কুরআনের পাঠ
(হে নবী) তোমার মালিকের শপথ, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় মতবিরোধের ফয়সালায় তোমাকে বিচারক মেনে নেবে, অতপর তুমি যা ফয়সালা করবে সে ব্যাপারে তাদের মনে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না এবং তোমার সিদ্ধান্ত তারা সর্বান্তকরণে মেনে নেবে’- সূরা আন্ নিসা ৬৫।
সূরা আন্ নিসা কয়েকটি ভাষণের সমষ্টি। তৃতীয় হিজরি থেকে চতুর্থ হিজরি শেষ বা পঞ্চম হিজরির শুরুর দিকে অবতীর্ণ হয়। এই সূরায় উত্তরাধিকার বন্টন, ইয়াতিমের অধিকার সংরক্ষণ, যুদ্ধের ময়দানে ভয়কালীন নামায, তায়াম্মুমের বিধানসহ সমাজের সংশোধন ও সংস্কার বিধানসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে।
মদীনায় হিজরতের পরে মুহাম্মদ (সা) কেবল দ্বীনের প্রচারক নন বরং একটি রাষ্ট্রের শাসক ও বিচারকসহ সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হন। এই আয়াতটি নাযিল হওয়া প্রসঙ্গে মা’রেফুল কুরআন ও তাফসিরে ইবনে কাসিরে হযরত ওমর (রা)-এর একটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো একটি বিষয়ে দু’ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে বিচারপ্রার্থী হন। রসূল (সা) বিচার করে দিলে যার প্রতিকূলে যায় সে প্রতিদ্বন্দ্বিকে সাথে নিয়ে বিষয়টি ওমর (রা)-এর কাছে আবার পেশ করে। ওমর (রা) উভয়ের বক্তব্য শোনার পর তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তরবারি নিয়ে এসে রসূল (সা) প্রদত্ত বিচার যার মনপুত হয়নি তাকে হত্যা করেন।
বিষয়টি একটি নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং রসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ওমর (রা) একজন মুসলমানকে হত্যা করবে তা হতে পারে না। এই আয়াতটি নাজিলের পর পরিষ্কার হয়ে যায় যে লোকটি ছিল মুনাফিক বা মুরতাদ। এই ঘটনায় আল্লাহপাক বা রসূল (সা) ওমর (রা)-কে কোনো শাস্তি বা নিন্দাবাদ করেননি। আসলে এই আয়াতে আল্লাহর রসূলের (সা) মর্যাদা ও সম্মান কত উচ্চে সেটিই উপলব্ধি করা যায়। তাঁকে উপেক্ষা করা হলে বা তাঁর রায় না মানলে সে আর মু’মিন বা মুসলিম থাকতে পারে না। সে হয়ে যায় মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী।
আল্লাহপাক তাঁর নবীর মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেছেন, জীবনের প্রতিটি ঘটনায় নবী (সা)-এর ফায়সালা সর্বান্তকরণে না মানা পর্যন্ত কারো পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয়। এটি শুধু তাঁর জীবদ্দশায় নয় কিয়ামত পর্যন্ত এই শর্ত বলবত রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা) কোনো ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকলে তাঁর দেয়া নিয়ম বা সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো ফায়সালা দেয়ার ক্ষমতা কোনো দেশের মুসলিম শাসক, পার্লামেন্ট বা বিচারালয়ের নেই। এটা স্থিরিকৃত যে আল্লাহপাকের দেয়া বিধান আল কুরআন এবং তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়নে গৃহিত কার্যক্রম (আল হাদিস) কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য আইনের উৎস এবং এটি মানার ক্ষেত্রে সামান্যতম দ্বিধাদ্বন্দ্ব অন্তরে পোষণ করার কোনো সুযোগ মু’মিনের নেই। এ প্রসঙ্গে রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ তার প্রবৃত্তি আমি যে পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি তার অধীনতা স্বীকার করে না নেবে।
উম্মাহর কষ্ট লাঘবের জন্য রসূলুল্লাহ (সা) যে সব সুবিধা দান করেছেন তা দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়াও এর মধ্যে শামিল। যেমন, শারীরিক সমস্যার কারণে বসে নামায আদায়, রোযার ক্ষেত্রে সেহরি ও ইফতার করা এবং ইফতারে অহেতুক বিলম্ব না করা, পানির অভাবে বা রোগ-ব্যাধির কারণে ওযু না করে তায়াম্মুম করা- এ জাতীয় বিধি-বিধানও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর রসূল (সা)-এর কথা, কাজ, অনুমোদন এককথায় যেটি হাদিস হিসেবে পরিচিত সেটি শর্তহীনভাবে মেনে চলা ঈমানের দাবী এবং মানার ক্ষেত্রে মনের ভেতরে সামান্যতম দ্বিধা-সংকোচ বোধ করা যাবে না। আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে রসূল (সা)-এর আনুগত্য অপরিহার্য। এর মধ্য থেকে সামান্য কিছু বাদ দিয়ে অন্য কিছু মেনে চলার কোনো সুযোগ নেই।
আল্লাহর রসূল (সা)-এর মোকাবেলায় এমন কেউ নেই যার আনুগত্য শর্তহীনভাবে মানা যায় বরং সকলের আনুগত্য রসূল (সা)-এর অধীন হতে হবে। রসূল (সা) ইবাদত হিসেবে যে কাজটি করেননি, বলেননি, অনুমোদন করেননি বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম করেননি এমন কাজের শরয়ী কোনো মর্যাদা নেই এবং তাতে কোনো ছওয়াব নেই বরং রয়েছে গুনাহ এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণ।
জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রিয়তম নবী (সা)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হওয়ার তাওফিক আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করুন। আমিন। ০২.১০.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment