সম্প্রতি দেশের প্রধান আলোচনার বিষয় এবং পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চরমে। আমেরিকা বারবার বলছে তারা কোনো পক্ষ নেবে না, তারা চায় সবার অংশগ্রহণমূলক একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় যারা বাধ সাধবে তাদের উপরই ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। সেটা বিচারপতি, আমলা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মিডিয়া সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ হতে পারে। ভিসা নীতির নগদ লাভ দেশে গুম-খুন বন্ধ হয়েছে এবং মানুষ কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে।
আমাদের দুর্ভাগ্য, বর্তমানে আমরা চরম আস্থার সংকটে ভুগছি। রাজনীতিবিদদের অনর্গল মিথ্যা বলা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, হিংসা-বিদ্বেষ আমাদের ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে দিয়েছে। একজন বিচারক যখন দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ ও পদোন্নতি পান এবং দলীয় স্বার্থে ভ্রষ্ট রায় দেন তখন আর সুবিচার থাকে না অথচ সুশাসন ও সুবিচার গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। গণতন্ত্র মানেই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনগণের সরকার। আজ সরকারের সকল প্রতিষ্ঠান বিরোধী দল দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে। মামলা হাজার হাজার নয় লাখে লাখে। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে তারা পেরেশান। আবার ঘুরে ঘুরে একবার জামিন পেলেও জেলগেটে আর এক মামলায় আটক। এই আমাদের বিচার বিভাগ ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থা। আমাদের যে পরিমাণ মামলা তাতে যদি সবাই হাজির হন বা সবাইকে আটক করা যায় তাহলে বিদ্যমান কারাগারে তো নয়ই বরং সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কারাগারে রূপান্তর করা হলেও স্থান সংকুলান হবে না। অথচ কয়েদির অভাবে কানাডা ও ইউরোপ-আমেরিকায় কারাগারগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালে যে ন্যাক্কারজনক নির্বাচন হয়েছে তাতে কি কোনভাবেই দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব? আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের কোনো নাগরিক কি বিশ্বাস করতে পারে? ন্যাড়া বারবার বেলতলায় যায় না। এই আস্থাহীনতা এখন দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপ ও কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশের একই অবস্থা। আমেরিকার ভিসানীতির উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে- বাংলাদেশের বর্তমান পেক্ষাপটে কেয়ারটেকার সরকারের কোনো বিকল্প দেখি না। সেই সরকার হবে দল নিরপেক্ষ। এতে আওয়ামী লীগের ভয় পাওয়ার কিছু দেখি না। যদি তারা ভালো কাজ করে থাকে বিপুল সমর্থন নিয়ে আবার সরকার গঠন করবে। কিন্তু বাস্তবে তারা এতো অপকর্ম করেছে যার ফলে নৈতিক শক্তি তারা হারিয়ে ফেলেছে। এতো গুম-খুন, জুলুম-নির্যাতন যেমন তাদের জনপ্রিয়তার ধ্বস নামিয়ে দিয়েছে সাথে সাথে তারা নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিরোধী দলের সঙ্গে বসে একটি সমাধানে উপনীত না হলে অতীতের মতো অন্য কোনভাবে ক্ষমতাচ্যুত হলে আওয়ামী লীগই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সাথে সাথে হাজারো মামলা-মোকদ্দমা তাদের প্রতি ধেয়ে আসবে। ৪২ বছর পরে মামলা দেয়া সম্ভব হলে ১৫ বছর পরে যাবে না কেন?
সরকার ও বিরোধী দলের যে অবস্থান তাতে মনে হয় নিজস্ব উদ্যোগে কোনো সমাধান সম্ভব নয় এবং নয় বলেই বিদেশীদের উদ্যোগ। আওয়ামী ঘরনার বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা আমেরিকার ভিসানীতিকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না। সরকারকে সমাধানের লক্ষ্যে ভালো পরামর্শ দিচ্ছে না বা দেয়ার মতো মানসিকতাও নেই। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিচ্ছিরি সমালোচনা বিদেশীদেরকে আরো ক্ষুব্ধ করছে। সরকারের শীষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এমন উক্তি ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ এবং সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে অনর্গল আমেরিকার বিরোধীতা- সরকারে থেকে এমন করা বড়ো বেমানান। আমাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য তেমন মজবুত নয়। আমরা অনেকখানি তাদের উপর নির্ভরশীল। আমাদের গার্মেন্টস ব্যবসা ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডায়। আবার আমেরিকা ও ইউরোপের সাথে জাতিসংঘও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে আমাদের প্রচুর লোক রয়েছে। তাদের সাথে টক্কর দিয়ে আমাদের বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। আর সুষ্ঠু নির্বাচন তো দেশবাসীরও প্রাণের দাবি। তাই সরকারের উচিত দ্রুত কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিয়ে দেশকে সংকটমুক্ত করা। আমাদের সামনে ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ার উদাহরণ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment