Skip to main content

ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা ও উত্তম রিযিকের প্রতিশ্রুতি রয়েছে

কুরআনের পাঠ ‘আরো কতো জনপদ! তারা ছিল দুরাচার, আমি প্রথমে তাদেরকে অবকাশ দিয়েছি, তারপর পাকড়াও করেছি। আর সবাইকে তো আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। হে মুহাম্মদ! বলে দাও, হে লোক সকল, আমি তোমাদের জন্য শুধুমাত্র একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী। কাজেই যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে মাগফেরাত ও সম্মানজনক জীবিকা। আর যারা আমার আয়াত ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে তারা হবে জাহান্নামের অধিকারী’- সূরা আল হাজ্জ ৪৮-৫১। বর্ণনাভঙ্গি ও বিষয়বস্তুর প্রেক্ষিতে বলা যায় সূরা হজ্জের একটি অংশ মক্কার শেষ দিকে ও বাকি অংশ মদীনার শুরুতে নাযিল হয়। মদীনায় হিজরত করার পর হজ্জের মওসূমে আল্লাহর ঘর জিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিকভাবে মুসলমানদের অন্তরে জাগে। এই ঘরটি তৈরীই হয়েছিল আল্লাহর স্মরণের লক্ষ্যে, কিন্তু তা মুশরিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাওহীদের পরিবর্তে সেটি শিরকের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল এবং আল্লাহর ইবাদতকারীদের জন্য মসজিদে হারামের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। এই দুরাচারদের সেখান থেকে হটিয়ে কাবার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ এবং একটি কল্যাণমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুসলমানদের প্রতি এই প্রথম যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। এই সূরাটিতে আরবের মুশরিক যারা নবী মুহাম্মদ (সা)-এর দাওয়াত অস্বীকার করে আসছিল তাদেরকে ভয় দেখানো হয়েছে ও সতর্ক করা হয়েছে, দ্বিতীয়ত দোটানা মুসলমান যারা ভালো কিছু দেখলে আছি এবং বিপদাপদে নেই তাদেরকে তিরস্কার করা হয়েছে এবং নিষ্ঠাবান মুসলমানকে আল্লাহর পথে জান-মাল দিয়ে জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সূরা হজ্জে কাবার ইতিহাস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে আল্লাহর হুকুমে তাঁরই ইবাদতের জন্য হযরত ইবরাহিম (আ) এই ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন এবং হজ্জ পালনের লক্ষ্যে এই ঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এই সূরায় ঈমানদারদের মুসলিম নামকরণ করা হয়েছে এবং তাদেরকে হজরত ইবরাহিম (আ)-এর যথার্থ স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। ব্যাখ্যা : উপরের আয়াতগুলোতে কাফির-মুশরিক ও সন্দেহবাদীদের সতর্ক করা হয়েছে যে, যুলুম-নির্যাতন ও পাপাচারের কারণে তাৎক্ষণিক পাকড়াও না করে ঢিল দেয়ার অর্থ এ নয় যে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বেখবর বা তিনি শাস্তিদানে অক্ষম, বরং এই অবকাশ তাদের ফিরে আসার একটি সুযোগ। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শাস্তিদানে তাড়াহুড়া করেন না, চরম সীমালঙ্ঘন করলে অন্যান্যদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে মাঝে-মধ্যে ধরেন মাত্র। আসলে সবাইকে তো তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। নবীর (সা) এই সাবধান বাণীকে কাফির-মুশরিকরা অবজ্ঞা করতো এবং দাবী করতো, তুমি যে এতো সতর্ক করো সত্যবাদী হলে তা নিয়ে এসো। এর জবাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আল্লাহর কোনো অবাধ্য বান্দাকে শাস্তিদান বা কোনো জনপদকে ধ্বংস করার ক্ষমতা কোনো নবীকে দেয়া হয়নি। এটি একান্তভাবে আল্লাহর এবং নবীর (সা) দায়িত্ব মাত্র তাঁর জাতিকে সতর্ক করা। নবীর (সা) অনুপস্থিতিতে এই সতর্ক করার দায়িত্ব তাঁর অনুসারী ঈমানদারদের। নবী মুহাম্মদ (সা)-এর দাওয়াতে যারা সাড়া দিয়েছেন বা ভবিষ্যতে দিবেন অর্থাৎ যারা ঈমান আনবে ও নেক আমল করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য পুরস্কার হলো আখিরাতে ক্ষমা (ক্ষমার বিনিময় জান্নাত) এবং দুনিয়ার জীবনে সম্মানজনক জীবিকা। রিযিকের (জীবিকা) অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। সাধারণত মনে করা হয়, ধন-সম্পদ ও টাকা-পয়সা প্রাপ্তিই হলো রিযিক। প্রকৃত অর্থে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সকল অনুগ্রহই হলো রিযিক। অর্থবৃত্ত, সুস্বাস্থ্য, জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগ্যতা, উত্তম স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, সর্বোপরি আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াতসহ মানুষের কল্যাণে আল্লাহর সকল দানই হলো রিযিক। এর বিপরিত যারা আল্লাহর হেদায়াত প্রত্যাখ্যান করবে এবং হেদায়াতের পথে আসার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে আখিরাতে তাদের পরিণতি জাহান্নাম। বর্তমান সমাজে যারা ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি করে ও ঈমানদেরদের ওপর যুলুম-পীড়ন চালায় তারা মূলত আবু জেহেল-আবু লাহাবদেরই উত্তরসূরী এবং হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে যারা নীরব থেকে গা বাঁচিয়ে চলে বা বাতিলের প্রতি সম্মতি জানায় তারা আব্দুল্লাহ বিন উবায়েরই অনুসারী। এ দুনিয়া একটি পরীক্ষাগার। হক ও বাতিলের এই দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আল্লাহপাক তাঁর নিষ্ঠাবান বান্দাদের যাচাই করে নিচ্ছেন। এই যাচাই-বাছাইয়ে তিনি যেন আমাদেরকে দয়া করে তাঁর নিষ্ঠাবান বান্দাদের দলভুক্ত থাকার তাওফিক দান করেন। আমিন। ০৭.১০.২০২০।

Comments