( Industry is the key to success)
'পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি'- স্কুলজীবনে আমাদের প্রায়ই ভাব সম্প্রসারণ আসতো। এখন আসে কি না জানি না। যারা কর্ম তালাশ করে তাদের কথা দেশে এতো বেকারত্ব, আমরা যাবো কোথায়? আর যারা চাকরি দেবে তাদের কথা, আমরা যোগ্য লোক পাই না। তাই বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত ও চীন থেকে লোক নিতে হয়। কার কথা সত্য বলা বেশ কঠিন।
এটা ঠিক পৃথিবী কর্ম পাগলদের জন্য। এখানে অলস ও কর্মবিমুখদের কোনো জায়গা নেই। যোগ্যতা মানুষ মায়ের পেট থেকে নিয়ে আসে না। কিছু আছে আল্লাহর দান, অস্বীকার করি না। কিন্তু অধিকাংশই পরিশ্রম লব্ধ। দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম করো, সাধনা করো প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে। তিনি আরো বলেছেন, লোকে বলে সব মানুষ কবি হতে পারে না, বক্তা হওয়াও ইশ্বরের গুণ- একথা আমি বিশ্বাস করি না।
আল্লাহর এ জমিনে তাঁর একটি নিয়ম আছে। আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেছেন। পরিশ্রম ছাড়াও তিনি দিতে সক্ষম। কিন্তু সাধারণত দেন না। রুজির জন্য তিনি পরিশ্রমকে অনেকটা শর্ত করে দিয়েছেন। নামাজ সমাপনান্তে রুজির জন্য বেরিয়ে পড়তে বলেছেন এবং এমতাবস্থায় আল্লাহকে বেশি বেশি করে স্মরণ করতে বলেছেন। হ্যাঁ, পরিশ্রমের পাশাপাশি আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।
রসুলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবিদের জীবনে আমরা কঠোর পরিশ্রম লক্ষ করি। ভিক্ষাবৃত্তিকে রসুল সা. অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। 'নবির শিক্ষা করোনা ভিক্ষা'- কবিতাটি আমাদের পাঠ্য ছিল। তিনি বলতেন, উপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম। যার ঘরে একদিনের খাবার আছে তার পক্ষে ভিক্ষা করা বৈধ নয়। ঋণ করাকে তিনি খুব অপছন্দ করতেন। তিনি বলেন, আল্লাহ যখন কাউকে শাস্তি দিতে চান তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন।
ওমর রা. কঠোর হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। যুবকদের মসজিদে অলস বসে থাকাটা তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি বলেন, যে কাজ করে না তার খাওয়া অন্যায়। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে আমরা জানি। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তাঁর জন্ম হয়নি। কঠোর অধ্যবসায় ও অসাধারণ ধৈর্য বলে তিনি উন্নতির শীর্ষে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি তাঁর ছেলের শিক্ষককে একটি চিঠি দিয়েছিলেন এবং তাতে লিখেছিলেন, আমার ছেলেকে শেখাবেন, ৫টি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে পরিশ্রম করে একটি ডলার উপার্জন করা অনেক উত্তম।
জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য জ্ঞানার্জন ও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার বাইরে অনেক লেখাপড়া রয়েছে। জীবনে জানার কোনো শেষ নেই। ডিগ্রি অর্জনের পরে কেউ যদি মনে করে তার লেখাপড়া শেষ, তাহলে বুঝতে হবে তার উন্নতির দুয়ার বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বিশ্বটাকে জানার চেষ্টা করি ও পরিশ্রমী হই এবং জীবনটাকে উপভোগ করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment