নামায প্রসঙ্গে মুফতি কাজী ইব্রাহিম সাহেবের প্রশ্নোত্তর শেয়ার করেছিলাম। তাতে তিনি বেনামাযীকে অমুসলিম বলে জানাযা না পড়ার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। মন্তব্যে সেটা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু লেখা এসেছে।
মুফতি কাজী ইব্রাহিম বেশ জনপ্রিয় একজন আলেম। সম্প্রতি ইমাম মেহেদি ও করোনা ভাইরাস নিয়ে কথা বলে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে আমার তেমন জ্ঞান না থাকায় নীরব থাকাটা উত্তম বলে মনে করি।
আমি নিজে ড. ইউসুফ আল কারযাভী ও ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ)-এর ভক্ত এবং তাঁদের দ্বারা অনেকখানি প্রভাবিত। এ ছাড়া সমসাময়িক স্কলারদের আলোচনা শুনে থাকি এবং নিজে উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করি। মোটামুটি সবার প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। সবার কথা মানতে হবে এমনটি মনে করি না।
নামায দ্বীনের ভিত্তি এবং ঈমান আনার পরে একজন ব্যক্তি তখনই নিজেকে মুসলিম দাবী করতে পারে যদি সে নামায আদায় করে। এই মতের সাথে আমি একমত।
রসুল (সা) মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বেসর্বা। তিনি একাধারে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান, আবার মসজিদের খতিব ও ইমাম। অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু তাঁর কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকার ছিল জামায়াতে নামায। শুধু তাঁর কাছে নয়, তাঁর সাহাবিদেরও একই অবস্থা। জামায়াতে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে একজন অন্ধ সাহাবীকেও তিনি ছাড় দেননি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার পূর্বেও তিনি নামায আদায় করেছেন। কাবা চত্তরে নামায পড়ার কারণে আবু জেহেল কর্তৃক হুমকি বিষয়ে নাম উল্লেখ ছাড়াই সূরা আলাকে তার তিরষ্কার করা হয়েছে। নামায সকল নবী-রাসুলের উপর ফরজ ছিল।
নামাযকে তিনি কুফর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাত বছর বয়স হতে শিশুদের নামাযের ব্যাপারে আদেশ দিতে বলেছেন। দশ বছর বয়সে নামায না পড়লে প্রহার করতে বলেছেন। এই দুই পর্যায়ে আশা করা যায় মুসলিম সমাজে আর কোনো বেনামাযী থাকবে না। তারপরও যদি কেউ থাকে তার পরিণতি কী হবে? এ ব্যাপারে ফকিহদের মাঝে কিছুটা ভিন্নমত আছে। তবে সহজ শাস্তির কথা এসেছে ইমাম আবু হানিফা (রহ)-এর কাছ থেকে। তিনি বলেছেন বেনামাযীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হবে যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় বা তাওবা না করে। অবশ্য এ সব কার্যকর করবে সরকার।
আখিরাতের শাস্তি হলো কুরআনের ভাষায় বেনামাযী জাহান্নামে যাবে (সূরা মুদ্দাসিসর)। আরো বলা হয়েছে, বেনামাযী পরকালে অবিশ্বাসী (সূরা বাকারা)।
রসুল (সা) ও সাহাবিদের যুগে একজন মুসলমানও বেনামাযী ছিল না। চার ইমাম ও আহলে হাদিসের কোনো ইমামও বেনামাযীকে মুসলিম বলে স্বীকার করেননি। পাক্কা মুনাফিকরা বাধ্য হতো নামাযের জামাতে শামিল হতে। বেনামাযীর জানাযা পড়া হবে কি না, তা একান্ত গৌণ। কারণ তার তো মুসলিম সমাজে স্বাধীনভাবে চলাফেরারই সুযোগ নেই।
একজন ব্যক্তিকে মুসলিম পরিচয় দানের জন্য নামায আদায় নিতান্ত প্রাথমিক ও মৌলিক দায়িত্ব। এ ব্যাপারে কোনো অন্যথা গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ কোনো ছাড়ও দেননি। তাই মুসলমানদের উচিত গাফেলতি ঝেড়ে ফেলে নামায আদায়ে আন্তরিক হওয়া। তাওবা করে নামায শুরু করলে আশা করা যায় অতীতে না পড়া নামায আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ আমাদের অক্ষমতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করে তাঁর প্রিয়ভাজন বান্দাহ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment