করোনা ভাইরাস নিয়ে
প্রতিনিয়ত সতর্কতামূলক পোস্ট দিচ্ছি। নিজেও বিভিন্ন জনের পোস্ট পড়ছি এবং এ
সম্পর্কীয় কুরআন-হাদিসও দেখছি। বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করছি। আক্রান্ত ও মৃতের
সংখ্যা কমার কোনো লক্ষণ নেই, বেড়েই যাচ্ছে। আজ ফজর বাদে আমাদের পারিবারিক বৈঠকে
কুরআন-হাদিসের আলোচনার পাশাপাশি করোনা নিয়েও কথা উঠলো। হাদিসের বিষয় ছিল, কোনো
লোকালয়ে শক্তি থাকা সত্ত্বেও অন্যায় প্রতিরোধ না করা হলে আল্লাহ সেই জনপদে গজব
দেন। আমার উপলব্ধিটাও তুলে ধরলাম। আমার উপলব্ধি হলো যা কিছু ঘটছে, সবই আল্লাহর
হুকুম।
কুরআনে বর্ণিত
অতীতকালের ঘটনা আমরা ২/১টি উল্লেখ করতে পারি।
১. আবরাহার বিশাল
হস্তিবাহিনীকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে পাথর ছুঁড়ে ধ্বংস করে দেয়া।
২. একটি অতি ক্ষুদ্র
কীট মশার আক্রমণে এক স্বৈরশাসক নমরুদের করুণ মৃত্যু।
৩. লাঠির আঘাতে পানি দু’ভাগ হয়ে পড়ায় মুসা (আ)-এর নিরাপদে মিশর ত্যাগ
এবং সেই পথে ফিরাউনের সদলবলে সলিল সমাধি।
৪. বিভিন্ন সময়ে
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ধ্বংসসাধন। আদ, সামুদ যার ধ্বংসাবশেষ এখনো বর্তমান।
৫. বিভিন্ন অপরাধে
বিশেষ করে সমকামিতা (হযরত লুত আ.) ও ওজনে কম-বেশি করায় (হযরত শোয়াইব আ.) দু’টি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার কাহিনী।
উপরোক্ত যে ঘটনা উল্লেখ
করা হলো তার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। সবই আল্লাহর হুকুম। মানবজাতি
সীমালঙ্ঘন করলে তাকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহপাক এ সব গজব দিয়ে থাকেন এবং গজব যখন
দেন তখন ঈমানদার ও কাফির উভয়ের উপরই দেন।
করোনা ভাইরাস গত
ডিসেম্বরে দেখা দেয় উহান শহরে। বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদদীন আহমদ
প্রতিনিয়তই করোনা সংশিষ্ট পোস্ট দিয়ে থাকেন। তিনি উহান থেকে বেইজিং, সাংহাই, ঢাকা,
দিল্লি, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানির
বিভিন্ন শহরের দূরত্ব তুলে ধরেছেন। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, চীনের অন্যান্য শহর বা
নিকটবর্তী দেশসমূহে অতটা বিস্তার না ঘটে সুদূর আমেরিকা ও ইউরোপে এর তান্ডব ভয়াবহ
এবং যে গতিতে ধাবিত হচ্ছে তার শেষ কোথায় আল্লাহই ভালো জানেন।
চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য ও
চাকুরিজনিত কারণে বেশি সম্পর্ক বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশে
চীনের প্রচুর নাগরিক বিভিন্ন শিল্প কারখানা, সড়ক-মহাসড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজে
নিয়োজিত এবং চীনা পণ্যসামগ্রীতে ভরে আছে আমাদের দেশ। সেখানে প্রতিনিয়ত মানুষের
যাতায়াত রয়েছে।
করোনা ভাইরাস অতি
ক্ষুদ্র এক জীবাণু। পারমানবিক শক্তিধর এ সব পরাশক্তি এই অতি ক্ষুদ্র জীবাণু ধ্বংসে
অক্ষম হয়ে পড়েছে। এ সব পরাশক্তির অপরাধের মাত্রা সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
আফগান্তিান, ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে হাজার নয়, লক্ষ নয়,কোটি কোটি
নারী, শিশু, বৃদ্ধ মানুষের আহাজারী আল্লাহ না শুনে কী করে পারেন? কত কোটি মানুষ
নিহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে ও দুর্ভিক্ষে মারা পড়েছে সে সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন।
রসুল (সা) বলেছেন, ‘মজলুম
ও আল্লাহর মাঝে কোনো আড়াল নেই’।
আল্লাহ জালেমকে অবকাশ দেন। তার অর্থ এ নয়, তিনি মজলুমের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণে
ভুলে যান। প্রতিদিনের চিত্র আমাদের বলে দিচ্ছে আল্লাহর ধরা বড় শক্ত। তারপর
সমকামিতার মত জঘন্য (যাতে অতীতে একটি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে) অপরাধকে
রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান ও নগ্নতা-অশ্লীলতা-বেহায়াপনাকে প্রশ্রয় ও এগিয়ে দেয়া
আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জই বলা যায়।
বাংলাদেশসহ মুসলিম
দেশসমূহ করোনায় আক্রান্ত হলেও বিস্তৃতি তুলনামূলক ধীরগতিতে। আমি মনে করি, এটি
সতর্ক ও সাবধান হওয়ার জন্য অবকাশ। ঘরে অবস্থান ও লকডাউন যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন তাওবা
করা ও আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা প্রার্থনা করা। জুলুম মুসলিম বিশ্বে কম নয়।
ইসলামকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার কারণে কতো নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ
জেল-জুলুম-গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তার সংখ্যা আল্লাহই ভালো জানেন। মজলুম মানুষের
কান্না আল্লাহ ভুলবেন না, ভুলতে পারেনও না। আল্লাহ করোনা ভাইরাস দিয়ে সংশোধনের
সুযোগ দিয়েছেন। যারা অবৈধ উপার্জন করেছে তাদের সমুদয় অর্থ করোনাক্রান্ত গরীব-দুখীর
মাঝে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে পারে। সরকারের উচিত হবে
কারাগারে আটক পর্দানশিন মহিলাসহ আলেম-উলামা ও নিরীহ লোকজনকে মুক্তিদান ও গুম হয়ে
যাওয়া লোকদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করা। কুরআন-হাদিস স্বল্প পরিমাণ চর্চার মাধ্যমে আমার এটিই উপলব্ধি এবং এখনই সময়
রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের তাওবা করার।
সূরা আনফালের ৩৩ নং
আয়াত আমাদেরকে আশার আলো দেখায়। কোনো জনপদের মানুষ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকলে
সাধারণত আল্লাহ সেই জনপদে গজব দেন না। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য
উদ্গ্রীব হয়ে আছেন। বান্দাহ এক হাত অগ্রসর হলে আল্লাহ দু’হাত এগিয়ে আসেন। এ বিপদ সামগ্রিক এবং বিপদ থেকে
উদ্ধার পাওয়ার জন্য চেষ্টাও হতে হবে সামগ্রিক। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি এবং ঘরে
অবস্থানের পাশাপাশি সবাইকে গুনাহ থেকে তাওবা ও আল্লাহর আনুগত্য কবুলের আহবানের
মধ্যেই রয়েছে পরিত্রাণের পথ। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। ২৯.০৩.২০২০
Comments
Post a Comment