Skip to main content

মৃত্যু ও ভালো-মন্দ সবই আল্লাহর হাতে

আমরা অনেক সময় শুনে থাকি লোকটিকে আযরাঈলে ধরেছে বা বলে আযরাঈলে ধরলে কাউকে ছাড়ে না বা অনেক সময় নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে বলে আযরাঈল চোখে না। এর কোনোটিই ঠিক নয়। আল্লাহপাকের সীমাহীন সাম্রাজ্যে অসংখ্য কর্মচারীর মধ্যে হযরত আযরাঈল (আ) অন্যতম। ফেরেশতারা আল্লাহর কর্মচারী। তাঁদের নিজস্ব বলে কিছু নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই। একান্ত আল্লাহর অনুগত কর্মচারী। সীমা সংখ্যাহীন ফেরেশতা আল্লাহর কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁরা অত্যন্ত সম্মানিত। আল্লাহর হুকুম পালনে সদা তৎপর। একটু ব্যতিক্রম ঘটানোর সুযোগ নেই। তন্মধ্যে চারজন ফেরেশতা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। বাণীবাহক জিবরাইল (আ) সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। জান কবজের দায়িত্ব হযরত আযরাঈল (আ)-এর এবং সেটি আল্লাহর নির্দেশক্রমেই হয়ে থাকে। মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট এবং কোথায়, কখন ও কিভাবে সেটিও আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষের জন্য এই পৃথিবী একটি পরীক্ষাগার। পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যেই আল্লাহপাক জীবন ও মৃত্যু দান করেছেন। একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, এই মৃত্যুই শেষ নয়; এরপর রয়েছে আর একটি জগত যাকে বলা হয় আখিরাতের জীবন। দুনিয়া ও আখিরাত নিয়েই আমাদের এক পরিপূর্ণ জীবন এবং আমরা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করি। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। আখিরাতের সাথে এ জীবন কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। দুনিয়ার জীবনটাকে লোভ-লালোসা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। মানুষ বেশি চায় এবং এই চাওয়ার কোনো শেষ নেই। সে দেখে, জানে ও বোঝে যে এই দুনিয়া তার আসল ঠিকানা নয়। সে এটিও জানে, মৃত্যুর সাথে সাথে সকল মালিকানা তার হাতছাড়া হয়ে যায়। টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্য, বাড়ি-গাড়ি, রাজত্ব সব রেখে চলে যেতে হয়। আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের দুর্বলতার কারণেই মানুষের এই পরিণতি। সূরা তাকাসুরে আল্লাহপাক সেটিই বলেছেন। সম্পদ ও ক্ষমতার লোভে মানুষ সব করতে পারে-চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ঘুষ-দুর্নীতি, মানুষ খুন সবই সম্ভব। দুনিয়ায় বেঁচে থাকার প্রতি তার কতো আকুতি। অসুস্থ হলে মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়, আবার দেশ থেকে বিদেশে ছুটে। আবার কেউ তার সকল সম্পদই দিয়ে দিতে রাজি হয়। কিন্তু মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে একটি সেকেন্ডও অপেক্ষা করা হয় না। সাথে যায় কেবল তার ঈমান ও নেক আমল। আমরা প্রতিনিয়তই মৃত্যু দেখছি। মাইকিং, ফেসবুক, মোবাইলে মৃত্যুর খবরাখবর। আমরা জানাযায় শরীক হচ্ছি, নিজ হাতে প্রিয়জনকে দাফন করছি, আমাকেও একদিন চলে যেতে হবে এই বোধ-উপলব্ধি আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মৃত্যুর কথা স্মরণ করার জন্য রসূলুল্লাহ (সা) জানাযা, দাফন-কাফন ও কবর জিয়ারতে উৎসাহ দিয়েছেন। বিশেষ করে জানাযা ও দাফন-কাপনে শরীক হওয়াকে একজন মুসলমানের হক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একজন মুসলিম মৃত্যুর জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকবে। তার লেন-দেন, আচার-আচরণ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হবে। কারো সঙ্গে বিবাদ হলে বা লেন-দেনে সমস্যা থাকলে দ্রুত মিটিয়ে ফেলবে। মৃত্যুর স্মরণ মানুষকে পাপাচার থেকে দূরে রাখে। দুনিয়ায় আমরা যা কিছু করছি সেটিরই প্রতিফল হিসেবে আমরা আখিরাতে পাবো। ভালো কাজ করলে প্রতিফল হিসেবে জান্নাত এবং মন্দ কাজের প্রতিফল জাহান্নামে আজাব ভোগ করতে হবে। সেখানে কোনো বিনিময় বা সুপারিশ চলবে না। সেখানে বড় পুঁজি হবে ঈমান। ঈমানের দাবীই হলো নেক আমল করা। ঈমান ও নেক আমলের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের মতো। সুস্থ ও সবল বীজ বপন করা হলে তা থেকে চারা গজাবে এটিই স্বাভাবিক। ঠিক কারো মধ্যে আল্লাহ, রসূল ও আখিরাতে বিশ্বাস থাকলে স্বতস্ফুর্তভাবে সে নেক আমল করবে। তার দ্বারা কোনো অন্যায় কর্ম ও আচরণ সম্ভব নয়। আমরা এই দুনিয়ায় একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল নিয়ে এসেছি। কতদিন এই দুনিয়ায় থাকবো সে জ্ঞান কেবল আল্লাহরই রয়েছে। কোনো নবী-রসূল বা ফেরেশতা কারো জানা নেই। তাই বলে মানুষ আল্লাহর ওপর নির্ভর করে বেপরোয়া জীবন যাপন করবে সেটি আল্লাহর কাম্য নয়। মানুষকে আল্লাহ জ্ঞান-বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন এবং প্রতিনিধি (খলিফা) করে পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ সকল সৃষ্টির সেরা, মর্যাদায় ফেরেশতারও উর্দ্ধে। তাই মানুষ তার নিজের প্রতি বা কোনো সৃষ্টির প্রতি জুলুম করবে না। আত্মহত্যার পরিণতি জাহান্নাম এবং যে খাদ্য, পানীয় বা কর্ম মানুষের স্বাস্থ্য বা জীবনের জন্য ক্ষতিকর সবই হারাম। মানুষ তার নিজেরসহ সকল সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ করবে। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষ তার নিজের ও সমাজের কল্যাণের জন্য সচেষ্ট হবে। কতখানি সফল হবে তা নির্ভর করবে আল্লাহর মর্জির ওপর। এটি ঠিক আল্লাহর সাথে তাঁর কোনো বান্দার শত্রুতা নেই। সাধারণত তিনি তাঁর বান্দার কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ করেন না। তাঁর দৃষ্টি দুনিয়া ও আখিরাত নিয়ে। দুনিয়ার জীবনে কোনো নেক বান্দার দুঃখ-কষ্ট প্রমাণ করে না যে, তার ওপর আল্লাহ অসন্তুষ্ট। দুনিয়ার এই পরীক্ষাগারে আল্লাহ কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করছেন আবার কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করছেন। রসূলুল্লাহ (সা) যথার্থই বলেছেন, মু’মিনের জন্য উভয় অবস্থাই কল্যাণকর। যখন সে দুঃখ-কষ্টে থাকে তখন ধৈর্য অবলম্বন করে আবার যখন সুখে-শান্তিতে থাকে তখন শুকরিয়া আদায় করে। যেহেতু রাজত্ব আল্লাহর, তাঁর ভান্ডার অফুরন্ত এবং বান্দাহ চাইলে আল্লাহ দিতে প্রস্তুত। তাই আমরা সর্বদা আল্লাহর কাছেই চাইবো। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে চাইবো, নামাযে এবং বিশেষ করে সেজদায় গিয়ে চাইবো। আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি বিরক্ত হন না। দুনিয়ায় না দিলে বান্দার জন্য তিনি সব জমা করে রাখেন। তাই চাওয়া বাদ দেব না। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহকে প্রভু হিসেবে স্বীকৃতি দান ও নিজেকে অসহায় গোলাম হিসেবে পেশ করা হয়। আল্লাহ তাঁর বান্দার মাঝে বিনয় পছন্দ করেন। বিনয়ী বান্দাকে আল্লাহ জাহান্নামে দেবেন না এবং বিনয়ী বান্দাহ আল্লাহর নাফরমানও হন না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে একনিষ্ঠ বান্দাহ হিসেবে কবুল করো এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করো। ২০.০১.২০২১

Comments