[বিলালের মৃত্যু ৮ জানুয়ারি শুক্রবার রাত ৮-০০ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে এবং জানাযা ৯ জানুয়ারি সকাল ১১-৩০ টায় গাছিয়া দৌলতপুর ঈদগাহ ময়দানে।]
মিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল গফুর বলেন, বিপুল লোকের উপস্থিতিতে আজকের এই জানাযা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এই উপস্থিতি মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করছে। সাথে সাথে আমার প্রশ্ন, এই জানাযা একটি ফরজে কেফায়া, কিছু লোক আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামায আমরা অনেকেই পড়িনি, এ-জন্য আমাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকতে হবে। প্রতিটি মৃত্যু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে প্রস্তুতিস্বরূপ নামায আদায়ে যত্নশীল হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহর বিধান পরিপূর্ণভাবে পালনের জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানান।
ড. মাওলানা নূরুল আমিন জসিম বলেন, দোষেগুণে আমরা মানুষ, আমাদের ভুল-ত্রুটি রয়েছে। যে ভাইটি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন, তাঁরও ভুল-ত্রুটি রয়েছে। জানাযা নামায একটি দুআ এবং তাঁর জন্য ক্ষমা প্রার্থনার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। মাইয়াতকে সামনে রেখে জানাযার নামায আদায় করতে হয়। এই নামাযে রুকু-সেজদা নেই। কারণ মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নত হয় না।
মানুষ হিসেবে তিনি ভালো ছিলেন বলেই আমরা জানি। তিনি কেমন ছিলেন মুছল্লিদের কাছে জানতে চাইলে সবাই হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। তিনি ক্ষমা করার কথা বললে সবাই হাত উঁচু করে ক্ষমা করার কথা জানান। তিনি আরো বলেন, আমরা তাঁকে ক্ষমা করলাম, আমরাও তো তাঁর কাছে দায়ী থাকতে পারি। আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য বেশি বেশি ক্ষমা চেয়ে আমরা দায়মুক্তি পেতে পারি।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আশিকুর রহমান ছবি তাঁর খালাতো ভাই বিলালকে উদার ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী বলে উল্লেখ করে বলেন, মানুষের বিপদাপদে সে সবসময় অগ্রগামী থাকতো। টাকা-পয়সা ধার চেয়ে কেউ কখনো বিমুখ হতো না। তাঁর নিজের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমি তার কাছে চল্লিশ হাজার টাকা ঋণী। বিলাল যাদের কাছে টাকা পাবে তা প্রদানের জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান।
পরিবারের পক্ষ থেকে তার বড় ভাই প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী বলেন, আমরা নয় ভাই-বোনের মধ্যে বিলাল ছিল চতুর্থ, আমার মা ও বিলালের শাশুড়ি এখনো বেঁচে আছেন (শয্যাশায়ী), অথচ বিলাল চলে গেল। প্রতিটি মৃত্যুই মানুষকে সচেতন করে। আমরাও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করি।
আমার আব্বা বিলালের জন্য খুব পেরেশান থাকতেন। তার নামায আদায়ের লক্ষ্যে সবাইকে বলতেন। আল্লাহপাক আমার আব্বার দুআ কবুল করেছেন। বিলাল পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করতো। সকল বাজে অভ্যাস এমন কি টেলিভিশনে নাটক-সিনেমা দেখাও সে ত্যাগ করেছিল। সবসময় ওয়াজ-নছিয়ত শুনতো ও মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পেশ করতো। মানুষ তাওবা করে নিজে পরিশুদ্ধ হলে আল্লাপাক তার অতীতের গুনাহকে নেকি দিয়ে বদলে দিবেন (সূরা ফুরকান ৭০)।
আমার ভাইটির অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। আপনাদের অনেককে কষ্ট দিতে পারেন। আপনারা দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দিবেন। ক্ষমা করে দিলে আপনাদেরই লাভ। রসূল (সা) বলেন, যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন। আপনারা তার কাছে পাওনাদার হলে আমাদেরকে বলবেন, আমরা তার ভাইয়েরা ও তার ছেলে রয়েছে তা প্রদানের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে তাঁর পথে চলাটা সহজ করে দিন এবং আমার ভাইটিকে ক্ষমা করুন। আমিন।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment