Skip to main content

ইসলামে সামাজিক কাজের গুরুত্ব



ইসলাম আল্লাহপাক প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ দ্বীন (জীবনব্যবস্থা)। জীবনের পরিধি যতখানি ইসলাম ঠিক ততখানি। সমাজ, সামাজিকতা, বিনোদন কোনো কিছু ইসলামে উপেক্ষিত নয়। আমাদের ধারণায় যে ব্যক্তি সমাজ থেকে যতবেশি বিচ্ছিন্ন ও ধর্মীয় আচার-আচরণে নিষ্ঠাবান সে ততবেশি মুত্তাকী। দ্বীনের এই সংকীর্ণ ধারণার কারণেই আমাদের সমাজে অনেক নামাযী-কালামী ব্যক্তি তার ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকুরি, আচার-আচরণ ও লেনদেনে নিষ্ঠাবান নন এবং মানব কল্যাণে তার ভূমিকা খুবই গৌণ।
রসুল (সা)-এর জীবন তা বলে না এবং আল্লাহরও তাতে কোনো সমর্থন নেই। রসুল (সা) নবী হওয়ার পূর্বেই সমবয়সীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন হিলফুল ফুজুল। তাঁদের কাজ ছিল অসহায়দের সহায়তা, বিবাদ -বিসংবাদ মিটিয়ে ফেলা, দুর্বলকে সহায়তা দান এবং জালেমকে বিরত রাখা। সমাজের কাজে অগ্রণী ছিলেন বলেই হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) সরানো বিবাদে সবাই তাঁকে ফয়সালাকারী মেনে নিয়েছিল। এটা আল্লাহপাকেরই নিয়ম, সমাজের কল্যাণে যারা কাজ করবে সামাজিক নেতৃত্ব তাদের হাতে চলে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো ধর্মপরায়ণ (?) জনগোষ্ঠী সামাজিক কাজেকর্মে সব সময় পশ্চাতে থাকতে চায়, ফলে সামাজিক নেতৃত্ব অসৎ ও ধর্মবিমুখ জনগোষ্ঠীর দখলে।
সমাজে যতো অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নির্যাতন তার মূলে রয়েছে অসৎ নেতৃত্ব। সমাজের ভালো মানুষগুলো নিষ্ক্রিয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই নিষ্ক্রিয়তাকেই শয়তান ধার্মিকতা হিসেবে চালিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এই মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রসঙ্গে আল্লাহর নিজের উক্তি, 'তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠতম উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে, তোমরা মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে।'
সমাজে ভালো বা মন্দ কোনো কাজই একক চেষ্টায় সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই সংঘবদ্ধতা প্রয়োজন। ফিতরাতের ধর্ম ইসলাম এ থেকে ব্যতিক্রম নয়। বিচ্ছিন্ন নয় ঐক্যবদ্ধতাই শক্তি। নানাভাবে তা ব্যক্ত করা হয়েছে। তিনজন ব্যক্তি সফরে গেলে সেখানে একজনকে দলনেতা নিয়োগ করে চলার তাগিদ দেয়া হয়েছে। দলবদ্ধতার উপর রয়েছে আল্লাহর রহমত। তাই নিজেদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব ও কল্যাণ সাধনের জন্য সকল পেশাজীবীদের মাঝে সংগঠন লক্ষণীয়।
সামাজিক কাজেকর্মে প্রশংসার পাশাপাশি রয়েছে নিন্দাবাদ ও নানা ঝামেলা-ঝক্কি। এতে দুর্বলমনা মানুষ সহজেই ঝরে যায়। এখানেই প্রয়োজন ধৈর্য, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা। 'নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।' হতোদ্যম না হয়ে যারা লেগে থাকে আল্লাহর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন তারাই লক্ষ্য করে।
সমাজে দুষ্টু প্রকৃতির মানুষ অন্যায় করবে এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহপাক দেখতে চান তাঁর বান্দা ও খলিফা দুষ্টুমির মোকাবিলায় কতটুকু ভূমিকা রাখে। এই পৃথিবী ততক্ষণ ধ্বংস হবে না যতক্ষণ সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে কিছু আল্লাহর বান্দা মানুষকে ভালোর দিকে ডাকতে থাকবে। আমরা হাদিস থেকে জানতে পাই, একটি জনপদ ধ্বংস করে দেয়ার জন্য আল্লাহ ফেরেশতা পাঠান। ফেরেশতা এসে আল্লাহর এক আবেদকে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত দেখতে পান। তারা ফিরে গিয়ে আল্লাহকে জানালে তখন আল্লাহ আবেদসহ ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর উক্তি লক্ষণীয়, 'এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের খারাপ কর্মের জন্য ধ্বংস হবে না, যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করে না তাদের জন্যই পৃথিবী ধ্বংস হবে।'
তাই আমরা নীরব না থেকে নিজেরা খারাপ চিন্তা ও কর্ম থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি সীমিত শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে মানবকল্যাণে এগিয়ে যাবো। আমার বিশ্বাস, মানব কল্যাণের লক্ষ্যে চিন্তা-ভাবনা ও সৎ কর্ম সুস্থ জীবনের জন্য সহায়ক হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে কবুল করুন। ০৭.০৩.২০২০


Comments