Skip to main content

জিলহজ মাসের প্রথম দশকের সওয়াব

 জুমার খুতবা

০৯.০৭.২০২১

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ আজকের খুতবায় আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করার পর বলেন, জিলকদ মাসের আজ ২৭ তারিখ আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার জিলহজ মাস শুরু হবে ইনশা-আল্লাহ। উক্ত মাসের প্রথম দশক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে এর নানা ফজিলতের কথা বলা হয়েছে। বছরে বারোটি মাস, এর মধ্যে চারটি মাস (জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম, রজব) অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ, এসব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষেধ। এই চার মাসের মধ্যে জিলহজ মাস অন্যতম।

আল্লাহপাক সুরা ফজরের শুরুতে কসম করেছেন, ফজরের কসম, দশটি রাতের এবং জোড় ও বেজোড়ের। ‘তারা যেন নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর স্মরণ করে’- সুরা হজ ২৮। এখানে দশ রাত এবং নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)সহ অনেক মুফাস্সিরে কেরাম জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতের কথা বলেছেন। এই মাসের অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত দিনে রোজা পালন করা, রাতে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত। হজরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের দশ দিনের ইবাদত অন্য দিনের ইবাদতের তুলনায় আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়, প্রতিটি দিনের রোজা এক বছরের রোজার মতো, আর প্রতি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের মতো’- তিরমিজি।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এ দিনগুলোর (জিলহজের প্রথম দশ দিন) আমলের তুলনায় কোনো আমলই অন্য সময়ে উত্তম নয়। তারা বললো, জিহাদও না? তিনি বললেন, জিহাদও না, তবে যে ব্যক্তি নিজের জানের শঙ্কা ও সম্পদ নিয়ে বের হয়েছে, অতঃপর কিছু নিয়েই ফিরে আসেনি’- বুখারি। জিহাদের মতো আমলের চেয়েও বেশি সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। তবে যারা শহিদ হবে তাদের মর্যাদা অনেক উচ্চে। তাদের সাথে কোনো আমল তুলনীয় নয়। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, তারা জীবন্ত, তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোনো চেতনা নেই’- সুরা বাকারা ১৫৩।

হজরত ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে কোনো দিনই প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দশ দিনের (জিলহজের প্রথম দশ দিন) তুলনায়। সুতরাং তোমরা বেশি বেশি তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ করো’- তাবারানি।

তাহলিল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, তাহমিদ- আলহামদু লিল্লাহ, তাকবির- আল্লাহু আকবার, উচ্চারণ করো।

আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ নফল রোজা রাখা বিশেষ সুন্নাত আমল। তবে হাজি সাহেবদের জন্য নয়। হজরত আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তায়ালা তার বিগত এক বছরের ও সামনের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন’- মুসলিম, মিশকাত।

জিলহজ মাসের একটি বড় আমল তাকবির পড়া (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর একবার তাকবির বলা ওয়াজিব। জিলহজ মাসের ১০, ১১, ও ১২ তারিখ যেকোনো দিন কোনো ব্যক্তির মালিকানায় নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। জাকাতের নেসাবের সাথে কুরবানি নেসাবের পার্থক্য হলো জাকাতের ক্ষেত্রে সারা বছর এবং কুরবানির ক্ষেত্রে ঈদের দিন হলেই হবে। জাকাতের ক্ষেত্রে নগদ টাকা পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য, কৃষিফসল ও পশু দ্বারা জাকাতের নেসাব হিসাব করা হয়, কিন্তু কুরবানি ক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া সবই বিবেচনায় আসবে।

যারা কুরবানি করার নিয়ত করবে জিলহজ মাসে তাদের চুল, নখ, শরীরের পশম না কাটার জন্য হাদিসে বলা হয়েছে। হজরত উম্মে সালমা (রা) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল, নখ কাটা থেকে বিরত থাকে’- মুসলিম, ইবনে হিব্বান।

কুরবানি করার ফজিলত সম্পর্কে উল্লেখ করার সময় জনৈক সাহাবি রসুলুল্লাহ (সা)-কে প্রশ্ন করেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা)! আমার কাছে একটি উটনি আছে, আমি ওর দুধ পান করি ও মাল বহন করি। আমি কি সেটি কুরবানি করতে পারি? রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, না। বরং তোমার চুল, নখ, শরীরের পশম না কেটে ঈদ শেষে কেটে ফেল এবং সেটিই হবে আল্লাহর নিকট তোমার কুরবানি- আবু দাউদ, নাসায়ি। এতে বোঝা যায় জিলহজ মাসের শুরু থেকে ১০ জিলহজ পর্যন্ত চুল, নখ, গোঁপ ও শরীরের পশম না কাটা সকলের জন্যই সওয়াব রয়েছে।

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমাদের করণীয় :

১. দিনের বেলায় রোজা রাখা (সম্ভব না হলে অন্তত আরাফার দিন, আরবের ৯ তারিখ সাধারণত আমাদের এখানে ৮ তারিখ হয়। আমরা ৮ ও ৯ তারিখ রাখতে পারি।)

২. অতিরিক্ত নামাজ আদায় ও রাত্রি জাগরণ।

৩. কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবিহ-তাহলিল বেশি বেশি করা।

৪. দান-সদাকা করা।

৫. সবধরনের নেক আমল বেশি বেশি করা।

৬. সবধরনের গুনাহের কাজ পরিহার করা।

আল্লাহপাক আমাদেরকে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণের তৌফিক দান করুন।

Comments