ঈদজামাতে খুতবা
২১.০৭.২০২১
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ ঈদের নামাজের পূর্বে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করার পর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সকল জনগোষ্ঠীর মাঝে উৎসব রয়েছে এবং আমাদেরও দু’টি উৎসব আছে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর গুনাহমাফির পুরষ্কার হিসেবে ইদুল ফিতর এবং হজরত ইব্রাহিম (আ) ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের স্মৃতিবিজড়িত ঈদুল আজহা। ঈদ মানে আনন্দ যা বারবার ফিরে আসে। জিলহজ মাসের প্রথম দশক আমাদেরকে আল্লাহপাকের ক্ষমালাভের অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে বিশেষ করে আরাফার দিনে অধিক সংখ্যক লোককে আল্লাহপাক ক্ষমা করেন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। দু’টি ঈদের সাথেই ক্ষমার সম্পর্ক রয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে আমাদের আনন্দ।
অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর মতো আমাদের ঈদ কেবল উৎসবই নয়, এটি আমাদের ইবাদত। এই কুরবানির সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক জড়িত। পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায় এবং সেটি হয় গুনাহ মাফের কারণ। পশুর শরীরে যত পশম রয়েছে কুরবানিদাতার আমালনামায় তত নেকি লেখা হয়। আমাদের উৎসব শুরু হয় দু’রাকাত নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে। এই ঈদে বারবার তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা করা হয়। যেখানে আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণই কুরবানির উদ্দেশ্য, সেখানে আল্লাহর নাফরমানির পর্যায়ে পড়ে এমন কোনো কার্যক্রমের সাথে মুসলমান কি কখনই সম্পৃক্ত হতে পারে?
আজ অনেকে নামাজ ছেড়ে দিয়েছে, পর্দার ফরজিয়াত ভুলে গেছে এবং চালচলনে মনে হয় না যে সে একজন মুসলমান। ঈদের দিন আমাদের বিশেষ দিন, আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্তির দিন অথচ ঈদের দিন সে যেন আরো বেপরোয়া, পর্দাহীন নারী সেজেগুজে রাস্তায় নেমে পড়ে। মোড়ে মোড়ে চলে মিউজিক ও অশ্লীল গান-বাজনা। আবার ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমা, নাটকের ঘোষণা আসে। আল্লাহর সাথে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ছাড়া আর কী বলা যায়? খতিব মহোদয় এসব অনুষ্ঠানাদি বর্জনের জন্য তাঁর মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানান। বিনোদন ইসলাম অস্বীকার করে না। কিন্তু বিনোদনের নামে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়া মেনে নেয়া যায় না। অশ্লীলতা বিপর্জিত হাস্যরস, খেলাধুলা সবই জায়েজ।
খতিব মহোদয় বলেন, ইসলামে দুটি আনন্দ উৎসবে দরিদ্রদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কুরবানির গোশত নিজেরা খাবেন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশি ও ফকির-মিসকিনকে খওয়াবেন। এটি আল্লাহ তায়ালারই নির্দেশ। আমাদের সমাজে যে তিনভাগের প্রচলন তা আবশ্যিক না হলেও বলা যায় উত্তম ব্যবস্থা। আলোচনার শেষ পর্যায়ে কুরবানি সম্পর্কে কিছু বিষয়ে তিনি মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জবেহ করতে হবে আল্লাহর নামে- 'বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার' বলে।
পশুর চারটি রগ আছে- দুটি বড় (খাদ্যনালি ও শ্বাসনালি), বড় দুটিসহ ছোট যে কোনো একটি কাটলেই কুরবানি হয়ে যায়। চারটি কাটতে পারলে ভালো। জবেহ হওয়ার পর পশু নিস্তেজ হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৮/১০ মিনিট সময় অপেক্ষা করতে হবে। তাড়াতাড়ি নিস্তেজ করার জন্য কসাইকে চাকু দিয়ে খুঁচানো থেকে বিরত রাখতে হবে। রক্ত প্রভাহিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এমনটি না হলে অনেক আলেম গোশত হালাল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। একেবারে নিস্তেজ হওয়ার পর চামড়া ছিলতে হবে।
পশুর গোশত থেকে পারিশ্রমিক বাবদ কাউকে কিছু দেয়া যাবে না। তবে হাদিয়া হিসেবে কিছু দিলে দোষ নেই।
চামড়া কুরবানিদাতা নিজে ব্যবহার করতে পারেন। আস্ত চামড়া মাদ্রাসা বা কোনো প্রতিষ্ঠানে দেয়া উত্তম।
খতিব মহোদয় কুরবানির পরে আবর্জনা দ্রুত অপসারণের জোর তাগিদ দেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। এই দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করলে গুনাহ হবে।
মোমিনের কুরবানি ও সকল নেক আমল কবুল করার জন্য তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।
Comments
Post a Comment