যা কিছু পরশপাথরের স্পর্শ পায় তাই সোনা হয়ে যায়। আমাদের প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-কে বলা হয় পরশপাথর যাঁর স্পর্শে আরবের অসভ্য মানুষগুলো পৃথিবীর সেরা মানুষে পরিণত হন। আমরা তাঁরই অনুসারী। সেই হিসেবে আমাদের চরিত্র দ্বারা অন্যরা প্রভাবিত হবেন এটিই হওয়া উচিত। একদিন যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মরহুম ড. ইকরাম আলী শেখ স্যার আমাদের প্রতিষ্ঠানে বেড়াতে এসে বলেছিলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি সৎ হন তাহলে তাঁর অধীনে কর্মরতদের ৫০% স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৎ হয়ে যায়, বাকি ২৫% একটু তদারকি করলেই ভালো হয়ে চলে, বাকি ২৫% থাকে স্বভাবগত অসৎ। এদের জন্য প্রয়োজন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।প
আমার প্রশ্ন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পর্শে পিয়ন থেকে শুরু সেনাপ্রধান, পুলিশ প্রধান, বিচারপতি, সচিব, তাঁর দলীয় নেতা-নেত্রী ও কর্মী সবার চরিত্র যদি এতো কদর্যপূর্ণ হয় তাহলে তিনি কী মাত্রায় অসৎ তা আমাদের ধারণারও বাইরে। কারণ সবাই তো তাঁকে ভাঙিয়েই লুটপাট করেছেন। তাঁর কতো প্রশংসা, তাহাজ্জুদ গুজার, নিয়মিত কুরআন পাঠকারী, দয়ার সাগর আরো কতো কী? হ্যাঁ, স্বৈরশাসকরা এমনিই হয়ে থাকে। চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়ে সর্বদা প্রশংসা শুনে থাকে। পতন হওয়ার সাথে সাথে প্রকৃত চেহারা উন্মোচন হয়। রিমান্ডে তাঁর প্রিয়ভাজনরা সব দোষ তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে। আখেরাতেও বাঁচার জন্য স্বামী-স্ত্রী, সন্তান সবকিছু বিনিময় হিসেবে দিতে চাইবে।
তাঁর গুণে গুণান্বিত অল্প সংখ্যককে নিয়ে আমরা বিচার করি। জেনারেল আজিজ ও বেনজিরের সম্পদের হিসাব মেলানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার অন্ধভক্ত বিচারপতি মানিক পালানোর সময় সাথে নিয়ে গিয়ে উত্তম-মধ্যম খাওয়ার সাথে ৭০/৮০ লক্ষ টাকাও খুইয়েছেন। ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পান্না পালানোর সময় জীবনটা খুইয়েছেন। পরিবার বলছে তার সাথে ছিল দুই কোটি ডলার। আমির হোসেনের পোড়া বাড়ি থেকে উদ্ধার পাঁচ কোটি টাকা, এক প্রাক্তন সচিবের কাছ থেকে উদ্ধার তিন কোটি টাকা। তাঁর মুখের কথা, তাঁর পিয়ন চার কোটি টাকার মালিক। দীর্ঘ হয়ে যাবে, তাঁর দলের গ্রামের এক নেতা থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের যারা তাঁর বা তাঁর দলের স্পর্শ পেয়েছে সবারই অবস্থা কমবেশি একই।
অনেকে বলছেন, মেয়ে খারাপ হলেও বাবা ছিলেন যথার্থ দেশপ্রেমিক। গুগলে একটু সার্চ দিয়ে যা দেখলাম, শেখ হাসিনা দীর্ঘ ষোল বছরে যতো গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত ও বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন শেখ মুজিব সাড়ে তিন বছরে তার চেয়েও বেশি করেছেন, তিনিই দেশে গুম-খুনের প্রথম উদ্যোক্তা। পাকিস্তান আমলে এমন ঘটনা কখনই শোনা যায়নি। রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার সকল সীমা ছেড়ে গিয়েছিল। বাকশাল ছাড়া কোনো দল ছিল না। স্লোগান ছিল, এক দেশ এক নেতা- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। সরকার অনুমোদিত চারটি ছাড়া কোনো পত্রিকা ছিল না। এখনকার মতো ফেসবুক, ইউটিউবও ছিল না। রক্ষীবাহিনী কর্তৃক হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানা বেশ কঠিন। জাসদ বলে ষাট হজার, আবার কেহ বলে ঊনিশ হাজার, আবার দু'হাজারও বলে। এতটুকু বলা যায় বর্তমানে আয়না ঘরের যা অত্যাচার তা পিতার দেখানো পথেই হয়েছে।
আল্লাহপাক নিজে জুলুম করেন না এবং জুলুম সহ্যও করেন না। আমরা লক্ষ করি শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা ছিলেন কঠিন নিরাপত্তা বলয়ে। কেউ কল্পনাও করেনি যে এতো সুরক্ষার মধ্যে তাদের এমন পরিণতি হবে। আসলে আল্লাহপাক কাউকে সুরক্ষা না দিলে কেহ সুরক্ষা পেতে পারে না। কুরআন-হাদিস পড়ে আমার উপলব্ধি হলো কুরআনে বর্ণিত অতীতে স্বৈরশাসকদের যে পরিণতি হয়েছিল বর্তমান স্বৈরশাসকদের পরিণতি ভিন্নতর কিছু নয়। সবই আল্লাহপাকের নিদর্শন। কিন্তু মানুষ অন্ধ, বধির তারা শিক্ষা নেয় না।
কুরআন হাদিস থেকে জানা যায় জালেম হলো আল্লাহর কাছে বড়ো ঘৃণ্য, দুনিয়ার জীবনে তারা যেমন লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়, ঠিক তেমনি আখেরাতেও তারা চরমভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত হবে এবং তাদের অবস্থান হবে জাহান্নামে। আমার নিজের উপলব্ধি, জালেম ও তাদের সহযোগী কারো জন্য জান্নাতে কোনো অংশ নেই। এখন প্রশ্ন, এতো জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে ও শহিদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বিজয় ধরে রাখার উপায় কী? উপায় একটিই তা হলো রাষ্ট্র সংস্কারের সাথে নিজেদেরকে বদলে ফেলা। একদলের শোষণ-বঞ্চনার পর আর একটি দল যদি একই আচরণ করে তাহলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। নৈতিক দিয়ে অধপতিত কোনো জাতি পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। নৈতিকতার উৎস হলো ধর্মীয় মূল্যবোধ বা পরকালে বিশ্বাস এবং পারিবারিক শিক্ষা ও ঐতিহ্য। নৈতিক গুণাবলী সম্পন্ন জনগোষ্ঠীর হাতে দেশের কর্তৃত্ব আসলে আশা করা যায় দেশে সুশাসন ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমরা সেদিনের অপেক্ষায়। ০১.০৯.২০২৪
Comments
Post a Comment