Skip to main content

যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ

জু’মা বক্তৃতা ০৯.১০.২০২০ আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন। তিনি কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ‘যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ’- বনী ইসরাইল ৩২। তিনি বলেন, যিনার সহায়ক সমাজে নানা কার্যক্রমের প্রসার ঘটায় ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনা এতো প্রসার লাভ করেছে এবং বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত ধর্ষণের উল্লেখ করে এর প্রতিকারের জন্য তিনি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। পর্দাহীনতা, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার, অশ্লীলতা প্রসারের লক্ষ্যে ইউ-টিউব, সিনেমা, নাটক, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিশেষ করে ভারতীয় চ্যানেলের তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। সমাজে যিনা-ব্যাভিচার ও ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে খতিব মহোদয় ধারাবাহিক আলোচনা করেন। ১. পারিবারিক শিক্ষা : পরিবারে নৈতিক শিক্ষা না থাকায় আজ সমাজের এতো অধপতন। নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হলো কুরআনের শিক্ষা। অতি শৈশব থেকে বাচ্চাদের কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত করা, নামাযে অভ্যস্ত করা ও আখিরাতমুখি মন-মানসিকতা গড়ে তোলা অপরিহার্য। খুব অল্প পরিবারেই এমন শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। বাচ্চাদের পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারেও অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার। পর্দার ধারণা শৈশব থেকেই প্রদান করতে হবে। ২. সামাজিক শিক্ষা : মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। সমাজে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলে যুব সমাজের চরিত্র গঠন সম্ভব নয়। তিনি সহশিক্ষার তীব্র সমালোচনা করেন এবং ছেলে-মেয়েদের পৃথক ক্যাম্পাসের দাবী জানান। ৩. পণ্যে নারীকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার : ৫/১০ টাকার একটি পণ্যেও নারীকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নারী এতো সহজলভ্য নয়। নারীর মর্যাদা অনেক উচ্চে। তিনি এব্যাপারে সমাজের মানুষকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান। ৪. পর্দাহীনতা রোধ : নারীর প্রতি সহিংসতা ও যিনা-ব্যাভিচারের প্রসার এবং ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনার পেছনে বড় কারণ হিসেবে খতিব মহোদয় পর্দাহীনতাকে দায়ী করেন। আল্লাহপাক পর্দাকে ফরজ করেছেন। অবাধ মেলামেশা, কিশোর-কিশোরীদের একত্রে চলাফেরা, পার্কে, রেস্টুরেন্টে একত্রে ঘুরাঘুরি, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের একত্রে অবস্থান নারীর প্রতি সহিংসতা ও যিনা-ব্যাভিচার প্রসারে বড় ভূমিকা রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। যে সব অভিভাবক এগুলো দেখে না দেখার ভান করেন তিনি তাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সন্তানের গুনাহের একটি অংশ এসব অভিভাবকদের ওপরে বর্তাবে। ৫. অশ্লীলতা রোধ : সিনেমা, টেলিভিশন, ইউ-টিউব সমাজে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। অশ্লীলতা শয়তানের কাজ। ভারতীয় সিরিয়াল আমাদের মূল্যবোধ ধ্বংস করে মানুষকে পরকিয়া ও অশ্লীলতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছে। অবিলম্ভে ভারতীয় চ্যানেলসহ যে সব টেলিভিশন অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের কাছে জোর দাবী জানান। ৬. বিয়েকে সহজলভ্য করা : ইসলাম বিয়েকে সহজ করেছে। বিয়ে রুজির প্রশস্ততা ঘটায়। আমাদের সমাজে বর্তমানে ছেলে-মেয়েদের প্রতিষ্ঠা লাভের চিন্তা, বিয়েকে নানা আনুষ্ঠানিকতায় জটিল ও ব্যয়বহুল করা হয়েছে। অথচ সন্তান বয়োপ্রাপ্ত হলে বিয়ে দেয়ার জন্য ইসলামে অভিভাবককে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বিয়ের মাধ্যমে সচ্ছলতা দানের ওয়াদা আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে। ৭. কঠোর শাস্তির বিধান : ইসলাম যিনা-ব্যাভিচারকে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও জঘন্য অপরাধ ঘোষণা করে এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। অবিহাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত এবং বিবাহিত হলে প্রকাশ্যে পাথর ছুঁড়ে মেরে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে। এব্যাপারে কোনো অনুকম্পা প্রকাশের সুযোগ নেই। মা, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে নারীর উচ্চ মর্যাদা ইসলামে ঘোষিত হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা, তার মান-ইজ্জত ও সম্মানহানি অকল্পনীয়। এক অধপতিত সমাজে আল্লাহর রসূল (সা)-ই বিশ্ব দরবারে নারীর মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা দূর এবং ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধ থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য ইসলামে প্রত্যাবর্তন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি তাঁর মুসল্লিদেরকে আল্লাহর বিধান পুরোপুরি অনুসরণের জন্য আহবান জানান। অতি সংক্ষেপিত। শ্রুতিলিখনে : প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী, উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।

Comments