বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশ কম। গতকাল মৃতের সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন ১৩ এবং আজ আবার ২১। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৫,২৭,০৬৩ ও মৃত্যু ৭,৮৮৩। কিন্তু বিশ্ব পরিস্থিতি বড় ভয়াবহ। মোট শনাক্ত ৯,৪৩,৯৪,৭৯৬ এবং মৃত্যু ২০,১৯,৮৫৭। প্রতিদিন শনাক্ত ৬/৭ লক্ষ এবং মৃত্যু ১৪/১৫ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খুব নাজুক। শনাক্ত প্রায় আড়াই কোটি এবং মৃত্যু সংখ্যা চার লাখ। ভ্যাক্সিন নেয়ার পর নরওয়ের ২৩ নাগরিকের মৃত্যু। বোঝা যাচ্ছে, ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ ও সময়সাপেক্ষ। ভ্যাক্সিন সবার কাছে পৌঁছানো এতো সহজসাধ্য নয়। তাই স্বাস্থ্যবিধি পালন ও সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
আমরা এমন এক আল্লাহতে বিশ্বাসী যিনি স্রষ্টা হওয়ার সাথে সাথে সবকিছুর নিয়ন্ত্রকও। তাঁর ইচ্ছা বা হুকুমের বাইরে কোনো কিছু ঘটে না। বিপদাপদ দেয়া ও তা থেকে উদ্ধার উভয়ই তাঁর এখতিয়ারভুক্ত। মহামারি, ভূমিকম্প, জলোচ্ছাস বা যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাঁর ইচ্ছার বাইরে ঘটে না। মানুষকে সমূলে ধ্বংস নয়, সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই তিনি এ-সব বিপদাপদ দিয়ে থাকেন, যাতে মানুষ সতর্ক হয়ে নফরমানি ত্যাগ করে তাঁর পথে ফিরে আসে এবং ফিরে আসাটাই বান্দার জন্য বড় প্রাপ্তি। প্রত্যাবর্তিত (তাওবাকৃত) বান্দাদের জন্য মহামারি বা নানা বিপর্যয় আল্লাহর রহমত হিসেবে দেখা দেয়, কারণ রসূলুল্লাহ (সা) মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আর যারা এ-সব দেখে হেদায়াত প্রাপ্ত হয় না, তারাই কপালপোড়া, বদনসিব ও আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত।
কুরআন মজিদে আল্লাহর গজবপ্রাপ্ত পাঁচটি জাতির উল্লেখ পাওয়া যায়। তারা হলো নূহ (আ)-এর জাতি, হুদ (আ)-এর জাতি, লুত (আ)-এর জাতি, শোয়াঈব (আ)-এর জাতি ও মুসা (আ)-এর জাতি। এরা ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ধন-সম্পদ ও বীরত্বে সেরা। পাশাপাশি আল্লাহর নাফরমানি ও সমাজে জুলুম-নির্যাতন ও পাপাচারে তুলনাহীন। আল্লাহপাক এ-সব জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। নবীদের উপস্থিতির কারণে আল্লাহ তায়ালা নবী ও তাঁর সাথীদের গজব থেকে রক্ষা করেছেন। বর্তমানে নবী-রসূল নেই, বালা-মুছিবত এখনো আসে এবং ঈমানদার ও কাফির উভয়ের প্রতিই আসে। বান্দাকে পরীক্ষার মুখোমুখি করা আল্লাহর স্থায়ী নিয়ম। এই পরীক্ষা আসে ঈমানদারের জন্য রহমত ও কাফিরের জন্য গজব হিসেবে।
এবারে করোনার প্রথম আঘাতটি আসে ক্ষমতাগর্বী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সেরা বিশ্বের পরাশক্তিদের ওপর। ইউরোপ-আমেরিকা নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে। আমেরিকায় ইতোমধ্যে চার লক্ষ লোক মারা গেছে। ইউরোপেও একই অবস্থা। শতভাগ শিক্ষিত, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সচেতন নাগরিক হওয়ার পরও তারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে না। পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ এবং একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার কারণে বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। করোনা সবকিছু থামিয়ে দিয়েছে। আমার ধারণা, করোনা পরিস্থিতির উদ্ভব না হলে আমরা হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখিন হতাম। সেখানে প্লেয়ার হতো বিশ্বের পরাশক্তিসমূহ এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতো মধ্যপ্রাচ্যসহ অনুন্নত দেশসমূহ। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মারা যেত লাখে লাখে। এই মৃত্যুর মিছিল আল্লাহপাক ঘুরিয়ে দিয়েছেন যুদ্ধবাজদের দিকে।
আমার বিশ্বাস, বিশ্ব রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। ট্রাম্পের মতো উন্মাদ ও যুদ্ধবাজের বিদায় তারই ইংগিতবাহী। হয়তো আরো পরিবর্তন আসবে ইনশা-আল্লাহ। এ-সব বিপদাপদের মাধ্যমে আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৬.০১.২০২১
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment