আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন, দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত- নিপীড়িত, তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য কর্মী গুম-খুন ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে, কেন্দ্রীয় অফিসসহ তাদের সকল অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে দেওয়া হয়নি। এমনকি শেষমহূর্তে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সবাই স্বীকার করবে যে, জামায়াত-শিবির ইতিহাসের জঘন্যতম জুলুমের শিকার। আমিরে জামায়াত বলেন, এতো কিছুর পরও দল হিসেবে জামায়াত প্রতিশোধ নেবে না। তারা ক্ষমা করে দিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হয়ে আইনের আশ্রয় নিলে জামায়াত তাদের সহযোগিতা করবে।
আমিরে জামায়াতের ক্ষমা ঘোষণার পক্ষে বিপক্ষে ফেসবুকে নানা মন্তব্য আসছে। কেহ পক্ষে বলছেন আবার কেহ বিপক্ষে। যারা পক্ষে বলছেন, তাদের মতে আমিরে জামায়াত উদারতা ও মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন এবং তিনি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। যারা ক্ষমা ঘোষণার বিপক্ষে বলছেন তাদের সদয় বিবেচনার জন্য আমার কিছু কথা।
জামায়াত-শিবির তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বলে থাকে, জমিনে দীন কায়েমের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং তারা আরো বলে, দীন কায়েমের মধ্য দিয়ে সকল জুলুম-নির্যাতনের আমরা বদলা গ্রহণ করবো ইন শা আল্লাহ। দীন কায়েম একান্তভাবে আল্লাহর, মানুষের সাধ্য নেই, এমনকি নবি-রসুলেরও নয়। মানবকূলের শিরোমণি রসুলদের সরদার বিশ্বনবি মুহাম্মদ সা.-কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেছেন, যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলো আর তুমি দেখলে দলে দলে লোকে আল্লাহর দীনের মধ্যে শামিল হচ্ছে (সুরা নসর)। সে সময়ে কোনো প্রতিশোধ নয়, বিজয়োল্লাসও নয়, বরং রসুল সা. -কে বলা হয় আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে ও বেশি বেশি করে তাঁর প্রশংসা করতে (সুরা নসর)। বিজয় আল্লাহপাকের অনুগ্রহ ও দান এবং মানুষ আল্লাহর সাহায্যকারী মাত্র। আল্লাহ যাদেরকে এই সুযোগ দান করেন তারা বড়োই ভাগ্যবান, তাদের সকল গুনাহের ক্ষমা ও জান্নাত দান আল্লাহপাকের পাকাপোক্ত ওয়াদা। আল্লাহর এ নির্দেশনা কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জন্য পালনীয় বিধান।
ইসলামী আন্দোলনে জুলুম-নির্যাতন স্বাভাবিক। ইসলামী আন্দোলনের দাবিই হলো বাতিল ব্যবস্থাপনার উপরে আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করে দেওয়া। আল্লাহপাক সকল নবি-রসুলকে সমসাময়িক স্বৈরশাসকের মোকাবেলায় প্রেরণ করেছেন। নমরুদ-ফেরাউন ও তাদের দলবল সকলেই ইবরাহিম আ. ও মুসা আ. এবং তাঁদের সঙ্গী-সাথিদের উপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন করেছে। সুরা বুরুজ ইসলামী আন্দোলনের সকল কর্মীর পড়া। আগুনের গর্তে ঈমানদারদের একে একে ছুঁড়ে মেরে কাফেরদের কী উল্লাস! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ঈমানদাররা নয় ধ্বংস হয়েছে গর্তওয়ালারা। আমরাও দেখেছি, ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে কাফেরদের কী উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ! জানাজা পড়তে দিতে ও লাশ দাফনেও নরপশুদের কতো আপত্তি! আল্লাহর ভাষায় বলতে হয়, তাদের কোনো অপরাধ নেই, ‘অপরাধ একটিই এবং তা হলো পরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন’ (সুরা বুরুজ)। কাফেরদের পরিণতিও আল্লাহপাক বলে দিয়েছেন, ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি’ (সুরা বুরুজ)। এসব ঈমানদাররাই আল্লাহপাকের যথার্থ প্রতিনিধি ও সাহায্যকারী। ঈমানদারদের উপর আঘাত ও তাদেরকে গালি দেওয়া কোনো সাধারণ অপরাধ নয় বরং তা তো আল্লাহর উপরই আঘাত এবং তাঁকেই গালি দেওয়া। এতকিছুর পরও একটু ভাবুনতো ‘অতঃপর তওবা করে না’- এই বাক্য দ্বারা আল্লাহপাক কী বুঝিয়েছেন? কাফেরদের একটি ক্ষীণ আশা এই বাক্যের মধ্যে রয়েছে। জালেমের আসল শাস্তি আখেরাতে এবং তা কতো ভয়াবহ আমাদের কল্পনারও বাইরে।
সমস্ত অন্যায় অপকর্মের হোতা শেখ হাসিনা ও তাঁর দল। শেখ হাসিনার সাথে মিলে তাঁর মন্ত্রী পরিষদ, সংসদ এবং দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি যে যতটুক অপরাধ সংঘটন করেছে তার শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকার নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করেছেন বা প্রক্রিয়াধীন। হ্যাঁ, এসব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে জামায়াত তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে। ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আল্লাহপাক প্রদত্ত। আল্লাহ বলেছেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়’ অর্থাৎ হত্যার বদলে হত্যা, কারো বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে তারও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া- অবশ্যই সেটা হতে হবে আদালতের মাধ্যমে। মজলুম প্রতিকার করতে গিয়ে জালেমের ভূমিকা অবলম্বন করবে সেটা হবে না। তবে আল্লাহর পছন্দ একটু ভিন্ন। ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়’- বাক্যের সাথেই বলা হয়েছে, ‘কিন্তু কেহ যদি ক্ষমা করে দেয় এবং সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়’। আল্লাহপাক তাঁর ক্ষমাকারী বান্দাকে কতো দেবেন তা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? প্রতিশোধপরায়ণতা ও হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের ক্রমাগত পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।
একটি সুন্দর সমাজ গড়ার জন্য উদারতা ও প্রশস্ততার কোনো বিকল্প নেই। নেলসন মেন্ডেলা যার জীবনটা কেটেছে শ্বেতাঙ্গদের জেলখানায়, সেই নেলসন মেন্ডেলা প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রথম ভাষণেই বলে দেন, কালো-ধলো নয়, আমরা সবাই আফ্রিকান। তিনি হয়ে যান বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক, পান নোবেল পুরস্কার। শুধু কী তাই? বেনজীর ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর পিতৃহত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ প্রশ্নে বলেছিলেন, জনগণ আমাকে বিজয়ী করে পিতৃহত্যার বদলা দিয়ে দিয়েছেন। যতদূর মনে পড়ে, শেখ হাসিনাও দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয় লাভের পর চীন মৈত্রী সম্মেলন কক্ষে তাঁকে দেওয়া সংবর্ধনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্ন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, জনগণ আমার প্রতি রায় দেয়াতে বিচার তো হয়েই গেছে। শেখ মুজিবের সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে অনেক জুলুম- নির্যাতন হয়েছে কিন্তু ঢাবির ছাত্র আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানসহ শেখ হাসিনা যাদেরকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করলেন তাদের বিরুদ্ধে বিচার তো দূরের কথা থানায় কোনো অভিযোগই দায়ের হয়নি। এমনকি তাঁর প্রথম মেয়াদেও (১৯৯৬-২০০১) কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা পর্যন্ত হয়নি। স্রেফ রাজনীতিক হীনস্বার্থে ভারতের প্ররোচনায় কতিপয় ইসলামের শত্রু বাম নাস্তিক ও ঘাদানিকরা শেখ হাসিনার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য শুধু জামায়াত নয় সকল ইসলামিক দল ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁকে দাঁড় করেছিল।
আমি আমার প্রবন্ধের শুরুতেই বলেছি, দীন প্রতিষ্ঠার যে কাজ তা একান্ত আল্লাহ তায়ালার। ঈমানদাররা তাঁর প্রতিনিধি ও সাহায্যকারী মাত্র। আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর প্রদর্শিত পথে মুমিনদের কাজ হলো মানুষকে আল্লাহর দীনের দিকে ডাকা। শেখ হাসিনার শাসনামলে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। বরেণ্য আলেমদের ঠিকানা হয়েছিল জেলখানায়। কয়েকজন মহিলা যদি বাসাবাড়িতে একসঙ্গে কুরআন-হাদিসের চর্চা করে সেখানেও পুলিশ ও দলীয় লোকেরা হাজির হয়ে বলেছে, নাশকতার উদ্দেশে একত্রিত হয়েছে। একজন বিশ্বাসী বান্দা হয়ে বলবো, জালেমের আজীবন ক্ষমতায় থাকার খায়েস ও দর্প চূর্ণ করে দেওয়ার মালিক মহান আল্লাহ। শেখ হাসিনা কতবড় সুরক্ষায় ছিলেন একটু ভাবুন তো। তাঁর সাজানো সেনাবাহিনী, প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, দলীয় ক্যাডার, উপদেষ্টাবৃন্দ এবং পার্শ্ববর্তী দেশ- কোনকিছুই তাঁকে সুরক্ষা দিতে পারেনি। কোটা সংস্কার দাবিতে একদল তরুণের আন্দোলন মোকাবেলায় শেখ হাসিনা একের পর এক ভুল করেছেন অথচ তরুণরা অত্যন্ত বিচক্ষণতা ও পরম ধৈর্যের সাথে অবিচলভাবে এগিয়ে যান। মাত্র কয়দিনের আন্দোলন- সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার এমন করুণ পরিণতি- বলতেই হয়, আল্লাহপাকের এ এক নিদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁর বাণী, ‘বলো, হে আল্লাহ! তুমি রাজত্বের মালিক, যাকে চাও রাজত্ব দান করো, আর যার থেকে চাও রাজত্ব কেড়ে নাও এবং যাকে চাও সম্মান দান করো। আর যাকে চাও অপমানিত করো, তোমার হাতেই কল্যাণ, নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান ’- সুরা আলে ইমরান ২৬।
শেখ হাসিনার জুলুম-নির্যাতন যখন (আয়নাঘরে বছরের পর বছর পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক শাস্তিপ্রদান, গুম-খুন, বিচারিক হত্যাকাণ্ড) চরম সীমালঙ্ঘন করে, তা প্রতিরোধ করা বা জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কোনো সুযোগ থাকে না তখন আল্লাহ তায়ালার দায়িত্ব হয়ে পড়ে তা প্রতিরোধ করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাকের বাণী, ‘আমি সংকল্প করেছিলাম, যাদেরকে পৃথিবীতে লাঞ্ছিত করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবো, তাদেরকে নেতৃত্ব দান করবো, তাদেরকে উত্তরাধিকার করবো এবং পৃথিবীতে তাদেরকে কর্তৃত্ব দান করবো’- সুরা ক্বাসাস ৫-৬। তিনি আরো বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ লোকদেরকে একের মাধ্যমে অন্যকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে যেখানে আল্লাহর নাম বেশি করে উচ্চারণ করা হয় সেসব আশ্রমে, গির্জা, ইবাদতখানা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হতো। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা তঁকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বড়ই শক্তিশালী ও পরাক্রান্ত’- সুরা হজ ৪০। শেখ হাসিনার সকল অন্যায়-অবিচারের মোকাবেলায় ছাত্র-জনতা এগিয়ে আসলে আল্লাহপাক তাদেরকে সাহায্য করেছেন এবং এটিই আল্লাহপাকের সুন্নাত।
মুহতারাম আমিরে জামায়াত আল্লাহপাকের অভিপ্রায় ও প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এর প্রদর্শিত পথই অবলম্বন করেছেন। আল্লাহপাক যদিও বলেছেন, কারো প্রতি জুলুম করা হলে প্রতিকার হিসেবে জালেমের কাছ থেকে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার তার রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অভিপ্রায় হলো পৃথিবীটাকে আবাদ করার জন্য প্রতিশোধ গ্রহণ না করে পরস্পর সংশোধন করে নেওয়া। এমতাবস্থায় মজলুমকে প্রতিদান দেওয়া আল্লাহপাকের দায়িত্ব হয়ে যায়। রসুলুল্লাহ সা. ব্যক্তিগতভাবে তাঁর উপর জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ কখনই গ্রহণ করেননি। আল্লাহপাক নবি মুহাম্মদ সা.-কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘ভালো ও মন্দ কখনো এক নয়, তুমি মন্দকে দূর করো সেই ভালো দ্বারা যা অতি উত্তম। তাহলে দেখবে তোমার জানের দুশমনরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে’। এটা এতো সহজ নয়, এজন্য প্রয়োজন সাহস ও ধৈর্য। আল্লাহর বাণী, ‘এ গুণ কেবল তারাই লাভ করতে পারে যারা অতীব ধৈর্যশীল এবং অতি ভাগ্যবান ছাড়া এ মর্যাদা কেউ লাভ করতে পারে না’ (সুরা হা-মীম আস্-সাজদা)। শয়তান উস্কানি দেয়, এতো জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর সুযোগ আসলো একটু সদ্ব্যবহার করলে না? আর যাই হোক এতো সরল লোকের জন্য রাজনীতি মানায় না। আল্লাহপাক কী বলেন একটু শুনুন, ‘যদি তোমরা শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো প্ররোচনা অনুভব করো তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করো। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’ হা-মীম আস্-সাজদা। এবার আল্লাহর অভিপ্রায় ও আপনার ভাবনার মধ্যে একটু মিল খুঁজুন তো। পাবেন না। হেদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে গভীর মনোযোগের সাথে কুরআন অধ্যয়ন ও চিন্তা-ভাবনা করলে মুহতারাম আমিরে জামায়াতের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা অনেক গুণ বেড়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহর বাণী, ‘আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনবে ও সৎ কাজ করবে তাদেরকে তিনি পৃথিবীতে ঠিক তেমনিভাবে খিলাফত দান করবেন যেমন তাদের পূর্বে অতিক্রান্ত লোকদের দান করেছিলেন, তাদের জন্য তাদের দীনকে মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, যে দীনটি আল্লাহ তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির অবস্থাকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন। তারা যেন শুধু আমার ইবাদত করে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে। আর যারা এরপরও কুফরি করবে তারাই ফাসেক’- সুরা নূর ৫৫। ৫ই আগস্টের গণবিপ্লব ঈমানদারদের জন্য প্রাথমিক বিজয়। সংকীর্ণ জমিন প্রশস্ত হয়ে গেছে এবং ভয়-ভীতি দূর হয়ে দেশটা তাদের জন্য নিরাপদ হয়ে গেছে। এটা আল্লাহপাকের দান ও তাঁরই অনুগ্রহ। এজন্য প্রয়োজন শুকরিয়া হিসেবে মহান মাবুদের দরবারে মুখে প্রশংসার বাণী উচ্চারণ করা (আলহামদু লিল্লাহ) এবং নিজেদেরকে মৌলিক মানবীয় গুণে (সততা, বিশ্বস্ততা, আমানতদারি, ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি পালন, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা এবং সবধরনের পাপাচার থেকে বিরত থাকা ও সবার সাথে সদাচরণ) ভূষিত করা। আল্লাহপাকের চাওয়া ঈমান ও নেক আমলে সমৃদ্ধ হতে পারলে তিনি ঈমানদারদের জমিনে কর্তৃত্ব দান করবেন। এটি তাঁর প্রতিশ্রুতি এবং তিনি কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।
ঈমানদারদের বোঝা উচিত যে, তারা আল্লাহ তায়ালার প্রতিনিধি ও সাহায্যকারী এবং তিনিই একমাত্র বন্ধু ও অভিভাবক। বাড়ির চাকর মনিবের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি কখনো নির্যাতিত হয় তাহলে মনিবকে বলেই সে প্রশান্তি অনুভব করে। মনিবও বলেন, এতবড় স্পর্ধা! আমার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পিটুনি খেয়েছিস, তোকে মারা হয়নি, আমাকেই মারা হয়েছে। আমি দেখছি। মনিবের কাছে নালিশ দিয়ে চাকর দায়িত্ব মুক্ত হয়ে পড়েন। আমার উপলব্ধি যে, এবারে স্বৈরাচারের পতন আল্লাহ তায়ালার অগণিত বান্দার রক্ত ও আয়নাঘরে আল্লাহর বান্দা এবং স্বজনহারা মা-বাবা, স্ত্রী- সন্তানদের কান্নার ফলশ্রুতিতে মহান মালিকের কৌশল স্বৈরাচারের একের পর এক ভুল ও অন্তরের ভীতি সঞ্চার পক্ষান্তরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রজ্ঞা, সাহস ও ত্যাগের প্রতিদান। যে জমিন ছিল আল্লাহর বান্দাদের জন্য অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং ভয়-ভীতি নিয়ে সর্বদা উদ্বিগ্ন থাকতে হতো তা সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে মুমিনদের জন্য জমিন হয়ে গেছে প্রশস্ত ও ভয়ভীতি মুক্ত। বিপরীতপক্ষে স্বৈরাচার ও তার দোসরদের জন্য জমিন হয়ে গেছে সংকীর্ণ এবং তারা ভয়ভীতি ও লাঞ্চনাকর এক জীবন অতিবাহিত করছে। আর আখেরাতে ভয়াবহ আজাব তো আছেই। আল্লাহর দেওয়া এই শাস্তির বাইরে জামায়াত কী করতে পারতো? জামায়াত ওদের বাড়িঘর, অফিস বা রাস্তাঘাটে হামলা করতে পারে কি? এটা জামায়াতের জন্য মানায় না। রাষ্ট্র বা সরকার নিজেই গণহত্যা, গুম-খুন এবং সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এখন জামায়াতের দায়িত্ব হলো মুখে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের পাশাপাশি অনুকূল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে ব্যাপকভাবে মানুষের কাছে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া। এর চেয়ে উত্তম কাজ আর নেই। আল্লাহর বাণী, ‘তার চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে ও নিজে নেক আমল করে এবং বলে যে, আমি একজন মুসলিম (সুরা হা-মীম আস্- সাজদা)।’ নেতিবাচক কোনো কাজ নয় বরং ধর্ম- বর্ণ-লিঙ্গ-ভাষা সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে আল্লাহর দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া এবং সমাজে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরা। ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম। মানুষের স্বভাব -প্রকৃতির সাথে সামঞ্জশীল বলে সকলের জন্য উপযোগী এবং সহজ জীবনবিধান। ইসলাম মেনে চলার মধ্যে রয়েছে দুনিয়ার জীবনে সুখ- শান্তি এবং আখেরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত। ০৭.০৯.২০২৪
Comments
Post a Comment