মানুষে
মানুষে বৈষম্য অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। বিভিন্ন পেশা, শ্রেণী, ভাষা, লিঙ্গ,
বর্ণ নানা কারণে বৈষম্য লক্ষণীয়। ইসলাম সকল প্রকার বৈষম্য অস্বীকার করে ঘোষণা করে। মানুষ
কেউ কারো দাসও নয় আবার প্রভুও নয়। সকল মানুষ সমান-এক আল্লাহর দাস এবং আদমের সন্তান।
আর আদম মাটির তৈরী।
ইসলাম
পূর্ব যুগে শ্রমজীবী মানুষ ও নারীসমাজ ছিল সবচেয়ে উপেক্ষিত। সমাজে চালু ছিল দাসপ্রথা
এবং পণ্য হিসেবে তারা গণ্য হত। হাটে-বাজারে গরু-ছাগলের মত তারাও বেচা-কেনা হত। মাঠে
কাজ করার সময় তাদের পায়ে শিকল বেঁধে দেয়া হত, যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে।
মেহনতি
মানুষের জন্য শুধু ততটুকু খাবার থাকতো যতটুকু তাদেরকে জীবিত ও পরিশ্রমের উপযোগী রাখার
জন্য প্রয়োজন হত। তাদের কাজে সামান্য ভুলের জন্য পশুর মত চাবুক মারা হত। বাসস্থানের
ভালো ব্যবস্থা থাকতো না এবং অসুস্থ হলে চিকিৎসারও কোন সুযোগ থাকতো না।
এমন
কি তলোয়ার ও বর্শা হাতে দাসদেরকে প্রভুর আঙিনায় লড়াই করার জন্য লাগিয়ে দিত। খেলার চরম
মুহূর্তে কোন দাস তার ভাইকে হত্যা করলে উপস্থিত সকলে হাততালি, অট্টোহাসি ও আনন্দ-উল্লাস
সহকারে হত্যাকারীকে বাহবা জানাত। প্রভুরা দাসদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা, দন্ডদান ও শোষণ-শাসন
করার একক অধিকার লাভ করেছিল।
সকল
দেশে সকল যুগে একই চিত্র লক্ষণীয়। প্রাচীন মিশরে রাজা-বাদশাহদের সমাধি (পিরামিড) তৈরীতেই
কেবল তাদেরকে ব্যবহার করা হত না বরং রাজা-বাদশাহদের মৃত্যুর পর যাতে তাদের কষ্ট না
হয় সেজন্য বাদশাহর চাকরদেরকে হত্যা করে তাদের সঙ্গী করে দেয়া হত।
আজও
যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখবো শ্রমজীবী মানুষ নানাভাবে নিপীড়িত-নির্যাতিত হচ্ছে।
বিশেষ করে গৃহকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের নানা অত্যাচারের কাহিনী প্রতিনিয়তই আমরা শুনতে
পাই। এ ছাড়াও দেশের গার্মেন্টস শিল্পসহ নানা প্রতিষ্ঠানে বেতন ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে
রয়েছে বিরাট বৈষম্য।
এর
ফলে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে রয়েছে ঘৃণা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার মনোভাব এবং এই শ্রম অসন্তোষের
ফলে উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
যে
প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয় সে প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ
করতে তাদের একটুও বাধে না। অবশ্য এর পেছনে কুচক্রি মহলের ইন্ধনও অনেক সময় কাজ করে।
আমাদের
মনে রাখা দরকার শ্রমিককে ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রদান করলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা আবার
আমাদের নিকট ফিরে আসে। কারণ একজন শ্রমিক শুধু উৎপাদনেই সহায়তা করে না বরং উৎপাদিত জিনিস
ভোগ করেও সহযোগিতা করে। শ্রমজীবী মানুষের ভোপ্রবণতা বেশি হওয়ায় তাদের হাতে অর্থ আসলে
সামগ্রিক চাহিদা বোড়ে। এর ফলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ে এবং দেশ দ্রুত সমৃদ্ধির দিকে
এগিয়ে যায়।
মহানবী
(সাঃ)-এর আগমনের পর মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষের পরিবর্তে এক সৌভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক
গড়ে উঠে। বৈষম্যের সকল দেয়াল ভেঙ্গে দিয়ে তিনি ঘোষণা করেন ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ,
মালিক-শ্রমিক, আরবীয়-অনারবীয় সকলেই সমান ও পরস্পরের ভাই। শ্রেষ্ঠত্ব হলো কেবল নীতির
ভিত্তিতে অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে বেশি নীতিবান (তাকওয়ার অধিকারী)’।
সর্বপ্রকার
জুলুমের তিনি অবসান ঘটান। তিনি ঘোষণা করেন, ‘তোমাদের মধ্যে
ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার অধীনস্থদের নিকট উত্তম’। তিনি আরো জানান,
‘যার হাত ও মুখের
অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয় সে মুমিন নয়’।
নারী
জাতির প্রতি বৈষম্যের অবসান কল্পে তিনি বলেন, ‘তাদের উপর তোমাদের
যেমন অধিকার, তোমাদের উপরেও তাদের সম অধিকার’। তিনি আরও ঘোষণা
করেন, ‘তোমাদের মধ্যে
ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম’।
কায়িক
ও মানসিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে কোন উৎপাদনশীল কাজ করাকে বলা হয় শ্রম। আর যারা শ্রম দান
করে বা বিক্রি করে তাদেরকে বলা হয শ্রমিক। ইসলামী অর্থনৈতিক ফিকহের ভাষায়-‘দেহ ও মনের তৎপরতাই
শ্রম’।
কৃষি,
শিল্প ও খনিতে (বস্তুগত উৎপাদন) নিয়োজিত এবং অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বাসা-বাড়ীসহ
বিভিন্ন সেবাখাতে নিয়োজিত কাজকর্মকে আমরা শ্রম হিসেবে বিবেচনা করি। ইসলাম সকল ধরনের
শ্রমকে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে।
ইসলামের
নবী কোন কাজকেই ঘৃণা করেননি। তিনি নিজে ছাগল চরাতেন। শ্রমের বিনিময়ে উপার্জনকে তিনি
শ্রেষ্ঠতম উপার্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবীর উপার্জনই
শ্রেষ্ঠতর যদি সে সৎ উপার্জনশীল হয়’। তাঁকে জিজ্ঞাসা
করা হলো, ‘কোন ধরনের উপার্জন শ্রেষ্ঠতর’? তিনি জবাব দিলেন,
‘নিজের শ্রমলব্ধ
উপার্জন’।
তিনি
বলেন, ‘নিজের পরিজনের
নিমিত্তে হালাল উপার্জনে ব্যাপৃত থাক, কেননা এ নিশ্চয়ই আল্লাহর রাহে জেহাদ করার মতই’। তিনি আরো বলেন,
‘যে ব্যক্তি শ্রমজনিত
কারণে ক্লান্ত সন্ধ্যা যাপন করে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই তার সন্ধ্যা অতিবাহিত করে’।
আর
আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘যখন ফরজ নামায তোমাদের শেষ হয়ে যায় তখন
তোমরা আল্লাহর যমীনে ছড়িয়ে পড় আর আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশে ব্যাপৃত থাক’। ভিক্ষাবৃত্তিকে
আল্লাহর রসুল (সাঃ) খুবই ঘৃণা করতেন।
তিনি
বলতেন, ‘যে ব্যক্তি আমার
সাথে ওয়াদাবদ্ধ হবে যে, সে কোন দিন ভিক্ষা করবে না, তার জান্নাত লাভের দায়িত্ব আমি
নিলাম’। তিনি ভিক্ষালব্ধ
খাদ্যকে অগ্নিদগ্ধ পাথর বলে অভিহিত করেছেন। বদনসীব আমাদের। তাঁর উম্মত দাবি করা সত্ত্বেও
জাতিগতভাবে আজ আমরা ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হয়ে পড়েছি।
ইসলামে
সকল ধরনের শ্রমকেই সম্মান দেয়া হয়েছে। হাদিসে শ্রমদ্বারা উপার্জনকারী ব্যক্তিকে আল্লাহর
বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলাম শ্রমকে উৎপাদন ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়
উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে একজনের পুঁজি ও অন্য জনের শ্রমকে একত্র
করে পাস্পরিক চুক্তিভিত্তিতে লভ্যাংশ বন্টন করে নেয়াকে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে।
একে
বলা হয় মুদারাবা ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে শ্রম-মালিক ও পুঁজি-মালিক উভয়ই উৎপাদনে মালিক
হন। এছাড়া মজুরীভিত্তিতে নিয়োগও অনুমোদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মজুরী নির্ধারণের ক্ষেত্রে
যোগ্যতার পাশাপাশি শ্রমিকের প্রয়োজনের প্রতিও দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে।
আল্লাহর
রসুল (সাঃ) বলেন, ‘তোমাদের অধীনস্থরা তোমাদের ভাই, তোমরা
যা খাবে তাদেরকে তাই খেতে দিবে, তোমরা যা পরিধান করবে তাদেরকে তাই দিবে’। ভাইয়ের সম্পর্ক
বিবেচনা করলে আর শোষণের প্রশ্ন উঠে না। খাওয়া-পরার ক্ষেত্রে ইসলাম মালিক-শ্রমিকের একই
মান বিবেচনা করে ন্যুনতম মজুরী এমন পরিমাণ নির্ধারণ করতে বলে যাতে সে সন্তোষজনক জীবন
পরিচালনা করতে পারে।
পারিশ্রমিক
প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব ও হয়রানিকে কঠোর ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে। রসুল (সাঃ) বলেছেন,
‘শ্রমিকের গায়ের
ঘাম শুকাবার পূর্বেই তার পারিশ্রমিক প্রদান কর’।
তিনি
আরো বলেন, ‘যে কোন মজুরকে খাটিয়ে নিজের পুরোপুরি কাজ আদায় করে
নেয় কিন্তু তার মজুরী দেয় না কিয়ামতের দিন আমি তার দুশমন হব। আর আমি যার দুশমন হব তাকে
আমি লাঞ্ছিত ও বিপদগ্রস্ত করেই ছাড়বো।’
রসুল
(সাঃ) যখনই শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক বিষয়ে কথা বলতেন তখনই তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন
আর বলতেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করে তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ এদেরকে
তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন’।
মালিককে
সাবধান করে দিয়েছেন এই বলে, ‘তোমরা প্রত্যেকেই এক একজন দায়িত্বশীল।
আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’। ইসলাম মালিকদেরকে
শ্রমিকের সমস্যা বিবেচনার ক্ষেত্রে তাদেরকে আল্লাহর বান্দাহ, প্রতিনিধি ও বন্ধু হিসেবে
বিবেচনা করতে বলে।
রসুল
(সাঃ) বলেন, ‘তাদের উপর এমন কাজের বোঝা চাপিয়ে দিও না যা অত্যন্ত
কষ্টকর। অগত্যা যদি করতেই হয়, তবে নিজে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে তাদেরকে সাহায্য কর’।
নবী
(সাঃ) আরো বলেন, ‘তোমরা অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে
এবং তাদেরকে কোন কষ্ট দিবে না। তোমরা কি জান না, তোমাদের ন্যায় তাদেরও একটি হৃদয় আছে।
ব্যথা দানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্ট বোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়।
তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন কর না’।
রাসূল
(সাঃ) বলেন, ‘মজুর-চাকরদের অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্তের লক্ষণ। তাদের
অপরাধ প্রত্যেক দিন সত্তর বার হলেও ক্ষমা করে দিও’। শ্রমিকদের প্রতি
মালিকের দায়িত্ব প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের কোন ভৃত্য
তোমাদের জন্য যখন খাদ্য প্রস্তুত করে নিয়ে আসে, তখন তাকে হাতে ধরে খেতে বসাও। সে যদি
অস্বীকার করে তবে দু‘ এক মুঠো খাদ্য তাকে অবশ্যই দিবে’।
মৃত্যুর
সময় রসুল (সাঃ)-এর মুখ দিয়ে যে শব্দ বেরিয়ে আসছিল তা ছিল-‘নামাযের প্রতি
খেয়াল রাখ আর যারা তোমাদের অধীন তাদের অধিকার ভুলে যেও না’।
পুঁজিবাদী
অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রমিককে একজন অর্থনৈতিক জীব হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার কাছ
থেকে বাড়তি উৎপাদনের মাধ্যমে কিভাবে মুনাফার অংক স্ফীত করা যায় সেদিকেই দৃষ্টি থাকে
মালিকের। ফলে শ্রমিক-মালিকের পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি সৎ গুণাবলীর
সমাবেশ না হয়ে সৃষ্টি হয় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা।
অথচ
ইসলাম ভাইয়ের সম্পর্ক উল্লেখ করে মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার
জন্য উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইতোপূর্বে আমরা শ্রমিকের প্রতি
মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য উল্লেখ করেছি। এখন আমরা শ্রমিকের কর্তব্য নিয়ে আলোচনা করবো।
ইসলামের
দৃষ্টিতে একজন শ্রমিক কেবল তার উদর পূর্তির জন্যই মালিকের কাজ করবে না বরং তার আখেরাতের
সাফল্য এর মধ্যে নিহিত রয়েছে। সে তার মালিকের কাজ পূর্ণ বিশ্বস্ততা ও শক্তিসামর্থ্যকে
পরিপূর্ণভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘সর্বোত্তম শ্রমিক
সেই যে শক্তিশালী ও আমানতদার’-কাসাস ২৬।
নবী
(সাঃ) বলেন, ‘যার মধ্যে আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই’। মালিকের সম্পদ
রক্ষণাবেক্ষণ করা, অপচয় না করা, আত্মসাৎ না করা, সঠিক হিসাব পেশ করা একজন শ্রমিকের
দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রসুল (সাঃ) বলেন, ‘কাউকে কোন ব্যাপারে
দায়িত্ব প্রদান করা হলে সে তার নিজের কাজ যত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করে
তার উপর অর্পিত দায়িত্ব তদ্রুপ না করলে কিয়ামতের দিন তাকে উল্টা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ
করা হবে’।
তিনি
আরো বলেন, ‘কারো উপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হলে সে যদি এক টুকরো সূতা
বা তার চেয়েও কোন ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তবে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে
সে উত্থিত হবে’।
আল্লাহপাক
বলেন, ‘এদেরকে বেদনাদায়ক
শাস্তি প্রদান করা হবে যারা তাৎফিক অর্থাৎ মাপে কম-বেশ করে। নিজের হক নেবার সময় পুরোপুরি
আদায় করে নেয় কিন্তু অন্যকে মেপে দিতে গেলেই কম দেয়’-মুতাফ্ফিফীন
১-৩।
তাৎফিক
অর্থে ঐ সমস্ত মজদুরকেও বলে যারা নির্ধারিত পারিশ্রমিক পুরোপুরি উসুল করেও কাজে গাফেলতি
করে। আজকে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে বাস্তবে আমরা কি দেখছি। আমাদের আচরণ দেখে
মনেই হয না যে আমরা বিশ্বাসী জাতি।
আজ
মালিকের বিরুদ্ধে শোষণের অভিযোগের পাশাপাশি শ্রমিকের দায়িত্ব অবহেলা ও গাফেলতির অভিযোগ
এবং সাথে সাথে রয়েছে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ-সংশয়। গার্মেন্টস শিল্পে এই সন্দেহ-সংশয়ের
কারণেই কারখানার অধিকাংশ গেট বন্ধ রাখে যার ফলে কোন সময় অগ্নিকান্ড ঘটলে অনেক হতাহতের
ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে
মালিকের প্রতি শ্রমিক পোষণ করে ঘৃণা ও বিদ্বেষ এবং শ্রমিকের প্রতি মালিক পোষণ করে সন্দেহ
ও অবিশ্বাস। ইসলামের উপর উভয়ে প্রতিষ্ঠিত না থাকায় আজকের এই পরিণতি। অথচ ইসলাম উভয়ের
মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্কের কথা বলেছিল। একজন শ্রমিক তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের
মাধ্যমে শুধু ন্যায্য পারিশ্রমিকই নয় বরং সাথে সাথে লাভ করতে পারতো আল্লাহর সন্তুষ্টি
ও জান্নাতের সুসংবাদ।
রসুল
(সাঃ) বলেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকদের দ্বিগুণ সাওয়াব দেয়া হবে। তাদের
একজন সেই যে নিজের মালিকের হক আদায় করে এবং সঙ্গে আল্লাহর হকও’। তিনি আরো বলেন,
‘যে অধীনস্থ খাদেম
আল্লাহ ও তার মালিকের অনুগত থেকে দায়িত্ব পালন করে তাকে মালিকের সত্তর বছর পূর্বে বেহেশ্তে
প্রবেশ করানো হবে’।
ইসলাম
শুধু শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কথাই বলে না বরং সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সুসম্পর্ক
প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতার পরিবর্তে সৌহার্দ-সম্প্রীতি
গড়ে তুলতে চায়।
ইসলামের
দৃষ্টিতে সকলের ¯স্রষ্টা ও রব এক আল্লাহ এবং সকলের পিতা এক আদম (আঃ)। এই সম্পর্কের
ভিত্তিতে গড়ে তুলতে চায় বিশ্বভ্রাতৃত্ব। এটা তখনই সম্ভব যখন বিশ্বের মানুষ তাদের জীবনব্যবস্থা
হিসেবে ¯স্রষ্টার দেয়া বিধান পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে নেবে।
আর
এ বিধান কায়েমের দায়িত্ব দিয়েই আল্লাহপাক যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রসুল প্রেরণ করেছেন
এবং তারই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী হলেন আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সাঃ)। নবীর উত্তরসূরী
হিসেবে এ দায়িত্ব এখন আমাদেরই।
আর
ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শ্রমিক-মালিক, নারী-শিশু-পুরুষ সর্বশ্রেণীর মানুষ পাবে তাদের
অধিকার, দূর হবে সকল প্রকার অশান্তি ও হানাহানি এবং বিশ্বব্যাপি প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি
ও নিরাপত্তা।
Comments
Post a Comment