আপনার বয়স ৪০/৫০ বা ৬০-এর উর্ধে। তাতে কী? হয়তো ভাবছেন জীবনে নামায
পড়েননি, রোযা রাখেননি বা নেশা করেছেন বা আরো কতো অপরাধ করেছেন, শাস্তি অনিবার্য। এ
সব চিন্তা-ভাবনা সবই শয়তানের ধোঁকা। শয়তান আপনাকে বন্ধু হিসেবে পেতে চায় এবং একা
নয়, আপনাকে সাথে করে সে জাহান্নামে যেতে চায়। অথচ আল্লাহ বলেছেন, শয়তান তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উদ্গ্রীব। বান্দা শুধু
চাইবে। সাথে সাথে ক্ষমা করে তিনি নতুন জীবনের সন্ধান দেবেন। আর একটু বয়স হোক বা
চাকুরি শেষ করে নেই। তখন হজ্জ করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেব। এটাও শয়তানের একটি
ধোঁকা। আপনার মৃত্যুর জন্য করোনা ভাইরাস নয়, যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যু চলে আসতে
পারে। আপনি তো প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছেন, আপনার চেয়েও কম বয়সের অনেক তরতাজা যুবক স্ট্রোক,
হার্ট এ্যাটাক, রোড এক্সিডেন্ট, ক্রসফায়ার, আত্মহত্যা নানাভাবে মৃত্যুবরণ করছে।
আপনার এ বয়স আসার আগেই আল্লাহ আপনাকে ফিরিয়ে নিতে পারতেন। তাঁর দেয়া অবকাশ আপনার
ফিরে আসার ক্ষেত্রে একটি মহা সুযোগ।
আপনার মধ্যে যদি উপলব্ধি আসে তাহলে একটি সেকেন্ড অপেক্ষা না করে বলে
উঠুন, পরোয়ারদেগার! নিজের প্রতি জুলুম করেছি। তুমি আমাকে ক্ষমা করো এবং তোমার পথে
চলা সহজ করে দাও। বিশ্বাস করুন, তাওবার মাধ্যমে আপনার অতীতের সকল গুনাহের
পরিসমাপ্তি ঘটবে। ক্ষমা করার মধ্যেই রয়েছে আল্লাহর আনন্দ। অতীতের না পড়া
নামায-রোযার জন্য কোনো প্রায়শ্চিত্ত করা লাগবে না। নতুন করে নামায-রোযা বাদ না
দিলেই হবে। রমযান মাস অতি নিকটে। আল্লাহকে বলুন, হে রব! রমযান পর্যন্ত আমাকে হায়াত
দাও এবং রোযা পালনের মতো শারীরিক সুস্থতা দান করো।
আর বান্দার হক লঙ্ঘিত হলে বান্দার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন এবং সম্ভব
হলে তাদের পাওনা ফেরত দিন। মানুষের প্রতি জুলুম আল্লাহর বড়ই ক্রোধ উদ্রেগকারী
বিষয়। আল্লাহর বাণী, 'নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল
ও পেছনে দোষ প্রচার করে'। তিনি আরো বলেছেন, 'যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়,
অতপর তাওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি।'
যে কোনোভাবে মানুষের ক্ষতিসাধন -হতে পারে ঘুষ গ্রহণ করে, ওজনে কম
দিয়ে, ভেজাল দিয়ে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে, মানুষকে চড়-থাপ্পড় বা গুম-খুন করে সবই
ভয়াবহ গুনাহের কাজ। উপরের আয়াতে 'অতপর তাওবা না করে'-এর মাঝে একটি আশার দিক লুকিয়ে
আছে। বান্দাহ যদি তাওবা করে এবং অনুতপ্ত হয়ে কাতরভাবে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে
ও তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দুআ করতে থাকে হয়তো আল্লাহ তার পক্ষে মজলুমকে
এতো পরিমাণ দান করবেন, সে সন্তুষ্ট হয়ে জালেমকে ক্ষমা করে দেবেন।
জুলুমের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। আমাদের মাঝে জালেম হলো
সবচেয়ে দরিদ্র ও অসহায়। তাকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। জালেম আদৌ পরকালে
বিশ্বাসী না। সে নিরেট একজন নাস্তিক বৈ আর কিছু নয়। রসুল (সা)-এর উক্তিটি খেয়াল
করুন- 'ঐ ব্যক্তি মু'মিন নয়, মু'মিন নয়, মু'মিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা
নিরাপদ নয়।'
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তাওবা করে তোমার নেক বান্দাদের দলভুক্ত
হওয়ার সুযোগ দাও এবং সব ধরনের জুলুম থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করো। আমিন।
Comments
Post a Comment