সবদেশেই করোনা সূচনা হয় খুবই সীমিত পরিসরে। করোনা ভাইরাস বায়ু বা পানিবাহিত কোনো রোগজীবাণু নয়। এটি বিস্তার ঘটে মানুষের সংস্পর্শে। সূচনায় যারা কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে (যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর) তারা বিস্তার রোধ করতে পেরেছে। কিন্তু যারা সতর্ক হননি তারাই ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে (যেমন-ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র)। ইতালি ও স্পেনের মধ্যে একটি খেলার মাধ্যমে (যেখানে ৪০ হাজার দর্শকের উপস্থিতি ছিল) দুই দেশে করোনার বিস্তার ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
দৈনিক নয়া দিগন্তে মাসুম খলিলীর একটি প্রবন্ধে দেখলাম, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের যৌথ সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে ৮ কোটি ৯১ লাখ ২০ হাজার ১৬১ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। যার মধ্যে ৩৩ লাখ ৭ হাজার ৩৯৩ জন রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে, ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৫ জন রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে এবং ৫ লাখ ৭ হাজার ৩৯৩ জন রোগীর মৃত্যু হতে পারে। এতে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের কোভিড-১৯ রেসপন্স টিমের সাম্প্রতিককালের খুবই প্রভাবশালী একটি রিপোর্টের মডেল ও বাংলাদেশের জনমিতির তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের রিসার্চের ভিত্তিতে প্রণীত রিপোর্ট জনসন ও ট্রাম্প গ্রহণ করে পূর্বের গৃহিত পন্থা থেকে সরে এসেছেন। কিন্তু তাদের অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রে দশ হাজার লোক নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আগামীকাল হয়তো আরো বেশি শোনা যাবে।
বিদেশফেরত সকলকে কোয়ারেন্টিনে নিতে পারলে বাংলাদেশ অনেকখানি ঝুঁকিমুক্ত হতে পারতো। কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে, কিন্তু বেশ বিলম্বে এবং নাগরিক চেতনাবোধ আমাদের অনেক কম। করোনা ঠেকাতে বর্তমানে ৩০০ কোটি মানুষ লকডাউনে। আমাদের দেশেও লকডাউন চলছে। শহর ছেড়ে বিপুল পরিমাণ মানুষ গাদাগাদি করে বাড়ি গেছে। করোনা ঠেকাতে সরকার ১০দিন ছুটি ঘোষণা করেছে। উদ্দেশ্য ছিল, সবাই নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করবে। শেষে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কার্যকর করতে হচ্ছে।
ব্যক্তি থেকে কমিউনিটিতে যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্যই এত সব উদ্যোগ। লকডাউনের মাঝে আজ জু’মার জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। বলা হয়েছিল, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থায় মসজিদে আযান-ইকামত চালু থাকবে। কিন্তু আজ যা শুনলাম, খুব স্বল্প সংখ্যক মসজিদে এই নিয়ম মেনে চলা হয়েছে। আমরা জানি না, আমাদের মাঝে কে সংক্রামিত এবং কে নয়। অনেক সময় করোনার লক্ষণ প্রকাশ পায় না অথচ সে করোনার ভাইরাস বহন করছে। এ থেকে মুক্ত থাকার জন্যই সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ছাড়া করোনা রোধ করা দুঃসাধ্য। এখন দেশে দেশে সেটিই অনুসরণ করা হচ্ছে। লোক সমাগম এড়িয়ে চলা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং আল্লাহপাকের রহমতের মধ্য দিয়ে আমরা এই ভয়ঙ্কর বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারি। মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, বিপদাপদ তাঁরই দেয়া এবং তিনিই রক্ষা করেন। এজন্য দরকার আল্লাহর নাফরমানি থেকে তাওবা করা এবং তাঁর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করা। রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ারও কোনো উদ্যোগ নেই। ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর সুন্নাহ সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই।
আমার একটি প্রশ্ন, দেশব্যাপি লকডাউনের মধ্যে আমরা যারা জনসমাগম এড়িয়ে বাসায় নামায আদায় করলাম ছওয়াব তাদের বেশি, না-যারা নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিশাল জনসমাবেশে (জামাতে) মিলিত হলেন তারা বেশি ছওয়াবের অধিকারী। আমাদের সান্ত্বনা, আমরা আমাদের প্রিয়তম নবী (সা)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করেছি।
আসুন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করি (এর অর্থ কেবল গুণে গুণে আস্তাগফিরুল্লাহ বা বিভিন্ন দুআ-দরুদ পাঠ নয়)। সকল গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসা বিশেষ করে জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করা ও অশ্লীলতা পরিহার করা এবং আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করা। এ ব্যাপারে সর্বাগ্যে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment