ইতোপূর্বেও বাড়ি এসে করোনার কোনো অস্তিত্ব বা ভীতি লক্ষ্য করিনি। গতকাল বাড়ি এসে সেটিই লক্ষ্য করছি। মাস্কছাড়া সবাই। মনে হলো আমিই যেন ব্যতিক্রম। মসজিদে এশার নামায নীচ তলা ও দোতালা পূর্ণ। কাঁধে কাঁধ মিলে দাঁড়ানো। কঠিন শীতেও ফজরের নামায দু'কাতার (২৫/২৬ জন হবে)। গ্রামের মানুষ অনেকখানি আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। আলহামদু লিল্লাহ।
গ্রামের মানুষের প্রকৃতির সাথে বেশ মিতালী রয়েছে। প্রচন্ড গরমে তাদের এসির প্রয়োজন পড়ে না। আবার এতো শীতও তাদেরকে কাবু করে না। মসজিদে অধিকাংশ মুছল্লিকে খালি পায়ে লক্ষ্য করলাম। দৌড়ঝাপ, হাঁটা-চলা, শারীরিক পরিশ্রম, নির্মল আলো-বাতাস, রৌদ্রতাপ, পর্যাপ্ত শাক-সব্জি খাওয়ার (হতদরিদ্র মানুষগুলো মাছ-মাংস খেতে পারে না) কারণে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক উচ্চে। ফলে করোনা আক্রমণ হলেও সাধারণ সর্দি-জ্বরের উপসর্গ নিয়ে দেখা দেয় এবং কয়েক দিন বিশ্রাম ও নাপা খেয়েই তারা সুস্থ হয়ে উঠে। এটি আমার পর্যবেক্ষণ।
করোনাকালে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গ্রামের শিশু-কিশোরদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল। গ্রামে বাজারগুলো জমজমাট, মসজিদগুলোয় নিয়মিত নামায আদায় হচ্ছে। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা মাস্ক পরা কোনো বিধানই মানা হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা অনুভব করছি না।
গ্রামে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে মাঠ রয়েছে। আমাদের সময়ে এসেম্বলিতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। সে সময়ে কুরআন তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীতের পরে অন্তত ১৫ মিনিট চলতো পিটি। আমার ধারণা, পিটি ১৫ মিনিট থেকে বাড়িয়ে অধা ঘন্টা করা করোনা প্রতিরোধে যথেষ্ট হতে পারে। ফলে অন্তত গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেয়া যায় বলে মনে করি।
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উক্তি দেখলাম, ১৮ বছরের নীচে করোনা ভ্যাক্সিন নেই। আমার তো মনে হয় গ্রামে বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকদের ছাড়া প্রয়োজনও নেই। ১৮ কোটি মানুষকে করোনা ভ্যাক্সিন দেয়া সম্ভব না। স্কুলজীবনে কলেরা ভ্যাক্সিন দেয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবীদের আগমনে পালিয়ে যাওয়ার কথা এখনো মনে পড়ে।
বাইরে বের হওয়ার সময় আমি নিজে সবসময় (অনেক সময় শুধু শুধু ঘরে থেকেও) মাস্ক ব্যবহার করি। নিজে সচেতনার পাশাপাশি সরকারি নিয়মের কারণে। ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে সরকারি আইন ও পরামর্শ মেনে চলা দেশের নাগরিক হিসেবে আমি ফরজ মনে করি। সরকার পছন্দ হোক বা না হোক সেটি স্বতন্ত্র। কিন্তু সরকারি আইন না মানলে সমাজে ফেতনা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ফেতনা সৃষ্টি করা কবীরা গুনাহ।
আমি আবার বলছি, আমার এ-সব কথাবার্তা কোনো গবেষণার ফল নয়, স্রেফ পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি। আল্লাহর কাছে করোনাসহ ও সবধরনের বালা-মুছিবত থেকে হেফাজত কামনা করি। ২৯.১২.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment