আমরা সবাই মানসিক রোগী - একটু কমবেশি এই আর কী? এতে অনেক সময় নিজেরাই নানান সমস্যায় ভোগী এবং আমাদের জীবন সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। অথচ আল্লাহ তায়ালা নিজে আমাদের দীনে কোনো সংকীর্ণতা রাখেননি। এ এক উদার ও প্রশস্ত দীন। যেমন ধরুন খানাপিনা - আমরা নিজেরা অনেক কিছু হারাম করে নিয়ে হারামের লম্বা ফিরিস্তি তৈরি করেছি- অথচ
আল্লাহ তায়ালা হালালের কোনো তালিকা না দিয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত হারামের তালিকা (শুকরের মাংস, প্রবাহিত রক্ত, মৃত জীব-জন্তু ও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবেহ) দিয়ে বলেছেন, সকল পবিত্র জিনিসই তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। এর সাথে রসুলুল্লাহ সা. হিংস্র ও নখরধারী কিছু জীব ও পাখির কথা বলেছেন।
ছোঁয়াছুঁয়ির রোগ ইসলামে নেই। নিজের জন্য গামছা, থালা, গ্লাস, বিছানাপত্র সবকিছু আলাদা করে নেয়া এবং কেউ স্পর্শ করলে আবার তা ধোয়া এটা বাহুল্য। বরং ইসলাম বলে কোনো নিম্ন বর্ণ বা পেশার লোক যদি গ্লাসে পানি খেয়ে কিছু রেখে দেয় সেই পানি পান করাতে কোনো সমস্যা নেই। আবার সবাই মিলে একই প্লেটে খানা খেতেও দোষ নেই। কোনো খাবারে বা পানিতে যাদের গোশত হালাল এমন জীব যেমন ছাগল- গরু মুখ দেয় তবে সেই খাবার হারাম হয়ে যায় না। বিড়ালের গোশ আমাদের জন্য হালাল নয় তারপরও বিড়ালের মুখ দেওয়া খানা খাওয়া জায়েজ। অবশ্য আপনি দেখছেন বিড়াল একটা মরা ইদুর খেয়ে পানিতে মুখ দিল আর আপনি সেই পানি পান করবেন এমনটি নয়। কুকুরে মুখ দেয়া পানি বা খাবার খাওয়া হারাম। বাড়ির চাকরবাকরসহ একত্রে খানা খাওয়ার মাঝে বরকত রয়েছে। ওমর রা. বলেন- যারা খানা খাওয়ার সময় চাকরকে সাথে নেয় না তাদের প্রতি আল্লাহর লা'নত। আমি যা উল্লেখ করলাম সেটা দীনের মাঝে উদারতা। কারো রুচি- পছন্দকে অবহেলা করা যায় না। এটি স্বতন্ত্র বিষয়।
মোটকথা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জীবনটাকে সহজ করেছেন। আমরা যেন শুধু শুধু কঠিন না করি। খাওয়ার পূর্বে হাত ধোয়া সুন্নাত। তাই বলে ঘন্টা ধরে ঘষে ঘষে হাত ধুতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। মৌলভীবাজার কলেজে এক ম্যাডামকে পেয়েছিলাম যিনি (আমাদের বিল্ডিং-এর নিচতলায় বাস করতেন) একা বাস করতেন এবং তাঁর ঘরে কেউ প্রবেশ করতে পারতো না। কারো হাতের রান্না তিনি খেতেন না, এমনকি অধ্যক্ষ মহোদয়ের কক্ষে মিটিং-এ গেলে চেয়ারের উপর একটা পেপার বিছায়ে তার উপর বসতেন। সহকারী অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও আমরা থাকা পর্যন্ত তাঁর বিয়ে হয়েছিল না এবং তাঁর পক্ষে বিয়ে সম্ভবও না। এসবই মানসিক রোগ এবং ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছে।
আবার এমনও আছে রাতে ঘরে একা থাকে এবং মনে করে কেউ তার ঘরে উঁকি দেয় বা না থাকলে চাবি তৈরি করে কেউ তার ঘরে প্রবেশ করে উলট পালট করে। এসবই মনের সন্দেহ এবং একটি রোগ। সন্দেহ করার ক্ষেত্রে আল্লাহপাকের সুস্পষ্ট নিষেধ রয়েছে। সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি সবাইকে শত্রু মনে করে এবং কারো সাথে তার বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না।
আমাদের দীন বড়ো সহজ, কোনো কাঠিন্য নেই। ওজু চলে গেছে, এই সন্দেহে অনেকে বারবার ওজু করে। কোনো প্রয়োজন নেই। যদি বুঝেন গন্ধ বের হয়েছে বা শব্দ হয়েছে তাহলে বুঝবেন ওজু চলে গেছে। আবার অনেকে আছেন বাইরে থেকে এসে জুতা স্যান্ডেল ধুয়ে থাকেন। এটাও অতিরিক্ত। যদি দেখেন, জুতার তলায় নাপাকি লেগে আছে তাহলে মাটির সাথে ডলা দিলেই সেটি পাক হয়ে যায়।
আল্লাহপাক নিজে উদার এবং উদারতা পছন্দ করেন। উদার ব্যক্তির কোনো শত্রু নেই। সে সহজে ক্ষমা করতে জানে। কার্পণ্য তাকে স্পর্শ করে না। ক্ষমা করতে না পারাটা কার্পণ্য। এমন অনেক সমস্যা রয়েছে যার ফলে আমরা সবাই নানাবিধ সমস্যায় ভুগে থাকি। এজন্য প্রয়োজন উদারতা। আল্লাহ তায়ালা নিজে উদার বলেই পৃথিবীটা টিকে আছে। তিনি ক্ষমা না করলে পৃথিবী অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত। মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহ চান, মানুষ হোক তাঁর গুণে গুণান্বিত। আল্লাহপাক আমাদের সন্দেহপ্রবণ হওয়া থেকে মুক্ত করে জীবনটাকে সহজ ও আনন্দময় করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment