জু’মা বক্তৃতা
০২.১০.২০২০
আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর গত দিনের মত আজও রিজিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং আগামী দিনেও করবেন বলে জানান।
আল্লাহপাক প্রদত্ত সকল অনুগ্রহই রিজিক। রিজিক শব্দটি কুরআন মজিদে ১২৩ বার এসেছে। তিনি আজকের আলোচনায় কুরআন থেকে প্রচুর আয়াত উদ্ধৃত করেন এবং হাদিস পেশ করেন। আমি এখানে তাঁর আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরবো ইন-শা-আল্লাহ।
আল্লাহপাক তাঁর সকল সৃষ্টির রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। পশু-পাখি থেকে শুরু করে এমন কোনো সৃষ্টি নেই যার রিজিকের দায়িত্ব তিনি নেননি। পাখিগুলো সকালে খালি পেটে বের হয়ে যায় এবং ভরা পেটে বাসায় ফেরে। তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো চাকুরি বা ব্যবসা নেই অথচ তাদের রিজিকের কোনো ঘাটতি হয় না। আল্লাহর ওপর তাদের তাওয়াক্কুল রয়েছে। তারা তাদের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর ছাড়ানো ছিটানো রিজিক তালাশ করে। বেরিয়ে পড়াটাই তাদের দায়িত্ব এবং বাকিটা আল্লাহ করে দেন। এমনিভাবে সকল সৃষ্টির রিজিকের ব্যবস্থা তিনি করেছেন।
‘তোমাদের রিজিকও আল্লাহ দিয়ে থাকেন’-এ কথা বলে আল্লাহ মানুষের পেরেশানি দূর করে দিয়েছেন। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সকলের রিজিকের ব্যবস্থা করলেও বিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। তাদের হালাল রুজিতে আল্লাহ বরকত দান করেন। রিজিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি চারটি গুণের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত, শিরকমুক্ত ঈমান, দ্বিতীয়ত- তাকওয়া, তৃতীয়ত-তাওয়াক্কুল, চতুর্থত-আল্লাহর ইবাদতের জন্য সময় বের করে নেয়া।
শিরকমুক্ত ও নির্ভেজাল ঈমানের অধিকারী বান্দাকে আল্লাহ পাক-পবিত্র রিজিক দান করেন এবং সেই রিজিকে রয়েছে বরকত। যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে আল্লাহ তাদের জন্য রিজিকের দরজাসমূহ খুলে দেন এবং এমন অবস্থায় রিজিক দান করেন যা সে কল্পনাও করেনি। ঈমান ও তাকওয়ার অধিকারী বান্দাদের আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল রাখতে হবে। বান্দাহ তার রুজির জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে কিন্তু ফলাফলের জন্য আল্লাহর ওপরই নির্ভর করবে। চেষ্টা-প্রচেষ্টা ছাড়াও আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। সাধারণত সেটি নিয়ম নয়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি হযরত মরিয়ম (আ)-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন। হযরত যাকারিয়া (আ) দেখেন, অসময়ে তাঁর ঘরে নানা প্রকারের ফল-ফলাদি। জিজ্ঞেস করলে মরিয়ম (আ) বলেন, আল্লাহ দিয়েছেন।
হযরত মরিয়ম (আ) ছিলেন কুমারী। কোনো পুরুষ তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি। আল্লাহ তাঁকে সন্তানের সুসংবাদ দিলে তিনি ভয় পেয়ে যান। লোক-লজ্জা ও মানুষের অপবাদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তিনি লোকালয় থেকে মরুভূমিতে চলে যান। সেখানে একটি খেজুর গাছের নিকট তিনি আশ্রয় নেন। ক্ষুধা লাগলে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাঁকে খেজুর গাছ নাড়া দিতে বলেন। তাজা পাকা খেজুর তাঁর সামনে পড়ে। এভাবে আল্লাহ তাঁকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন।
রিজিকের জন্য মানুষকে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং এই চেষ্টা-প্রচেষ্টায় আল্লাহকে ভয় করে চললে তিনি তাঁর বান্দাকে রিজিকদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। আর যে আল্লাহকে ভয় করে চলে সে কখনো হারাম পথে পা বাড়ায় না। এখানে বান্দার কর্তব্য হবে রিজিক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে আল্লাহর ওপর নির্ভর করা।
বান্দার কর্তব্য হবে শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর ইবাদত করা। বিশেষ করে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাতের মতো আবশ্যিক ইবাদত পালনে শৈথিল্য না করা। ব্যস্ততা দেখায়ে নামাযে বিলম্ব নয় বরং নামাযকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ পিছিয়ে দিতে হবে। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই মানুষগুলো দুনিয়ার জীবনে ছিলেন খুবই ব্যস্ত, কিন্তু এই ব্যস্ততা তাদের কোনো কাজে আসেনি। সব ধন-সম্পদ রেখে বড় অসহায়ের মতো খালি হাতে বিদায় গ্রহণ করতে হয়েছে। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি তাঁর মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান।
খতিব মহোদয় হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, যারা আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর ইবাদত করে আল্লাহ তাদের অন্তরে প্রাচুর্যতা দান করেন। আর্থিক দারিদ্র দূর হলেও মনের দারিদ্র দূর হয় না। মনের দারিদ্র দূর হয় ইবাদতের দ্বারা। তাই যারা মনের দারিদ্রে ভোগে তাদের চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই। অঢেল ধনসম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও সে অতৃপ্ত থাকে এবং অতৃপ্তি নিয়েই আল্লাহর কাছে ফিরে যায়।
ঈমান, তাকওয়া, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ও তাঁর ইবাদতের মধ্য দিয়ে আল্লাহর প্রিয়ভাজন বান্দা হওয়ার তাওফিক চেয়ে তিনি তাঁর আলোচনা সমাপ্ত করেন।
শ্রুতিলিখনে-
প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী, উপাধ্যক্ষ (অব), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment