বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মানুষ আল্লাহর সেরা ও প্রিয় সৃষ্টি। এই মানুষের মাঝেই রয়েছে আল্লাহর কিছু অনুগত ও কিছু বিদ্রোহী। আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য সাজিয়েছেন অসংখ্য নেয়ামতেভরা জান্নাত এবং সেখানকার জীবন চিরন্তন, যা কোনোদিন শেষ হবে না। পক্ষান্তরে খোদাদ্রোহীদের (কাফের-মুশরিক) জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন ভয়াবহ আজাবের স্থান জাহান্নাম এবং সেটি স্থায়ী, যে শাস্তি কোনোদিন শেষ হবে না। আমরা বিদ্রোহী বান্দা নই (কাফের-মুশরিক নই), আল্লাহর গুনাহগার বান্দা। তিনি তাঁর এসব গুনাহগার বান্দাকে তাঁর পথে ফিরে আসার জন্য নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং ক্ষমা করার কথা বলেছেন।
বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য কোনো দিনক্ষণ নেই। বান্দা চাইলেই আল্লাহ ক্ষমা করবেন। স্বাভাবিকভাবে যখন বান্দা ফিরে আসে না, তখন শাস্তি দেন যাতে ফিরে আসে। এটি আল্লাহরই কথা, ‘জলে-স্থলে যে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে তা মানুষের কৃতকর্মের দরুন। আল্লাহ চান তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে, যাতে তারা ফিরে আসে’- সুরা রুম ৪১। বাবা-মা সন্তানকে আদর করেন, নানাভাবে বোঝান, যখন কোনোভাবেই কাজ হয় না তখন মার দেন। এই মার দেয়াটা ফিরে আসার লক্ষ্যে। আমি জানি, এই করোনায় আল্লাহর অনেক বান্দা তাঁর পথে ফিরে এসেছেন, তারা বড়ই ভাগ্যবান।
মানুষ যখন নেক কাজের নিয়ত করে ফেরেশতারা তার আমলনামায় সওয়াব লিখে দেন এবং নেক কাজের বিনিময়ে সমপরিমাণ নয়, দশ থেকে সাতশত গুণ সওয়াব দিয়ে থাকেন। এটা নির্ভর করে তার নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও একাগ্রতার ওপর। পক্ষান্তরে মন্দ কাজের নিয়তে কোনো গুনাহ লেখা হয় না, যতক্ষণ না সেই গুনাহের কর্ম সম্পাদন না করে এবং গুনাহ লেখা হয় ঠিক সমপরিমাণ। আবার অনেক সময় অপেক্ষা করা হয় তার তওবা করার জন্য। এসবই বান্দার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহ।
বিশেষ কিছু দিনক্ষণ রয়েছে, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যধিক দয়ার্দ হন। যেমন, রমজান মাস ও লাইলাতুল কদর এবং জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন। আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। তিনি তাঁর বান্দার মর্যাদা অনেক উচ্চে পৌঁছে দিতে চান। আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রিয় আর কোনো ইবাদত নেই। এর প্রত্যেক দিনের ইবাদত এক বছরের সমান এবং প্রতি রাত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান। এসবই বান্দার জন্য বোনাস। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দার নেকির পাল্লাকে ভারি করে দিতে চান।
আজ ১ জিলহজ। এ মাসের দশ তারিখ পর্যন্ত বান্দার জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অজস্র রহমত। শাস্তিদানের জন্য আল্লাহ কোনো বাহানা তালাশ করবেন না বরং ক্ষমা করার জন্য নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করবেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে চান। ক্ষমা পাওয়ার জন্য এই সময়টা খুবই উপযোগী। আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করার উপযুক্ত সময়। মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়া আর গুনাহে জড়িয়ে থাকা এমনটি যেন না হয়। শিরক ও সবধরনের কবিরা গুনাহ ত্যাগ করতে হবে। নামাজ ও পর্দা মেনে চলার ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে।
বান্দা যদি ফরজ-ওয়াজিব পালন করে এবং কবিরা গুনাহ থেকে দূরে থাকে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাকে ক্ষমা করে জান্নাতে দেবেন। আর যদি কোনো ঘাটতি থাকে তাহলে নফল ইবাদতসমূহ যোগ করে পূরণ করে দিবেন।
আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত থাকা। কুরআনে উল্লেখ রয়েছে, আল্লাহপাক শিরক ছাড়া সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা। ইসলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ ও একমাত্র জীবনব্যবস্থা। ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া শিরক। যারা শিরক করে (ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু চায়), তাদের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর বান্দা হতে হবে।
এই দশকে আমাদের উচিৎ স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বাড়তি ইবাদত করা। এর মধ্যে রোজা রাখা (বিশেষ করে আরাফার দিনের রোজা ব্যক্তির পূর্বের এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ), নফল নামাজ (বিশেষ করে তাহাজ্জুদের নামাজ), তাসবিহ তাহলিল পাঠ (প্রতি ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ, সোবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পাঠ), প্রতি নামাজের সাথে যেসব নফল নামাজ রয়েছে সেগুলো পড়া, কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন, হাদিস পাঠ, ইসলামী সাহিত্য পাঠ একটু বেশি বেশি করা। প্রতিদিন কিছু কিছু সদকা করা (সদকা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে ও বিপদাপদ থেকে হেফাজত করে), মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করা (কাজের লোককে কাজ হালকা করে দেয়া), ব্যাপকভাবে সালাম বিনিময় করা (গৃহের বাসিন্দা, বিল্ডিং-এর দারোয়ান, কাজের লোকজন) এবং সবধরনের কল্যাণকর কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করা।
এই দশকে আর একটি ইবাদত হলে তাকবির পড়া। মাস শুরু হলেই সাহাবায়ে কেরাম বেশি বেশি করে তাকবির পড়তেন (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)। আর ৯ তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ নামাজ শেষে একবার তাকবির পড়া ওয়াজিব। এই সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো ১০ জিলহজ কুরবানি করা। এই কুরবানি তিন দিন করা যায়। সামর্থবানদের জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব।
ভালো কাজ বেশি করার চেয়েও গুনাহ থেকে বিরত থাকা বেশি জরুরি। অন্য সময়ের ইবাদতের চেয়ে এই দশকের ইবাদতে আল্লাহ বেশি খুশি হন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই সময়ে যদি কেউ গুনাহ অব্যাহত রাখে তার পরিণতি কী হবে? সে তো আল্লাহর বিরুদ্ধে রীতিমতো বিদ্রোহাত্মক আচরণই করলো। তার মধ্যে যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আখেরাতের ভয় থাকে তাহলে এই সময়ে গুনাহে জড়িত থাকা কখনোই সম্ভব নয়।
আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর নাফরমানি পরিহার করে একনিষ্ঠ বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন। ১২.০৭.২০২১
Comments
Post a Comment