হয়নি সকাল ঘুমো এখন
মা বলবেন রেগে
----
বলবো আমি আলসে মেয়ে
ঘুমিয়ে তুমি থাকো
হয়নি সকাল
তাই বলে কি
সকাল হবে নাকো?
কাজী নজরুল ইসলামের 'আমি হবো সকাল বেলার পাখি'- কবিতার কয়েকটি লাইন।
আমাদের সময়ে শিশু-কিশোরদের সকালে বিছানায় আটকে রাখা ছিল সত্যি কঠিন। শীতের দিনও আমাদের আটকে রাখা সম্ভব হতো না।আমরা গ্রামের সন্তান। শীতের দিন পর্যাপ্ত শীতের কাপড়-চোপড় আমাদের ছিল না। তারপরও সবাই মিলে আগুন তাপানোর মধ্যে যে কী আনন্দ! সেসময়ে এটাকে বলা হতো সাঁজাল তাপানো।
সারাক্ষণ হৈ-হুল্লোড়, খেলাধুলা, দু'আড়াই মাইল দূরে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত। ফলে স্বাভাবিকভাবেই থাকতাম ক্লান্ত-শ্রান্ত। খেলাধুলা যাই করি মাগরিব পর্যন্ত। আজানের সাথে সাথে বাড়ি চলে আসতে হতো। পড়াশোনা ও খানাপিনা শেষে বড়জোর রাত নয়/দশটা। তারপর ঘুম। খেলাধুলার বেশির ভাগই ছিল শারীরিক পরিশ্রমের। হারিকেনের আলোয় পড়াশোনা। হারিকেন নিভায়ে বা কমিয়ে দিয়ে ঘুমাতে হতো। আমাদের ঘুমও ভালো হতো।
এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। অভিভাবক অনেক ব্যস্ত। এছাড়া টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালা সব রাত্রে। আবার রয়েছে মোবাইলে আসক্তি। মোবাইল সবার হাতে হাতে। মোবাইল আমাদের ঘুমাতে দেয় না। শিশু-কিশোররা নির্দেশ মানতে চায় না, ওরা অনুকরণ করে। ফলে রাত দু'টার আগে মা-বাবা যেমন ঘুমায় না তেমনি তারাও ঘুমায় না। তারা ঘুম থেকে জাগে অনেক বিলম্বে। অনেকে একেবারে দুপুরে উঠে লাঞ্চ করে।
আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শিশুদের সকালে উঠার জন্য প্রেরণা যুগিয়েছেন তাঁর এই কবিতায়। ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ সকাল সকাল ঘুমায় ও সকাল সকাল জাগে। এটা ছিল আমাদের নবির সুন্নাত। সাধারণত এশার নামাজের পরের সময়টা ছিল তাঁর ও তাঁর পরিবারের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং রাতের একটি অংশ কাটাতেন ব্যক্তিগত ইবাদতে। ফজর থেকে শুরু হতো তাঁর কর্মব্যস্ততা। আমাদের সময়ে সপ্তম শ্রেণি থেকে Early rising, Discipline, Aim in life এসব রচনা মুখস্থ করা শুরু হতো। এখন আর পড়া হয় কি না জানা নেই।
আমাদের সন্তানরা আমাদেরকেই অনুকরণ করবে। আমরা নিজেরা ও সন্তানদেরকে নিয়ে সকাল সকাল ঘুমানো ও জাগার চেষ্টা করি। এতে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ লাভের পাশাপাশি রসুলুল্লাহ সা.-এর সুন্নাত পালনের ফলে প্রভূত সওয়াবও লাভ করা যাবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment