আমার কাছে যা আছে এদেশের অনেকের কাছে তো তাও নেই। ★ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সম্পদের হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক- বর্তমান সরকারের এ এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
কতিপয় অসৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা চরম ইমেজ সংকটে ভুগছেন। অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা খুবই সীমিত। কিন্তু এরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এক একজন দানবে পরিণত হয়েছিল এবং তাদের ভয়ে সবাই ছিলেন তটস্থ। জেনারেল আজিজ, বেনজির, মতিউর আবার ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী ও পিয়ন জাহাঙ্গীরের দুর্নীতি অপেন সিক্রেট, মানুষের মুখে মুখে। দেশে ভয়াবহ দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেন, আমার পিয়নও চারশ কোটি টাকার মালিক এবং হেলিকপ্টার ছাড়া সে চলাফেরা করে না। আসলে যারা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সংস্পর্শ পেয়েছে তা নেতা- কর্মী হোক বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি সবাই কমবেশি দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট। যাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হচ্ছে সবার কাছ থেকে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগের ফলে সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজেদের সততা প্রদর্শন করতে সক্ষম হবেন ইন শা আল্লাহ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় সাংবাদিকদের বলেন, কর্মকর্তা- কর্মচারিরা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেবেন এবং দিতে বাধ্য। আমাকেও দিতে হবে। আমার তেমন কিছু নেই। আমার ব্যবহৃত গাড়িটা ঋণ করে কেনা। সদ্য অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা- কর্মচারিদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার কথাও ফেসবুকে কেহ কেহ দাবি করছেন।
কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে কীভাবে আয় ও কীভাবে ব্যয়- এই হিসাব না দিয়ে কেহ এক পাও নড়াতে পারবে না। ইসলাম আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা খুব বড়ো করে দেখে। ইবাদত কবুল হওয়ার বড়ো শর্ত হলো হালাল রুজি। একদিন মসজিদে নববিতে এক লোক উস্ক-খুস্ক অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করছে। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ওর দোয়া কবুল হবে কী করে? ওর খাদ্য হারাম, ওর পোশাক হারাম, ওর সবকিছুই হারাম। রসুলুল্লাহ সা.-এর সঙ্গে এক লোক যুদ্ধ করে শহিদ হন। সাহাবারা খুব প্রশংসা করছিলেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেন, তোমাদের সাথি জাহান্নামি। শেষে তার কাছে গণিমতের একটি চাদর পাওয়া যায়। এতটুকু কারণে একজন মুজাহিদকে জাহান্নামে যেতে হলে যারা পুকুর চুরি নয় সাগর চুরি করে তাদের পরিণতি কী হতে পারে?
আমি সরকারি চাকরি করে এখন অবসর জীবন যাপন করছি। প্রথম শ্রেণির চাকরি এবং একটি বড়ো কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে অবসর গ্রহণ করে লেখালেখি জগতে আছি। এক অবসরপ্রাপ্ত সচিবের বাড়ি থেকে নগদ তিন কোটি টাকা উদ্ধার। কী করে সম্ভব? আমি একটু আমার সম্পদ হিসাব করে দেখি। দু'টি একাউন্ট আছে। একটি সোনালী ব্যাংকে এবং সেই একাউন্টে জমা হয় বাড়ি ভাড়া ও উৎসব ভাতা। আমি পেনশন শতভাগ বিক্রি করে দিয়েছি। সেই একাউন্টে রয়েছে মাত্র ৪৬১ টাকা এবং ব্যাংক ওয়ালেটে ৩২ টাকা। ইসলামী ব্যাংকে একাউন্টে রয়েছে ১,৬২৪ টাকা। বিকাশে রয়েছে ১২,৭৮০ টাকা (এর মধ্যে চাহিদা মাত্র একজনকে দশ হাজার টাকা প্রদান করতে হবে)। নগদ একাউন্টে রয়েছে ৫৮ টাকা এবং হাতে নগদ রয়েছে ১৯৭৫ টাকা। সর্বসাকুল্যে (ব্যাংক, নগদ ও বিকাশে) রয়েছে ৬,৯৩০ টাকা। পেনশন শতভাগ সমর্পণ করায় আমি একত্রে ৩৬ লক্ষ টাকা পাই। এখন আর রয়েছে মাত্র ৮ লক্ষ টাকা। কেরানিগঞ্জে ১০ জন মিলে ১০ কাঠা জমি নেয়া আছে। আমি কিছু দেওয়ার পর বাকিটা আমার দুই ভাই দিয়ে সেটির দাম পরিশোধ করা হয়েছে। সেখানে কিছু করতে হলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। বসবাসের জন্য রয়েছে পৈত্রিক ভিটায় একটি বাড়ি। কম কী? আমার কাছে যা আছে এদেশের অনেকের কাছে তো তাও নেই।
আমার বড়ো সন্তুষ্টি, আমার একটি টাকাও ঋণ নেই। না না, আমার স্ত্রীর নামে বা আর কারো নামে কোনো সম্পদ করিনি। আমার স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণও নেই। তাই বলে আমাদের কোনো অতৃপ্তি নেই। আমাদের পরিচিত জনরা সবাই জানে আমরা সুখী দম্পতি ও সুখী পরিবার। আমরাও মনে করি। আল্লাহর আদালতে হিসাব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনো ভয় নেই। বিশ্বাস করি, হিসাব দেওয়ার জন্য আল্লাহর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে আল্লাহপাক বলবেন, যাও তোমার হিসাব লাগবে না। আমি আমার আল্লাহর কাছ থেকে এমন কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমি আমার আল্লাহকে জানি অত্যন্ত দয়ার্দ্র, মহানুভব ও ক্ষমাশীল হিসাবে। এজন্য বারবার তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই- আলহামদু লিল্লাহ।
আসুন, আমরা সবাই দুর্নীতিকে না বলি এবং জীবনের লাভ-ক্ষতির হিসাবটা আখেরাতের ভিত্তিতে করি। মুমিনের জীবনে হতাশা বলে কিছু নেই। আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে আসুন এবং আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। হে পরওয়ারদেগার! তুমি আমাদের ক্ষমা করো এবং বাকি জীবন তোমার সন্তুষ্টির উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করো।
Comments
Post a Comment