Skip to main content

জুমু’আ বক্তৃতা

আজ কুচিয়ামোড়া বাজার জামে মসজিদে জুমু’আর নামায আদায় ও বক্তৃতা দানের সুযোগ হয়। আল্লাহপাক দয়া করে আল্লাহর ঘরে হাজির হয়ে খুতবাহ্ শ্রবণ ও দু’রাকাত নামায আদায়ের সুযোগ দেয়ায় তাঁর দরবারে শুকরিয়া জানাই। আলহামদু লিল্লাহ। প্রতিনিয়তই আমরা মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি এবং আমরা তাতে পড়ি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন’। আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাবো। এই ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কারো কোনো সন্দেহ নেই। কখন ও কিভাবে যাবো, আমাদের তা জানা নেই। মৃত্যুর জন্য আমাদের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকা দরকার। আমরা যেখানে ফিরে যাবো সেই আখিরাতের পুঁজি হলো ঈমান ও নেক আমল। আমরা দুনিয়ায় নাম-যশ-খ্যাতি ও ধন-সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। অথচ এই দুনিয়াটা কত সামান্য এবং আখিরাতের জীবন বড় অসীম। বেশি বেশি নেক আমলের জন্য আমাদের প্রতিযোগিতা থাকা দরকার। মসজিদে আসার ক্ষেত্রেও আমাদের প্রতিযোগিতা দরকার। যে সবার আগে মসজিদে পৌঁছে আল্লাহপাক তার আমলনামায় উট কুরবানির ছওয়াব দিয়ে থাকেন এবং এরপর গরু, ছাগল ইত্যাদি। প্রথম কাতারে বসার ছওয়াব প্রসঙ্গে রসূল (সা) বলেন, মানুষ যদি বুঝতো প্রথম কাতারে বসায় কতো ছওয়াব তাহলে লটারি করার প্রয়োজন পড়তো। অথচ মানুষ কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে বসে যেটি হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে। মানুষ যদি পূর্বের কাতার পূরণ করে বসে তাহলে আর ডিঙিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এই মাসেই আমাদের কিছু প্রিয়জন আল্লাহর কাছে ফিরে গেছেন। তন্মধ্যে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন স্যার মরহুম নূর মোহাম্মদ (যিনি বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বনামধন্য শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি একজন সমাজকর্মী ছিলেন), এই মসজিদের এক সময়ের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম মো. আলতাফ হোসেন এবং আমার ছোট ভাই বিলাল যিনি এই মসজিদের নিয়মিত মুছল্লি। এ ছাড়াও আমাদের এলাকার অনেকেই সম্প্রতি ইন্তেকাল করেছেন। আমার সবার মাগফিরাত কামনা করি ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। মানুষ মারা গেলে আমাদের করণীয় সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। প্রথমেই মাইয়াতের গোসল ও দাফন-কাফনের পর তার ঋণ পরিশোধ ও অছিয়ত পূর্ণ করতে হয় এবং এর পরেই সম্পদ বন্টন। মানুষ মারা গেলে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। মাইয়াতের উত্তরাধিকারদের কর্তব্য যেমন ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা তেমনি ঋণদাতারও কর্তব্য তাদেরকে সুযোগ দান করা। ঋণ পরিশোধে অবকাশ দান নেকির কাজ এবং ক্ষমা করে দেয়া অনেক উত্তম। কাউকে ঋণমুক্ত করে দিলে দাসমুক্তির ছওয়াব পাওয়া যায়। পারস্পরিক লেনদেন ও আচার-আচরণে অনেক সমস্যা হতে পারে। কারো অপরাধ ও ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে দিলে হাদিসের ভাষায় আল্লাহ তার অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। নিজেকে গুনাহ মুক্ত করার এ এক অপূর্ব সুযোগ। তাই আমরা উদার হই ও পরস্পরকে ক্ষমা করে দেই। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিলাম, সাথে সাথে আমার কিছু লেনদেন থাকতে পারে বা কোনো কারণে আমার দ্বারা কষ্ট পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারদের তার পাওনা প্রদান ও মাগফিরাত কামনার মাধ্যমে তার সুরাহা হতে পারে। মুসলমানদের মাঝে থাকতে হবে উদারতা ও হৃদয়ের প্রশস্ততা। ক্ষমাশীলতার গুণের পাশাপাশি হৃদয়টা হতে হবে হিংসা ও বিদ্বেষ মুক্ত। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহপাক সূরা ফালাকে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। পিতা-মাতার জীবদ্দোশায় তাঁদের খেদমত করে জান্নাত লাভ করা যায়। সবসময় তাঁদের সাথে দয়ার ব্যবহার করতে হবে। তাঁরা বার্ধক্যে উপনীত হলে আল্লাহ ভাষায় ‘উহ’ শব্দটিও উচ্চারণ করা যাবে না। মারা গেলেও সন্তানের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের ছওয়াবের জন্য গরীব-মিসকিনকে খাদ্যদান, নফল নামায, রোযা, কুরআন পাঠ বা যে কোনো নেক আমল করে আল্লাহর সমীপে পেশ করতে হবে। মৃত্যুর পরে জমকালো খানা-পিনা বা বিশেষ দিনে বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন কোনোটাই ইসলাম সম্মত নয়। মাদাসা ছাত্রদের বা হাফেজ সাহেবকে বাড়িতে নিয়ে এসে কুরআন খতম বা কালেমা পাঠের বিনিময়ে অর্থদান বা খাদ্য প্রদান কোনো কিছু ইসলাম অনুমোদন করে না। এ-সব রীতি-নীতি হিন্দুদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান থেকে আমাদের মাঝে এসেছে। এতে কোনো ছওয়াব না হয়ে গুনাহ হয়। বরং মসজিদ, মাদ্রাসা বা জনকল্যাণে দান করলে তা ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে কাজ করে। মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- ছদকায়ে জারিয়া, নেক সন্তানের দুআ ও উপকারী ইলম মৃত্যুর পরও কাজে লাগে। আল্লাহপাক পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দুআ করার ভাষাও শিখিয়ে দিয়েছেন-‘রব্বির হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছগিরা’। এই দুআ ব্যর্থ হতে পারে না। তাই সর্বক্ষণ তাঁদের জন্য দুআ করতে হবে। ফকিরকে পাঁচটি টাকা দিয়েও বলা যায়, ‘হে পরোয়ারদেগার! এর ছওয়াব আমার পিতা-মাতার আমলনামায় দান করো’। আল্লাহ বড় উদার। তিনি আপনার পিতা-মাতাকেও ছওয়াব দিবেন এবং আপনাকেও দিবেন। নামায না পড়লে সাধারণত দুআ করা হয় না। তাই সন্তানকে পরিশুদ্ধ হতে হবে এবং সকল গুনাহের কাজ বা বাজে অভ্যাস পরিহার করতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের পিতা-মাতাকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে তাঁর পথে চলাটা সহজ করে দিন। আমিন। ২৯.০১.২০২১

Comments