Skip to main content

একটু ভাবুন। সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।

 বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম

কয়েকদিন পরেই আমরা সাড়ম্বরে পশু কুরবানি করবো ইনশা-আল্লাহ। নিশ্চয়ই এই পশু কুরবানির উৎস আমাদের জানা আছে। সবাই বলবেন, হ্যাঁ অবশ্যই আছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ)-এর স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ)-কে কুরবানি করার উদ্যোগের প্রেক্ষিতে প্রতিকী এই কুরবানি। আল্লাহপাক তাঁর বান্দার পরম আত্মত্যাগে সন্তুষ্ট হয়ে একটি পশু কুরবানির বিনিময়ে ইসমাইল (আ)-কে ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, পরবর্তীকালের লোকদের জন্য স্মরণ হিসেবে জারি করে দিলাম। না, এই কুরবানি ইব্রাহিম (আ) শুরু করেননি, শুরু আদম (আ)-থেকে। কুরআনে বর্ণিত, আদম (আ)-এর দুই সন্তানের একজনের কুরবানি গৃহিত হয় এবং অপরজনের প্রত্যাখ্যাত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কেবল মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল হয়।

ইব্রাহিম (আ) ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি কখনই মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। মুশরিক সেই যে আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করে। শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম। আল্লাহ শিরকের অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। এটা তাঁরই কথা, এর বাইরে যাকে খুশি ক্ষমা করবেন। তাঁর বাণী, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করে, সে গোমরাহীর মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে- সুরা আন্ নিসা ১১৬।

যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করেছে সেতো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গুনাহের কাজ করেছে- আন্ নিসা ৪৮।

আল্লাহর জাতে, গুণে, ক্ষমতায়, অধিকার ও তাঁর বিধান পালনে আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর পাশাপাশি আর কাউকে মেনে চলাকেই বলে শিরক। মানবজাতির জন্য আল্লাহপ্রদত্ত একমাত্র জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম- আলে ইমরান ১৯। যারা ইসলাম মেনে চলে তাদেরকেই বলে মুসলিম (অনুগত)। কুরআনের ভাষায়, একজন মুসলিমের পরিচয়, শুনলাম ও মেনে নিলাম- সুরা আন্ নুর ৫১। ইসলামের ব্যাপারে সে অন্ধ, কোনো যুক্তি-বুদ্ধির ধার ধারে না। এটি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের (সা) কথা- বাস এতটুকুই যথেষ্ট। এরাই নিখাঁদ মুসলিম। আমাদের পিতা ইব্রহিম ছিলেন এমনি ধরনের মুসলিম। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ, নবজাত পুত্র ইসমাইল (আ) ও স্ত্রী হাজেরাকে (আ) নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসো, কোনো প্রশ্ন নেই- মেনে নিলেন। আবার সন্তান দৌড়াদৌড়ি করার বয়সে উপনীত হলে স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি করো। কোনো আপত্তি নেই, পিতা-পুত্র উভয়ই রাজি হয়ে গেলেন। এই রাজি হওয়া বা হুকুম পালনের নামই ইসলাম এবং যে পালন করে সেই মুসলিম।

আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। যারা ইসলামকে অস্বীকার করে তাদের বিষয়টি আমাদের বিবেচনার দরকার নেই। তারা কাট্টা কাফের। কিন্তু মুসলিম ঘরে জন্ম এবং নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেয় তাদের বিষয়টিই আমরা একটু পর্যালোচনা করবো। আমাদের মাঝে একটি শ্রেণি আছে যারা প্রকাশ্যে ইসলামকে অস্বীকার না করলেও কাজে-কর্মে ইসলামের অনুসরণ করে না এবং সুযোগ পেলেই ইসলামের কোনো বিধি-বিধান পালনের ক্ষেত্রে আপত্তি করে। বাস্তবজীবনে নামাজ-রোজারও তেমন ধার ধারে না। এদের ও কাফেরের মাঝে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কাফের নিজে একটি আলাদা পরিচয় বহন করে কিন্তু এমন ব্যক্তি মুসলিম সমাজে থেকে ইসলামের বিরোধীতা করে। সুযোগ পেলেই এরা পর্দা, নারীর উত্তরাধিকার বা একাধিক বিবাহসহ নানা বিষয়ে মানুষের মাঝে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে। একজন মুসলিমের এই বিশ্বাস থাকতেই হবে, আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-এর বিধান সবধরনের ভুলভ্রান্তি ও ত্রুটি-বিচ্যুতির উর্ধে। এই শ্রেণির মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিজীবী মনে করে। এদের সম্পর্কেই আল্লাহর বাণী-

আর যারা আমার আয়াতকে খাটো করার চেষ্টা করবে তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী- সুরা হজ ৫১।

আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি- সুরা সাবা ০৫।

যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালায় তারা শাস্তি ভোগ করবে- সুরা সাবা ৩৮।

তারা কি জানে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের মোকাবেলা করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি বিরাট লাঞ্ছনার ব্যাপার- সুরা আত তওবা ৬৩।

না, হে মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনো মোমিন হতে পারে না যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে, তারপর তুমি যা ফায়সালা করবে তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যে কোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে- আন্ নিসা ৬৫।

এ হওয়ার কারণ হলো, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের চরম বিরোধিতা করেছে। যে ব্যক্তিই আল্লাহর বিরোধিতা করে, তাকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর- সুরা আল হাশর ০৪।

তোমরা তোমাদের আল্লাহকে পৃথিবীতে অচল ও অক্ষম করে দিতে সক্ষম নও এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোনো সহযোগী ও সাহায্যকারী নেই- আশ শুরা ৩১।

এদেরকে বলে দাও, যারা কুফুরি করেছে ফায়সালার দিন ইমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোনো অবকাশ দেয়া হবে না- সুরা আস সাজদাহ ২৯।

আর একটি শ্রেণি সম্পর্কে ভাবতে পারেন, যারা নামাজ-রোজা-হজ-জাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতসমূহ পালনে নিষ্ঠাবান নন, কিন্তু ইসলামের প্রতি দুর্বলতা আছে, মাঝে-মধ্যে মানে। কিন্তু ইসলামের কোনো বিধানের ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন করে না। পালন না করা প্রসঙ্গে লজ্জা অনুভব করে এবং পালনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এদের ব্যাপারে ফকিহদের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন, কুরআন-হাদিসের বর্ণনা অনুসারে কেউ কেউ বলেন এরাও কাফের; আবার কারো কারো মতে কাফের না বলে বলা যায় গুনাহগার (কবিরা গুনাহে লিপ্ত)। এদের পেছনে দাওয়াতের কাজ করলে আশা করা যায় দ্বীন পালনের ব্যাপারে তারা আন্তরিক হবে। যারা দ্বায়ী ইলাল্লাহ, তাদের উচিৎ এদের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করা। গাফেলতি দূর করতে পারলে তারা নিষ্ঠাবান মুসলিম হতে পারবে ইনশা-আল্লাহ।

আর একটি শ্রেণি সম্পর্কে বলি, যারা মৌলিক ইবাদতে নিষ্ঠাবান, কিন্তু দ্বীনকে ভাগ করে নিয়েছে। কিছু আল্লাহর জন্য রেখেছে আর কিছু রেখেছে তাগুতের জন্য। এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, তোমরা কি দ্বীনের কিছু অংশ মানবে ও কিছু অংশ অমান্য করবে? পরিণতি বলা হয়েছে, দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব- সুরা বাকারা ৮৫। তাগুতের সাথে এই শ্রেণির মুসল্লিদের বেশ মিতালী। তাগুত বলতে আমি তাদেরকেই বুঝাচ্ছি যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু চায় এবং সমাজে তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। কালিমা তাইয়্যেবার মর্মার্থ, আল্লাহকে ইলাহ মানা নয় বরং সকল ইলাহকে অস্বীকার করে কেবল আল্লাহকে মানা। অন্যভাবে বলা যায় আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো- সুরা নাহল ৩৬। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামী মুসলিমদের সাথে এই শ্রেণির (তাগুত) লোকদের প্রচণ্ড বিরোধ এবং এই বিরোধীতায় মুসল্লিবেশের লোকগুলো তাগুতেরই পক্ষাবলম্বন করে। এদেরকে মুনাফিক বলা যায়। মুনাফিকরাও মূলত কাফের ও মুশরিক। এদের কোনো আমল গৃহিত হবে না। শিরক সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, তাদের বেশির ভাগ আল্লাহকে মানে কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে- সুরা ইউসুফ ১০৬।

উপরোক্ত মুনাফিকদের সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ হলো, এদের মধ্যে সবাই বিশ্বাসগত মুনাফিক নয়; অনেকেই রয়েছে অজ্ঞতার কারণে এমন আচরণ করে। সমাজ থেকে ইসলাম নির্মূল করার লক্ষ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে অনৈক্য, বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন করার মতো লোক হয়তো খুব বেশি নয়। ইসলামে ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়তের ওপর নির্ভর করে। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামী লোকজন তাদের পেছনে সময় দিয়ে বিষয়টি ধরিয়ে দিলে হয়তো তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে।

আল্লাহপাক সকল নবি-রসুলকে সমসাময়িক তাগুত বা স্বৈরশাসকদের মোকাবেলায় দাঁড় করিয়েছেন এবং কুরআন মজিদে সেভাবেই তাঁদেরকে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাওহিদবাদী নবি-রসুলকে কোনো শিরকবাদী জনগোষ্ঠী বা তাগুত ও তার অনুসারীরা বরদাশত করতে পারেনি। আল্লাহপাক এভাবে পার্থক্য করেছেন, যারা ইমানদার তারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে এবং যারা কাফের তারা তাগুতের পথে লড়াই করে, তোমরা শয়তানের সঙ্গী-সাথিদের বিরুদ্ধে লড়াই করো, বিশ্বাস করো শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল- সুরা আন্ নিসা ৭৬।

এখানে আল্লাহপাক মুসলিম ও কাফেরকে স্পষ্ট করেছেন। একজন ব্যক্তি তখনই মুসলিম যখন সে জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করে, মেনে চলে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায়। সকল ব্যবস্থাপনার ওপর আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ নবি-রসুল প্রেরণ করেছেন (সুরা তওবা, ফাতহা ও সফ) এবং দ্বীন বিজয়ী করার প্রশ্নেই মুশরিকদের সাথে যত বিরোধ (সুরা সফ ৯)। নবি-রসুলদের যে দায়িত্ব সকল ইমানদার জনগোষ্ঠীর দায়িত্বও মূলত তাই এবং যারাই এই দায়িত্ব পালন করবে তাদের সাথে সকল কাফের, মুশরিক ও মুনাফিক একাট্টা হয়ে বিরোধীতা করবে। বিরোধীতা উপেক্ষা করে যারা মজবুতভাবে দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে থাকবে তাদের জন্য জান্নাত দানের ওয়াদা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকাপোক্ত ওয়াদা।

কুরআন-হাদিস পাঠে আমার উপলব্ধি, আল্লাহর দ্বীনকে আন্তরিকভাবে মেনে নিয়ে যারা মৌলিক ইবাদতসমূহ (নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) পালন করবে তারা ইসলামের সমর্থক হয়ে জান্নাতে যাবে। এর ভিত্তি হলো, যারা ইমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, পবিত্র কুরআনে অসংখ্য জায়গায় তাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। এরা সবাই নির্ভেজাল মোমিন, বাতিলের কেহ সহযোগী নয়। দ্বিতীয় রসুলুল্লাহ (সা)-এর হাদিস, এক বেদুইন এসে রসুলুল্লাহ (সা)-এর কাছে দ্বীন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সেই বেদুইনকে ইমানের সাথে নামাজ, রোজা এবং সামর্থ থাকলে জাকাত ও হজের কথা বলেন। জবাব শুনে বেদুইন বলে, আল্লাহর কসম, আমি এর বেশিও করবো না, আবার কমও করবো না। তার চলে যাওয়ার পর রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, তোমরা যদি জান্নাতি লোক দেখতে চাও তাহলে ঐ লোকটিকে দেখতে পারো। বেদুইনের জান্নাতে যাওয়ার মূলে রয়েছে ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস ও একনিষ্ঠ সমর্থন। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যারা চেষ্টা-প্রচেষ্টায় চালাবে তাদের খুলুসিয়াত (নিষ্ঠা) এবং কর্মপ্রচেষ্টা ও ত্যাগের ওপর আখেরাতে মর্যাদা নির্ধারিত হবে।

দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা বাধা হবে তারাই জালেম এবং আল্লাহপাক তাদেরকে দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। আল্লাহর বাণী, যারা ইমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি- সুরা বুরুজ ১০। ইমানদারদের প্রতি জুলুম-নির্যাতনে কারো অন্তরে যদি ব্যথা অনুভূত না হয় তাহলে বুঝতে হবে তারা জালেমেরই সহযোগী এবং আখেরাতে তাদের অবস্থান হবে জালেমদের ধারে কাছেই। কারণ সকল বিশ্বাসী পরস্পরের ভাই। শুধু দেশে কেন, বিশ্বে কোথাও মুসলমানদের দুঃখ-কষ্ট কারো অনুভূতিতে না লাগলে তার ইমান প্রশ্নবিদ্ধ, সংশয়পূর্ণ।

সারা বিশ্বে চলছে করোনার তাণ্ডব। মানুষের সকল জ্ঞান-বুদ্ধি, যোগ্যতা, শক্তিমত্তা, আবিষ্কার আল্লাহর এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। এটি মানুষের জন্য আল্লাহর এক সতর্কবার্তা। এতে যদি কেউ সতর্ক হয়ে আল্লাহর নাফরমানি ত্যাগ করে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে তবে এই করোনা তার জন্য আশীর্বাদ। সে যদি মারাও যায় তবে তার মৃত্যু শাহাদতের, বলা যায় সে জান্নাতের শুভ সংবাদ নিয়ে তার রবের কাছে হাজির হবে। পক্ষান্তরে করোনা কাফের-মুশরিক ও মুনাফিকের জন্য গজব।

সব মানুষকে জাহান্নামে প্রেরণের জন্য আমার এই লেখা নয়। আমিসহ আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অগণিত আল্লাহর বান্দা যাতে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত হয় তারই লক্ষ্যে আমার এই চেষ্টা। জান্নাতে যাওয়ার জন্য বড় বা কষ্টকর কোনো আমল প্রয়োজন নেই। হয়তো ভাববেন, জীবনে দীর্ঘ সময় নামাজ পড়েননি, রোজা রাখেননি, ইসলামের দুশমনদের পেছনে ঘুরেছেন; এখন কি আর সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। তাহলে করণীয় কী? করণীয় হলো, তওবা করা ও তাগুতের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য মেনে চলা। এমনটি করলে আল্লাহ বান্দার পেছনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তাই অপেক্ষা না করে এখনই বলুন, পরোয়ারদেগার ভুল করেছি ও নিজের প্রতি জুলুম করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। বিশ্বাস করুন, অন্তরে তওবা করার ইচ্ছা পোষণের সাথে সাথে আল্লাহপাক তাঁর বান্দার দিকে এগিয়ে আসবেন। বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যেই আল্লাহর যত আনন্দ।

মনে রাখতে হবে, পিতা ইবরাহিম (আ) মুশরিক ছিলেন না এবং তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই- সুরা আনয়াম ৭৯।

বলো, আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান (আমার কুরবানি), আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য, যার কোনো শরীক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী (মুসলিম)- সুরা আনয়াম ১৬২-১৬৩।

কুরবানি সম্পর্কে প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ (সা) বলেছেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ)-এর সুন্নাত। পিতা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নমরুদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, মাতৃভূমি ত্যাগ করে অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া সন্তান ও স্ত্রীকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে গিয়েছিলেন ও কলিজার টুকরো সন্তানকে জবেহ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহর সকল নির্দেশ কোনো প্রশ্ন ছাড়াই পালন করেছেন। আমরা তো তাঁরই সন্তান। পিতাকে অনুসরণ করে আমরাও বলি, আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান (আমার কুরবানি), আমার জীবন ও মরণ আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্য। আমাদের নামাজ, রোজা, কুরবানি যেমন আল্লাহর জন্য, তেমনি আমাদের বেঁচে থাকা হবে আল্লাহর জন্য এবং মরণও হবে আল্লাহরই জন্য। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তোমার পথে কবুল করো। আমিন। ০৭.০৭.২০২১

 

Comments