হজ্ব একটি অপরিহার্য ইবাদত; ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ। যার উপর হজ্ব ফরজ সে যদি তা সম্পন্ন না করে তবে এটা তার জন্য কুফরিরই শামিল। তাই সামর্থবান মুসলিম নর-নারী প্রতি বছর হজ্ব পালনের লক্ষ্যে পবিত্র ভূমি মক্কায় সমবেত হন। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বিপুল পরিমান ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ্ব পালন করে থাকেন। এ বছরের হজ¦ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ১০,০০০ এবং বাকি বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমেসহ সর্বমোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের এ বছর হজ্বে যাওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ১৭ হাজার ১৯৮ জন বেশি। সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে- সর্বনি¤œ ২ লাখ ৭৯ হাজার এবং অপরটি ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। কুরবানি বাবদ ৯,৪৫০ টাকা পৃথকভাবে সঙ্গে নিতে হবে। সর্বনি¤œ ঠিক রেখে বেসরকারি এজেন্সিসমূহ পৃথকভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে। গত বছর সস্ত্রীক হজ্বে যওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমরা বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে গিয়েছিলাম। শুনেছি সরকারিভাবে মাত্র দশ হাজারের কৌটাও পূরণ হয়নি। বেসরকারি এজেন্সিসমূহ মূলত ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে এ কাজটি করে থাকে। কিন্তু সরকারের ব্যবসা নয়, সেবাই মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সরকারি অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মত হজ্বযাত্রী নেয়ার ক্ষেত্রেও তেমন আস্থা তারা অর্জন করতে পারেনি। আজকে হজ্বের তাৎপর্য আলোচনা না করে আমার কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরবো।
বাংলাদেশে সাধারণত একটু পরিণত বয়সেই মানুষ হজ্বে যায়। চাকুরীজীবীরা চাকুরী শেষে এবং ব্যবসা-বণিজ্য বা কৃষিকাজের সাথে সংশ্লিষ্টরা সংসারের দায়িত্ব পালন থেকে অবসর নিয়ে হজ্বে যেয়ে থাকেন। হজ্ব একটি আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। হজ্বের শর্ত হলো শারীরিক সক্ষমতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্থাৎ মক্কা শরীফ সফর ও হজ্বের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার মত শারীরিক সামর্থ এবং তার অনুপস্থিতিতে সংসারের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর পর মক্কা-মদীনায় কমপক্ষে দেড়মাস অবস্থান ও আসা-যাওয়ার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে একজন নর বা নারীর জীবনে একবার হজ্ব করা ফরজ। একজন ব্যক্তি বয়োপ্রাপ্ত হলে তার উপর নামায ও রোযা ফরজ হয় এবং নেছাব পরিমান সম্পদের অধিকারী হলে যাকাত ফরজ হয়। এখানে বিলম্ব করার কোন সুযোগ নেই। হজ্বের বিষয়টিও তেমনি। হজ্বের শর্ত পূরণ হওয়ার সাথে সাথে একজন ব্যক্তির উচিত অবহেলা না করে ফরজ কাজটি সম্পন্ন করা। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত এজন্যই ফরজ করা হয়েছে যাতে মানুষ সার্বক্ষণিক আল্লাহর গোলামীর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে। কবুল হজ্ব একজন মানুষকে সদ্যজাত শিশুর মত নিস্পাপ করে দেয়। তার মধ্যে আল্লাহর ভয় ও মুহাব্বত এমনভাবে জাগরুক হয় যাতে সে বাকী জীবনটা আল্লাহর নাফরমানি থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে সৎ জীবন যাপন করতে পারে। ফলে অল্প বয়সে একজন ব্যক্তি হজ্ব সম্পন্ন করে কর্মময় জীবনে আবার ফিরে আসলে সমাজ তার দ্বারা উপকৃত হতে পারে। কিন্তু উপমহাদেশীয় হজ্বযাত্রীদের মধ্যে বৃদ্ধ লোকের আধিক্য একটু বেশি লক্ষ্য করলাম। এ সব বৃদ্ধ লোকদের মধ্যে হজ্ব ফরজ নয় এমন গরীব লোকও আছে যারা জমি বা কোন সম্পদ বিক্রি করে গেছেন। ধর্মপ্রাণ মানুষ বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে বন্ধু-বান্ধব বা বেসরকারি হজ্ব এজেন্সির লোকজন উদ্বুদ্ধ করেন ১০ কাঠা জমি বিক্রি করলেই তো আপনার হজ্বের টাকা হয়ে যায়; তাহলে হজ্বে যাবেন না কেন। আমার প্রশ্ন- জমি বিক্রি করে একজন লোককে যাকাত দিতে না হলে কেন তাকে হজ্বে যাওয়ার জন্য জমি বিক্রি করতে হবে। আবার অনেক সময় দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে উপার্জন করে তাদের একটু স্বচ্ছলতা আসলে সামাজিক মর্যাদার লক্ষ্যে বৃদ্ধ বাবা-মাকে হজ্বে পাঠান। ছেলে-মেয়েদের সামর্থ হলে কর্তব্য হবে তাদের নিজেদের ফরজ হজ্ব প্রথমে আদায় করা। পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ছেলে-মেয়ের কিন্তু সৌখিনভাবে হজ্ব করানোর দায়িত্ব সন্তানের নয়। হজ্ব ফরজ হলে ইমাম আবু হানিফার মতে তাৎক্ষণিক তা আদায় করা উত্তম এবং হাদীসের বক্তব্যও এমনটি [ইবনে আব্বাস (রা;) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা:) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ্ব করার সিদ্ধান্ত নেয়, তার তাড়াতাড়ি হজ্ব আদায় করা উচিত। কেননা কেউ রোগাক্রান্ত হতে পারে, অনেক সময় বাহন খোয়া যেতে পারে, কিংবা নতুন নতুন ব্যস্ততা দেখা দিতে পারে’-আহমদ, বায়হাকি, ইবনে মাজাহ]। তবে জীবনের যে কোন সময় আদায় করলে ফরজিয়াত আদায় হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শারীরিক অসুস্থতা বা আর্থিক অস্বচ্ছলতা দেখা দিলেও ফরজিয়াত রয়ে যাবে। এ সব ক্ষেত্রে বদলী হজ্বের সুযোগ রয়েছে। হজ্বে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের নিজেদের যেমন কষ্ট হয় সাথে সাথে যারা সঙ্গে যান তাদেরও কষ্ট। তাই সংসারের দায়িত্ব পালন থেকে অবসর গ্রহণের পর হজ্ব-এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হওয়া একান্ত দরকার।
গত বছর ০৫ আক্টোবর ২০১২ হজ্ব ক্যাম্প থেকে এহরাম বেঁধে বাংলাদেশ বিমানে আমরা যাত্রা করি। আমাদের যাত্রা শুরু থেকে মক্কায় পৌঁছা পর্যন্ত বেশ সুন্দর ছিল এবং বাংলাদেশ বিমানের আতিথেয়তাও ছিল চমৎকার। কিন্তু ফেরত আসাটা ছিল ভীষণ কষ্টের। ২০ নভেম্বর মাগরিব পড়ে আমরা রওয়ানা দিয়ে রাত ১০ টায় জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছি। ২১ তারিখ বিকেল ২.৩০ টায় সেখান থেকে যাত্রা করে রাত ১০টায় ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছি। লাগেজ ওজন এবং ইমিগ্রেশনে অনেক বিড়ম্বনা। বাংলাদেশ থেকে দূরে থাকলেও ঘুষ/বখশিস থেকে রেহাই নেই। ট্রলির লাগেজ জায়গামত পৌঁছাতে বিমানবন্দরে বাংলাদেশী কর্মীদেরকে দেয়ার জন্য আমাদের নিকট থেকে দুই রিয়াল করে চাঁদা তোলা হয়, আর যাদের লাগেজের ওজন বেশি ছিল ক্ষেত্র বিশেষ ১০ থেকে ১০০ রিয়াল পর্যন্ত তাদেরকে বখশিস দিতে হয়। বাংলাদেশ বিমানের ভাড়া করা ৭৮০ জনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশাল বিমানে কোন শৃঙ্খলা ছিল না। বিমানের টিকেটে আসন নম্বর দেয়া থাকলেও ঢাকার টাউন সার্ভিসের বাসের মত আগে এলে আগে পাবে ভিত্তিতে হুড়োহুড়ি করে সবাই উঠে। ঢাকা বিমানবন্দরে আর এক বিড়ম্বনা। লাগেজ পেতে বিলম্ব এবং জমজমের পানি নেয়ার জন্য আমাদের কুপন দেয়া হলেও বিমান কর্তৃপক্ষ হাজী সাহেবদের শক্তিপরীক্ষার এক মহড়ার আয়োজন করেছিল। বেল্টে ২/৪টা করে পানির জার ছেড়ে দিলে মানুষ লড়াই করে তা সংগ্রহ করতেছিল এবং কেবল শক্তিমানদেরই ভাগ্যে জুটছিল। কুপন আমাদের পকেটেই রইল এবং অনেক পরে অন্যত্র থেকে পানি নিয়ে রাত ২ টায় মিরপুর বাসায় পৌঁছেছিলাম। যাওয়ার সময় বিমান কর্তৃপক্ষ দক্ষতার পরিচয় দিলেও আসায় সময় চরম অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছিল। এমনিতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন সুখ্যাতি আমাদের নেই এবং বাংলাদেশ বিমানের অনেক বদনাম বিশেষ করে সময়ানুবর্তিতার ব্যাপারে অভিযোগ বেশ শুনেছিলাম। হজ্ব শেষে ফেরত আসার সময় সে প্রমাণই পেলাম।
পবিত্র মক্কা ও মদীনায় আমাদের অবস্থান ছিল দেড়মাস। প্রথমে মক্কায় মিসফালায় আমাদের আবাসস্থান ছিল এবং সেটা কাবার মোটামুটি নিকটবর্তীই বলা যায়। আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায কাবায় পড়ার সুযোগ হত। একদিন আমরা কয়েকজন আছরের নামাযে জামাত মিস করে আশে-পাশে কয়েক মসজিদ ঘুরে সব মসজিদ বন্ধ পাই; ফলে নিজেদের রুমে এসে নামায আদায় করতে হয়। সেখানে নামাযের ব্যাপারে সকলেই খুব আন্তরিক এবং আযান হওয়ার সাথে সাথে সবাই ছুটে আসে মসজিদ পানে। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে নামায শেষে মসজিদগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ১০ নভেম্বর আমাদেরকে মদীনায় নিয়ে আসা হয় এবং হযরত বিলাল (রা:) মসজিদ থেকে সামান্য দূরে রাখা হয়। সেখান থেকে আমরা নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে নববীতে আদায় করতে পারি। হাজ্বী সাহেবদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সৌদী সরকারের এবং শৃঙ্খলা বিধানের ক্ষেত্রে সৌদী পুলিশের প্রশংসা করতেই হয়। তাদের হাতে কোন লাঠি বা অস্ত্র নেই অথচ সবাই তাদেরকে ভয় ও শ্রদ্ধা করে। তারা উৎপীড়ক নয় বরং মানুষের বন্ধু। ২১ অক্টোবর পুনরায় আমাদেরকে মক্কায় আনা হয় এবং কাবা থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূরে আল জাহেরে ছিল আমাদের অবস্থান। মিনা, আরাফা, মুজদালাফা ও জামারায় হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বাড়ী ফেরা পর্যন্ত আমাদেরকে আল জাহেরেই অবস্থান করতে হয়। মিনায় শীতাতপনিয়ন্ত্রিত তাঁবু, আরাফায় থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং জামারায় পাথর ছোঁড়ার নিরাপদ ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু সমস্যা হয়েছিল মুজদালাফায় যাওয়া। হজ্ব এজেন্সির পক্ষ থেকে মুজদালাফায় যাওয়ার পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদেরকে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় শুধু মহিলাদের বাসে উঠিয়ে দিয়ে পুরুষরা ছাদে যাওয়ার। কিন্ত অভ্যস্ত না হওয়ায় আমাদের কয়েকজনের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় পৃথক বাসে কোন রকমে উঠতে হয়। আমার স্ত্রীসহ মূল কাফেলা থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। শেষ পর্যন্ত কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (অব:) প্রফেসর মুহ: ইদ্রিস আলী এবং আমি দুজন পথিমধ্যে ঘন্টা খানেক বিশ্রাম নিয়ে সারা রাত শুধুই হেঁটেছি এবং মিনায় ফেরত আসতে চাইলে মিনার সব পথ বন্ধ পাই। প্রচন্ড ভীড় ও প্রখর রৌদ্রে জামারার দিকে চলতে যেয়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং বিশ্রামরত অবস্থায় এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। মাথায় পানি দেয়ার পর একটু সুস্থতা এবং দুপুর পরে মিনার দিকে পথ খুলে দেয়ার পর আছরের মুহূর্তে তাঁবুতে ফিরতে পারি। আমি এত অসুস্থ হয়ে পড়ি যে আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। কাফেলার সাথে আমাদের পাথর নিক্ষেপ এবং তাওয়াফ করা আর সেদিন সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমার মেয়ে-জামাই আমাদের পক্ষে পরপর দুদিন পাথর মেরে দেয়। হজ্বের সমগ্র সফর নিরাপদ করতে পারলেও এই একটি ক্ষেত্রে সউদী সরকারের চরম ব্যর্থতা লক্ষ্য করলাম। সেখানে শৃঙ্খলার ঘাটতির সাথে সাথে মুয়াল্লিমদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিও বহলাংশে দায়ী। আল্লাহর ইবাদত পালন করতে যেয়ে মানুষ এতখানি বিপদগ্রস্ত হবে বা মারা যাবে ফিতরাতের ধর্ম ইসলামে সেটা হতে পারে না। ফলে মুয়াল্লিমদের এব্যাপারে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার দরকার। একজন ব্যক্তিকে পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার হজ্বে যাওয়ার অনুমতি না দেয়ার সৌদী সিদ্ধান্ততে স্বাগত জানাই। হজ্বের জন্য যেহেতু শারীরিক সক্ষমতার প্রশ্ন রয়েছে এবং বদলী হজ্বের সুযোগ রয়েছে সেহেতু ষাটোর্দ্ধ বয়সের লোকদের হজ্বের অনুমতি দানের ক্ষেত্রে একটু যাচাই-বাছাই দরকার।
হজ্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর বাকী সময়টা কাবা থেকে বেশ দূরে অবস্থানের কারণে এজেন্সির প্রতি ছিল সবাই ক্ষুব্ধ। কাবা শরীফ যাতাযাতের জন্য গাড়ীর ব্যবস্থা থাকলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামায কাবায় যেয়ে আদায় করা ছিল বেশ কঠিন। সাধারণত আমরা আছরের পূর্বে যেয়ে এশা পড়ে ফেরত আসতাম। কোন দিন যেতে না পারলে সেদিন দ্বীনি আলোচনা করে আমরা সময় কাটাতাম। চমৎকার মসজিদ নিকটেই ছিল এবং ইমাম সাহেব ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানি। মাঝে-মধ্যে তিনি আলোচনা করতেন এবং বাংলাদেশী ছাত্র তা মাঝে-মধ্যে অনুবাদ করে আমাদের শোনাতেন। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে ইমাম সাহেবের উচ্চ ধারণা ছিল। দেড়মাস সেখানে অবস্থান এবং গ্রান্ড মুফতি আব্দুল্লাহ বিন বাজের লেখা রসুল (সা:)এর নামায বইটি আমাকে নামাযের মধ্যে প্রাণ খুঁজে পেতে বেশ সাহায্য করেছে। নামাযের মধ্যে বিশেষ করে শেষ বৈঠকে ও সেজদার মাঝে আল্লাহর কাছে চাওয়াতে আমি বেশ তৃপ্তি পাই। ফরজ নামায শেষে মক্কা-মদীনায় কোন মোনাজাত না করায় আমি নিজেও তা ত্যাগ করেছি। বাজের বই পড়ে এবং বাড়ী এসে বোখারী শরীফে দেখার পর রাফে ইয়াদাইন ও মসজিদে প্রবেশ করে দু রাকাত নামায আদায় শুরু করেছি।
সৌদীদের আতিথেয়তার ব্যাপারে বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। হাজীদেরকে আল্লাহর মেহমান হিসাবেই তারা বিবেচনা করে এবং মক্কা, মদীনা ও আরাফায় প্রচুর পরিমানে পানি, খেজুরসহ বিভিন্ন ফল ও শুকনা খাবার বিতরণ করে। আমাদের দেশের যারা সেখানে অবস্থান করছে তাদের মধ্যেও কমবেশি সে গুণ অর্জিত হয়েছে। সামান্য পরিচয়ের সূত্রে মক্কা, মদীনা ও জেদ্দা বিমানবন্দরে অনেকে আমাদেরকে আপ্যায়িত করেছে। আমাদের কাফেলার ৭/৮ জনসহ একদিন রাত্রে ভেড়ামারার রিজু নামে এক ছেলে তার বন্ধুরাসহ ৫০/৬০ জনের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিল। এরা নাকি প্রতি হজ্বেই এমনটি করে থাকে। রিয়াদে কর্মরত আমাদের এক সাথীর (মমতাজ ভাই) ভগ্নিপতি ঈদের গোশ বাসা থেকে রান্না করে এবং মক্কা থেকে রুটিসহ আনুষঙ্গিক সব সংগ্রহ করে আমাদের কাফেলার সকলকে (৬০ জন) আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেন। ভেড়ামারার আসাদ নামে আর একজন গাড়ীতে আমাদের চার জনকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখানোর সাথে বেশ আপ্যায়ন করে। মদীনায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কর্মরত আমাদের এলাকার ইকবাল নামে এক ছেলে তার হোটেলের খাবারের কিছু আইটেম নিয়ে আমাদের সাথে সাক্ষাত করে এবং সাতক্ষীরার আসাদ নামে একজন অনেক ফল-ফলাদিসহ আসে। জেদ্দা বিমানবন্দরে আমার এক মামাত ভাই প্রচুর খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দেখা করে। বিদেশের মাটিতে কর্মরত আমাদের এ সব তরুণদের আন্তরিকতা অনেকদিন মনে থাকবে।
Comments
Post a Comment