকেই রয়েছে যারা রাজনীতি নিরপেক্ষ ইসলামে বিশ্বাসী। ফলে সমাজের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বে কে সমাসীন হলো সে ব্যাপারে তারা উদাসীন। এই শ্রেণির মানুষ আল্লাহকে মানার সাথে সাথে তাগুতকেও মানে। অথচ আল্লাহপাক তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহকে মানার কথা বলেছেন (আন নহল ৩৬) এবং ইসলামকে আদ দীন (একমাত্র জীবনব্যবস্থা) বলে ঘোষণা দিয়েছেন (আলে ইমরান ১৯)।

আল্লাহপাক মুমিন ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য টেনেছেন এভাবে, ‘যারা ইমান এনেছে তারা লড়াই করে আল্লাহর পথে, আর যারা কুফরি করেছে তারা লড়াই করে তাগুতের পথে। সুতরাং তোমরা লড়াই করো শয়তানের বন্ধুদের সাথে। নিশ্চিত জেনে রাখো, শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল’- সুরা আন নিসা ৭৬। এখানে দুটি পক্ষ স্পষ্ট- যারা ইমানদার তারা আল্লাহর পথে চেষ্টা-প্রচেষ্টাকারী পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা তাগুত বা খোদাদ্রোহী শক্তির পক্ষে প্রচেষ্টাকারী। মাঝামাঝি অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। কিছু আছে যারা উভয়পক্ষে থাকে, তারা মূলত মুনাফিক। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে লোক মারা গেল, না সে জিহাদ করলো আর না জিহাদের বাসনা অন্তরে পোষণ করলো তার মৃত্যু হলো মুনাফিকের মৃত্যু।

কুরআন মজিদে নানাভাবে মানুষকে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সুরা হজের ৭৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করো হক আদায় করে।’ এখানে ফি সাবিলিল্লাহ না বলে বলা হয়েছে ফিল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহতে নিজেকে বিলিন করে দিয়ে নিজের সকল মেধা, যোগ্যতা, ক্ষমতা, সম্পদ যা কিছু আছে সবকিছু উজাড় করে পরিপূর্ণ হক আদায় করে জিহাদ করো। সুরা তওবা ২৪ নং আয়াতে মানুষের জীবনে আল্লাহর পথে জিহাদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন সবকিছুকে একে একে (পিতা, ভাই, সন্তান, পরিবার, ধনসম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়িঘর) উল্লেখ করে বলা হয়েছে আল্লাহ, আল্লাহর রসুল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ অপেক্ষা যদি প্রিয় হয় তাহলে অপেক্ষা করো। আল্লাহ ফাসেকদের কখনো হেদায়াত দান করেন না। 

দীন কায়েমের প্রচেষ্টা বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়। এজন্য দরকার সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আমাদের সংঘবদ্ধতার তাগিদ দিয়ে থাকে। নামাজের বড়ো শিক্ষা ঐক্যবদ্ধতা ও নেতার আনুগত্যের অনুশীলন। নামাজে মুক্তাদির কোনো ভুল নেই। ভুল হয় ইমামের আনুগত্যের ক্ষেত্রে। ইমামের আনুগত্যের সামান্যতম বিচ্যুতি মুক্তাদির নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। আবার জুমার দিনে ইমামের বক্তৃতা (খুতবা) শোনা ওয়াজিব করা হয়েছে এবং এতো গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে যে পাশে কেউ কথা বললে ভাই, চুপ করো তাও বলা যায় না। মসজিদে আগে আগে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে প্রথমে আসার ভিত্তিতে উট, গরু ও ছাগল কুরবানির সওয়াব রয়েছে। খতিব মহোদয় মিম্বরে আরোহণের সাথে সাথে ফেরেশতারা সওয়াব লেখা বন্ধ করে খুতবা শোনা শুরু করে দেন। নামাজে কাতার সোজা করার ক্ষেত্রে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আবার মসজিদে প্রবেশ করে প্রথম কাতার, তারপর দ্বিতীয় কাতার, এভাবে পর্যায়ক্রমে বসবে যাতে সামনে ফাঁকা জায়গা না থাকে এবং মানুষকে ডিঙিয়ে যেতে না হয়। এসবই শৃঙ্খলা এবং নামাজ আমাদেরকে আনুগত্য ও শৃঙ্খলার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। একটি সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যশীল বাহিনী বিশ্ব জয় করতে পারে। হ্যাঁ, মহান আল্লাহপাক তাঁর বাছাইকৃত বান্দাদের এমনিভাবে সুশৃঙ্খল ও আনুগত্যশীল হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্বনেতৃত্বের আসনে সমাসীন করতে চান। 

নামাজের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আল্লাহর স্মরণ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত আল্লাহর ঘরে হাজিরা দিয়ে প্রমাণ করে যে, তারা আল্লাহর গোলাম এবং বুকে হাত বেঁধে বারবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে, ‘আমরা তোমারই গোলামি করি ও তোমারই কাছে সাহায্য চাই’। না’বুদু শব্দটি Present & Future উভয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ নামাজ আদায় করে যেমন তোমার গোলামি করছি তেমনি নামাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও তোমারই গোলামি করবো। দুর্ভাগ্য, নামাজের বাইরে গোলামি খুব কমই হয়ে থাকে। মুনাফিকের কয়েকটি নিদর্শনের মধ্যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা অন্যতম।

আল্লাহ তায়ালা তাঁর মনোনীত বান্দাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার উপর জোর তাগিদ দিয়েছেন এবং ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপনের উপরই মুসলমান থাকা নির্ভর করে। আল্লাহর বাণী, ‘হে মুমিনগণ!  তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেভাবে করা উচিত আর মুসলমান না হয়ে মরো না। তোমরা আল্লাহর রজ্জু শক্তভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’- সুরা আলে ইমরান ১০২-১০৩। আল্লাহপাক মুসলমান না হয়ে মরার ব্যাপারে হুশিয়ার করে দিয়েছেন এবং মুসলমান থাকাটা নির্ভর করে জামাতবদ্ধতার ওপর। সুরা হজ ৭৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত দাও এবং আঁকড়ে ধরো আল্লাহকে। ওয়া তাছিমু বিল্লাহ, আল্লাহর রজ্জু বা রশি নয় আল্লাহকেই শক্ত করে ধরো। সুপারলেটিভ ডিগ্রি। 

জামাতবদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সা.-এর হাদিস আমরা উল্লেখ করতে পারি। হাদিসে কুদসি, আমি তোমাদেরকে পাঁচটি কাজের নির্দেশ প্রদান করছি, না না আমার নয়, আমার আল্লাহ বলেছেন। পাঁচটি কাজ হলো- জামাত গঠন, নেতার আদেশ শ্রবণ, নেতার আনুগত্য করা, হিজরত করা ও জিহাদ করা। জামাত থেকে যে এক বিঘত পরিমাণ সরে গেল সে ইসলামের রশি তার গলদেশ থেকে খুলে ফেললো, যতক্ষণ না জামাতে পুনরায় ফিরে না আসে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করেন, ইয়া রসুলুল্লাহ সা. সে যদি নামাজ পড়ে, রোজা রাখে ও নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করে? রসুলুল্লাহ সা. বলেন, হ্যাঁ তবুও সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় (হজরত হারেস আল আশয়ারী রা. বর্ণিত আহমদ ও তিরমিজি)। সংঘবদ্ধ জীবন যাপনের ওপর রসুল সা.-এর অনেক উক্তি রয়েছে। 

সুরা সফে ৪ নং আয়াতে আল্লাহপাক তাঁর প্রিয়ভাজন বান্দাদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন যারা আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো জামাতবদ্ধভাবে লড়াই করে’। আল্লাহর পথে লড়াই করার জন্য সাহস-হিম্মত দরকার এবং সেটিও আল্লাহ মুমিনদের যোগান দিয়েছেন। সুরা হজের ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহপাক মুমিনদের অভিভাবক হিসেবে নিজেকে এভাবে পরিচয় দিয়েছেন, ‘তিনিই তোমাদের মাওলা (অভিভাবক)। কতো উত্তম অভিভাবক তিনি, কতো উত্তম সাহায্যকারী’। আল্লাহই তো সব এবং সেই আল্লাহকে যদি অভিভাবক হিসেবে অনুভব করা যায় তাহলে কি আর ভয়-ভীতি ও পেরেশানি থাকে? আমাদের সমাজে যে ব্যক্তি মন্ত্রী-মিনিস্টারের লোক বলে দাবি করে সে হয় বেপরোয়া এবং তার সাহস-হিম্মত অনেক বেড়ে যায়। ইমানদারদের উপলব্ধি করা দরকার যে, তারা আল্লাহর লোক, আল্লাহ তাদের অভিভাবক ও তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট এবং তারা তাঁরই কাছে ফিরে যাবে।

আল্লাহর মনোনীত বান্দাদের মাঝে অনৈক্য ও দলাদলি তাঁর বড়ই অপছন্দ। তাঁর ভাষায়, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হেদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। যেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। তাদেরকে বলা হবে, ইমানের নেয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো’- আলে ইমরান ১০৫-১০৬। উম্মাহর মাঝে অনৈক্য ও দলাদলি, ফেতনা-ফাসাদ, হিংসা- বিদ্বেষ সৃষ্টি করা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়, আল্লাহপাক ইসলাম থেকে প্রত্যাবর্তন অর্থাৎ কুফরি বলে আখ্যায়িত করেছেন। উম্মাহর মাঝে দলাদলি দীনের কোনো মৌলিক বিষয়ে নয়। সুন্নাত-মুস্তাহাবের মতো অমৌলিক বিষয়েই মতপার্থক্য এবং স্বয়ং রসুলুল্লাহ সা.-এর আমলেই ভিন্নতা ছিল। যার কারণে চারটি মাজহাবের উদ্ভব হয়েছে এবং সকলেই হকের ওপর রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সুরা হজের ৭৪ নং আয়াতে বলেছেন, ‘দীনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি’। আমাদের দীনে রয়েছে উদারতা-প্রশস্ততা। কুরআন মজিদে উদারতার কথা নানাভাবে বলা হয়েছে। তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় করো (তাগাবুন ১৬)। অর্থাৎ যতখানি সাধ্যে কূলায়। যে স্বীয় মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকলো সেই সফলতা লাভ করলো (তাগাবুন ১৬)। আল্লাহপাক তাঁর মনোনীত বান্দাদের মাঝে উদারতা-প্রশস্ততা দেখতে চান। সে নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি বড়ো করে দেখলেও অপরের দোষ-ত্রুটি সহজেই উপেক্ষা করতে পারে।

এখন প্রশ্ন ইসলাম প্রতিষ্ঠা বা খেদমতে বিভিন্ন দল কাজ করছে। সবাইকে কি একটি দলে পরিণত হতে হবে? সেটি কি আদৌ সম্ভব বা তার কি প্রয়োজন রয়েছে? নবি-রসুলদের মাধ্যমে দীন কায়েমের যে সংগ্রাম ছিল সেটি একক দলের (আল জামাত) ভিত্তিতে এবং সেই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া অর্থ কুফরিতে ফিরে যাওয়া। কিন্তু নবি-রসুলদের অবর্তমানে একাধিক দল থাকতে পারে। সবার লক্ষ্য দীন কায়েম ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। দীন কায়েমের কর্মপন্থা নিয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে এবং সে কারণে বিভিন্ন দল গঠিত হতে পারে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যদি কোনো দলের লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে অবশ্যই সবার মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি থাকতে হবে। মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে সুধারণা পোষণ ও পরস্পরের কল্যাণ কামনা ইসলামের মৌলিক দাবি। আবার অনৈক্য সৃষ্টির যতগুলো কারণ রয়েছে- পরস্পর খারাপ ধারণা পোষণ, গিবত, হিংসা-বিদ্বেষ সবই কবিরা গুনাহ। দীনের পথে যারা দায়ী তাদেরকে এসব গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। উম্মাহর বৃহত্তর স্বর্থে ও ইসলামের তরক্কির প্রশ্নে এসব মুখলিস দায়ীরা ইনশা- আল্লাহ একটা প্লাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পড়বে। আমরা সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছি।

শিরক-বিদয়াত, ফরজ-ওয়াজিব ও হারাম- হালালের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করলেও দীনের খুঁটিনাটি বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত গুরুত্ব প্রদান করে পরস্পরে ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত থাকে। বর্তমানে ফেসবুক-ইউটিউবে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে যত চর্চা, বাকবিতণ্ডা ও দলাদলি! দীন নিয়ে বাড়াবাড়ির ফলে অতীতে অনেক জাতি ধ্বংস হয়েছে। এরা সবকিছুর মধ্যে হারাম তালাশ করে এবং শুধু গুনাহ খুঁজে বেড়ায়। অথচ আল্লাহপাক হারাম সুনির্দিষ্ট করে (প্রবাহিত রক্ত, শুকরের গোশত, মৃত জীবজন্তুর গোশত ও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবেহ এবং তৎসঙ্গে রসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক হিংস্র কিছু জন্তু-জানোয়ার) সকল পাক জিনিসকেই হালাল ঘোষণা করেছেন (সুরা মায়িদা)। আল্লাহপাক কতো উদারতা প্রদর্শন করেছেন। খারাপ কাজে ইচ্ছা করলে কোনো গুনাহ নেই, খারাপ কাজ করার সাথে সাথে গুনাহ না লিখে অপেক্ষা করা হয় তওবা করার জন্য। তওবা না করলে সমপরিমাণ গুনাহ আমলনামায় লেখা হয়। পক্ষান্তরে ভালো কাজে নিয়ত করলেই সওয়াব এবং কাজ করার পর সওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বান্দাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কোনো বাহানা তালাশ করা হবে না বরং ক্ষমা করার উপায় তালাশ করা হবে। উম্মাহর অনৈক্যের পেছনে অনুদার দৃষ্টিভঙ্গিই মূলত প্রধান কারণ। অথচ আল্লাহ তায়ালা বাছাইকৃত বান্দাদের মাঝে উদারতা ও ক্ষমাশীলতা দেখতে চান। 

কতটুকু ভুলত্রুটি মেনে নেয়া যায় আল্লাহপাক নামাজের মাধ্যমে হাতেকলমে শেখাচ্ছেন অথচ আমাদের আচরণটা কী? নামাজে ইমাম সাহেব ফরজ লঙ্ঘন করলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হয়। ওয়াজিব ছুটে গেলে সহু সেজদা দিয়ে সংশোধন করে নিতে হয়। কিন্তু সুন্নাত- মুস্তাহাব ভুল হলে সেটি বিবেচনাযোগ্য নয়। সুন্নাত-মুস্তাহাবের ত্রুটিতে নামাজের মতো ইবাদতে কোনো সমস্যা না হলে সেটি নিয়ে দলাদলির কী আছে? যেসব আমল নিয়ে মতপার্থক্য তা ছেড়ে দিলে কোনো গুনাহ নেই কিন্তু উম্মাহর মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি ও দলাদলি করা কুফরি। উম্মাহকে বোঝানোর দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের। দুনিয়ার জীবনে উম্মাহর জিল্লতি এবং নিপীড়ন-নির্যাতনের মূলে রয়েছে বিভেদ ও পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ। আখেরাতে যে ভালো কিছু নেই তা তাদের আচরণেই প্রকাশ পাচ্ছে।

দীন কায়েমের স্বাভাবিক পন্থা হলো মানুষকে দাওয়াত প্রদান এবং ইসলামের আলোকে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করা। দাওয়াত হতে হবে কুরআনের প্রতি এবং পরিশুদ্ধিও কুরআনের আলোকে। দাওয়াতের বিষয় প্রসঙ্গে আল্লাহপাক মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম আ.-এর দোয়া উল্লেখ করেছেন, ‘হে আমাদের রব! এদের (আমার বংশধর) কাছে এদের মধ্য থেকেই একজন রসুল পাঠাও, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে (তোমার) কিতাব এবং হিকমা শিক্ষা দেবেন আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ (তাজকিয়া) করবেন। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশক্তিমান সর্বজ্ঞানী’- সুরা বাকারা ১২৯। 

কুরআন যেটাকে হালাল বলেছে সেটাকে হালাল জানা এবং যেটাকে হারাম বলেছে সেটাকে হারাম জানা এবং তা থেকে বিরত থাকার চেয়ে আর কোনো পরিশুদ্ধি নেই। দীন কায়েমের মৌলিক কাজ হলো মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া ও তাদের নেক আমলে অভ্যস্ত করা এবং সংঘবদ্ধ করা। এর বাইরে কোনো পথ খোলা নেই। কোনো সন্ত্রাস বা যুদ্ধ-বিগ্রহ নয়, কোনো ব্যক্তি বা দলের অধিকার নেই সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণার। যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার রাষ্ট্র বা সরকারের। রসুলুল্লাহ সা.-এর দীর্ঘ তেরো বছর মক্কায় দীনের দাওয়াত প্রদান করেছেন, নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, একটি ঘটনাও এমন নেই যে তিনি গোপনে কাউকে আঘাত করেছেন বা একটি মারলে দশটি মারার ঘোষণা দিয়েছেন। যুদ্ধ সবই মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর। আল্লাহপাক কুরআন মজিদে একতরফা নবি-রসুলদের নিপীড়ন-নির্যাতনের কথাই তুলে ধরেছেন।

মানুষ চেষ্টা করবে কিন্তু দীন কায়েম একান্তভাবে আল্লাহর। মুমিনরা মানুষের কাছে দাওয়াত পৌঁছাবে ও দীন কায়েমের গুরুত্ব তুলে ধরবে এবং তাদেরকে নেক আমলে উদ্বুদ্ধ করবে। একটি জনপদের মানুষ ইমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ হলে আল্লাহপাক তাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করবেন। তাঁর বাণী, ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ইমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদেরকে দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দীনকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যে দীনটি আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের (বর্তমান) ভয়- ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে। আর যারা এরপরও কুফরি করবে তারাই ফাসেক’- সুরা নূর ৫৫। কোনো নেতিবাচক কাজ নয়, আল্লাহর পথে প্রচেষ্টাকারী জনগোষ্ঠীকে শুধু ইতিবাচক কাজ অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবে এবং নিজেরা নেক আমল করবে। 

নেক আমল অর্থ এ নয় যে, বেশি বেশি দোয়া- দরুদ পাঠ করবে ও নফল ইবাদত-বন্দেগিতে সময়গুলো অতিবাহিত করবে। বরং মৌলিক মানবীয় গুণ-সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারী, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন এবং মানুষের সাথে সদাচরণকারী হবে। মক্কী জিন্দেগির সূচনায় যেসব সূরা অবতীর্ণ হয়েছে সেখানে এমনই বলা হয়েছে। সুরা আসরে আল্লাহপাক কসম খেয়ে বলেছেন, ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে বাঁচার জন্য চারটি গুণ অপরিহার্য- ইমান ও আমলে সালেহ, হকের দাওয়াত ও ধৈর্যধারণের উৎসাহ যোগানো। নেক আমলের কোনো ফিরিস্তি আল্লাহপাক দেননি। নেক আমল মানে মানবপ্রকৃতি যে কাজটিকে ভালো জানে সেটিই নেক আমল এবং যেটিকে খারাপ জানে সেটিই বদ আমল। মানবপ্রকৃতিকে নেক ও বদ আমলের অনুভূতি আল্লাহই দিয়েছেন। ফলে কেহ যখন কোনো অন্যায় করে তখন তার বিবেক তিরস্কার করে। নির্ভেজাল ইমান ও আল্লাহর ভয় তার জন্য রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে।

কেবল বিবেকের ওপর ছেড়ে না দিয়ে নেক আমলের ধারণা আল্লাহ তাঁর কিতাবেও দান করেছেন এবং রসুলুল্লাহ সা. নানাভাবে উল্লেখ করেছেন। সুরা মাউনে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইয়াতিমকে ধাক্কা দেয় ও মিসকিনকে খাবার দিতে উৎসাহ দেয় না সে মূলত পরকালকেই অবিশ্বাস করে। আবার সুরা হুমাজায় বলা হয়েছে, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে। আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা. যা বলেছেন তা সবই বিবেকসম্মত। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া একটি নেক আমল ও সওয়াবের কাজ এবং এটি বিবেকেরও দাবি। 

ইসলাম সদাচরণের উপর গুরুত্ব প্রদান করে এবং সদাচরণ আল্লাহর সকল সৃষ্টির সাথে। যারা মৌলিক মানবীয় গুণে সমৃদ্ধ ও সৃষ্টির সাথে সদাচরণ করে তাদের ওপরই সমাজের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব আল্লাহপাক অর্পণ করেন। এটা আল্লাহ তায়ালার সুন্নাত। আল্লাহপাকের বাছাইকৃত বান্দাদের কদর্য চরিত্রই প্রমাণ করে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সকল যোগ্যতা হারিয়ে তারা কাফের-মুশরিকদের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়ে জিল্লতির জীবন যাপন করছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বের নেতৃত্ব দানের জন্য মুসলমানদের বাছাই করেছেন। আল্লাহপাক আমাদের মাঝে উপলব্ধি দান করুন এবং অনৈক্য ও বিভেদের সকল বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার তৌফিক দান করুন। আমিন। ১১.০৫.২০২৩।

Comments