Skip to main content

দেশের আর্থিক অবস্থার হালচিত্র

 

ব্যক্তি হিসেবে আপনি যখন ক্রমাগত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তখন বুঝতে পারেন আপনার আর্থিক অবস্থা ক্রমাবনতি ঘটছে, দেশের অবস্থা ঠিক তেমনি। শেখ হাসিনার শাসনামলের শুরু এবং শেষ দেখি।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় দেশি-বিদেশি মিলে মোট ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। ঐ সময়ে দেশি ঋণের চেয়ে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল বেশি। 

২০১৭ (৮ বছর পর) দেশি-বিদেশি ঋণ ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ৮ বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা বেড়েছে। 

৬ বছর পর সেই ঋণ ৬ গুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। দেশি ১০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ মূলত ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ মূলত টাকা ছাপিয়ে প্রদান করা হয়। মুদ্রাস্ফীতি ১২% এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪%। নিশ্চয় আমাদের সরকারি ও বেসরকারি  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মুদ্রাস্ফীতির সাথে মিলিয়ে বাড়ে না।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি ঋণের সুদই ৯৩ হাজার কোটি টাকা। 

এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের বাইরে প্রধান ঋণদাতা দেশসমূহ :

১. জাপান : ৯.২১ বিলিয়ন ডলার 

২. রাশিয়া : ৫.০৯ বিলিয়ন ডলার 

৩. চীন      : ৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার 

৪. ভারত   : ১.০২ বিলিয়ন ডলার 

দাবি করা হয়, আমরা উন্নয়নের রোল মডেল। অথচ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কতো নাজুক। বোঝার জন্য অর্থনীতির ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। ঋণের বোঝা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপর চেপেছে। শেখ হাসিনা সরকার বড়ো বড়ো প্রকল্প গ্রহণে ছিল খুবই উৎসাহী। প্রকল্প শুরু হতো যে পরিমাণ বরাদ্দ নিয়ে শেষ হতো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়ে। মেগা প্রকল্প মানে মেগা দুর্নীতি। সংসদে একবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, পুকুর চুরি না সাগর চুরি হচ্ছে। শেখ হাসিনার আশেপাশে যারা সবাই দুর্নীতির সাথে জড়িত। তাঁর পিয়নও চারশ কোটি টাকার মালিক।

সরকারের কাছের লোকজন সবাই দেশটাকে লুটেপুটে খেয়েছেন। এক সালমান এফ রহমান জনতা ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং এস আলম গ্রুপ এক ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৭৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। সবকিছু ফতুর করে  দিয়েছে। অথচ এই ইসলামী ব্যাংক দেশসেরাই নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছিল একটি পজিশন। 

আমি বুঝেছি, শেখ হাসিনাসহ যারাই দুর্নীতির সাথে সম্পর্কিত কেহই পরকালে বিশ্বাসী নয় এবং সবার অবস্থান হবে জাহান্নাম। তওবা করে প্রায়শ্চিত্ত করলে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতেও পারেন। তবে খুব কঠিন। আমার নয়, আল্লাহ তায়ালাই বলেছেন। আপনি সুরা মাউন পড়ে দেখেন, যে ব্যক্তি ইয়াতিমের সাথে দুর্ব্যবহার করে ও মিসকিনকে খাবার দেয় না সে পরকালকে বিশ্বাস করে না। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, রাষ্ট্রীয় বা অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে যে ব্যক্তি এক টুকরো সূতা বা তার চেয়ে কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে, সে কিয়ামতের দিন খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে উত্থিত হবে। কিয়ামতের দিন দেখা যাবে কেউ পদ্মাসেতু, আবার মেট্রোরেল ঘাড়ে নিয়ে কেউ কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে যাচ্ছে। খেয়ানতকারীরা হবে দারুণভাবে লাঞ্ছিত, ঘৃণিত ও অপমানিত। 

এতকিছু জানার পরেও এই খুনি ও লুটেরাদের প্রতি যাদের সমর্থন রয়েছে তাদের হাশর কি ভিন্ন হবে না লুটেরাদের সাথেই হবে? রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সমাজে অন্যায় দেখলে তা হাত দিয়ে, সম্ভব না হলে কথা দিয়ে, তাও সম্ভব না হলে অন্তরে ঘৃণা করতে হবে। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর। এবার আপনিই বলেন, সেই জালেমের সহযোগী হয়ে আপনি কি জান্নাতের প্রত্যাশী হতে পারেন? আল্লাহ তায়ালা আমাদের উপলব্ধি দান করুন।

Comments