আমরা নয় ভাই-বোনের মা দীর্ঘ রোগভোগের পর রমজানের শেষ দশকের ২৬ রমজান, ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ফজরের আজান মুহূর্তে আমাদের ছেড়ে তাঁর মহান রবের সান্নিধ্যে চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন)। সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় তাঁর সার্বক্ষণিক পরিচর্যাকারিণী পুত্রবধূ ও মেয়ের ডাকে আমরা মা'র ঘরে উপস্থিত হয়ে মা মা ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া পাইনি। তাঁর ছোট ছেলে ডা. কামালসহ আমরা তিন ভাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের উপস্থিতিতে আমার মা চিরদিনের জন্য আমাদের থেকে বিদায় নিলেন। দ্রুত এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় সংবাদ পৌঁছলে তাঁর ছোট মেয়ে ও নাতি-নাতনি সব রওনা হয় এবং আল্লাহর মেহেরবানিতে সবাই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে যায়। আলহামদু লিল্লাহি।
ঘোষণা মোতাবেক বাদ জোহর (দুপুর ২টায়) গাছিয়া দৌলতপুর গোরস্থানে জানাজা ও দাফন করা হয়। কোনো মাইকিং ছাড়া প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লির উপস্থিতিতে পরিবারের পক্ষ থেকে আমি আমার মা'র জানাজা পড়াই। জানাজা পূর্ব সমাবেশে সমবেত মুসল্লির উদ্দেশ্যে আমার বলা কথা -
আমাদের নয় ভাই-বোনের মা আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। আট বছর পূর্বে আমার আব্বা ইন্তেকাল করেছেন। মূলত তাঁর মৃত্যুর পর আমার মা বেশিদিন সুস্থ ছিলেন না। তিনি দীর্ঘ রোগভোগ করেছেন। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে তাঁর সেবাযত্নে কোনো ঘাটতি হয়নি। তাঁর পুত্রবধূ ও মেয়েরা সেবাযত্নে কোনো অবহেলা করেনি। বড়ো প্রাপ্তি, তাঁর ছোট ছেলে একজন ডাক্তার। সবমিলে আমার মা রোগের জন্য কষ্ট পেলেও অনাদরে ছিলেন না। আল্লাহ তায়ালা যেন তাঁর রোগভোগের কষ্টকে গুনাহ মাফ হিসেবে কবুল করেন। আমার মা'র সাথে আপনাদের কোনো লেনদেন থাকার কথা নয়। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমি আমার মা'র জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই।
মৃত্যুর খবর পেলেই আমরা পড়ে থাকি ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন। আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাবো। এব্যাপারে কারো কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের প্রয়োজন মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য পাথেয় সঞ্চয়। আল্লাহর নির্ধারিত হুকুমসমূহ পালনের ওপর আখেরাতের সাফল্য নির্ভর করে। প্রতিটি মৃত্যুই আমাদেরকে একই বার্তা দিয়ে থাকে যে তুমিও শীঘ্রই এই কাতারে শামিল হবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে চান। প্রতিটি রাতে আল্লাহপাক নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ক্ষমার ঘোষণা দিতে থাকেন এবং প্রতিটি রাতে অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন। বাদ পড়েন মুশরিক ও হিংসুক। আমরা পরস্পর হিংসা- বিদ্বেষ ছেড়ে দেই এবং মানুষকে ক্ষমা করি। মানুষকে ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে জান্নাত প্রাপ্তি খুব সহজ।
উপস্থিতদের মধ্য থেকে জনাব শাহজাহান আলী মোল্লা স্মৃতিচারণ করে বলেন, মরহুমার ছেলে হিলালী ভাই আমরা একই ব্যাচের এবং এই পরিবারের সাথে তাঁর সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। ভদ্রমহিলা একজন রত্নগর্ভা এবং তাঁর সন্তানরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর হাতের রান্না তিনি অনেক খেয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খোলা থাকে এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ থাকে। এই পবিত্র মাসের শেষ দশকে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁর জান্নাত প্রাপ্তির জন্য তিনি দোয়া করেন।
মিরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির জননেতা জনাব মো. আব্দুল গফুর তাঁর আলোচনায় বলেন, আপনারা উপস্থিত হয়েছেন একটি দোয়া অনুষ্ঠান জানাজায়, এটা একটা ফরজে কেফায়া। কিন্তু এই উপস্থিতির মধ্যে হয়তো অনেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না, আবার রোজাও রাখেন না। রমজান মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে। গুনাহ মাফের মাস। বড়ো সুযোগ। তিনি সবার প্রতি আহবান জানান আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্য।
জানাজা শেষে আমার আব্বার কবরে আমার মাকে সমাহিত করা হয়। আমি সবার কাছে আমার মা'র জন্য দোয়া চাই।
হে আল্লাহ! আমার মা ন'টি সন্তান লালন-পালনে সীমাহীন কষ্ট করেছেন। আমাদের ভাই-বোনকে মা-বাবার জন্য দোয়াকারী সন্তান হিসেবে কবুল করো। আমার মা'র ছোট-বড় সকল গুনাহ মাফ করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসিন্দা করো। রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি ছগিরা।
Comments
Post a Comment