Skip to main content

খোদায়ী আযাব নাযিলের বিধি



‘হে নবী, আল্লাহতায়ালা এমন নন যে, তিনি তাদের ওপর কোনো আযাব দেবেন, অথচ তুমি (সশরীরে) তাদের মধ্যে (বর্তমান) রয়েছ; আর আল্লাহতায়ালা এমনও নন যে, তিনি তাদের শাস্তি দেবেন, অথচ তারা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছে’- সূরা আল আনফাল ৩৩।

রসুলুল্লাহ (সা) যে সময়ে মক্কায় ইসলামের দাওয়াত দান করেন, সে সময়ে মক্কাবাসীরা দাওয়াত অস্বীকার করে বলতো, ‘তোমার ওপর যা অবতীর্ণ তা যদি যথার্থই আল্লাহর হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ওপর কেন আযাব নাযিল হয় না?’ এখানে আল্লাহপাক তারই জবাব দিয়েছেন এবং খোদায়ী আযাব নাযিলের বিধিও উল্লেখ করেছেন।

কোনো জনপদে যতক্ষণ নবী বর্তমান থাকেন ততক্ষণ সেই জনপদে আল্লাহ কোনো আযাব দেন না। ইতোপূর্বেও হযরত নুহ (আ) ও হযরত লুত (আ)-এর ব্যাপারে এমনটিই ঘটেছিল এবং আল্লাহ তখনই আযাব দেন যখন নবী দীর্ঘ চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর হতাশ হয়ে পড়েন ও আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন।

হাদিসে জানা যায়, যখন কোনো জনপদে জুলুম-নির্যাতন সকল সীমা লঙ্ঘন করে বিশেষ করে দ্বায়ী ইলাল্লাহদের প্রতি (যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি-সূরা বুরুজ) এবং সমাজে অশ্লীলতার ব্যাপক প্রসার ঘটে তখনই আল্লাহ আযাব নাযিল করে থাকেন। আজকের পাশ্চাত্য সমাজ সমকামিতাসহ নগ্নতা, বেয়াহাপনা ও অশ্লীলতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিপদ-মুসিবত যা কিছু আপতিত হয় তাকে আমাদের উপার্জন বলে তিনি অন্যত্র উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর নাফরমানি থেকে তাওবা করা ও অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং তাঁর বন্দেগির দিকে ফিরে আসার ফলে সাধারণত আল্লাহপাক গজব দেন না বা গজব দিলেও তা হটিয়ে দেন। সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের পরও আল্লাহর বান্দারা যদি মানুষকে তাঁর দিকে ডাকা অব্যাহত রাখে, তাহলেও আযাব দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাড়াহুড়া করেন না।

ঈমানদার জনগোষ্ঠী সর্বাবস্থায় তাদের জাতির কল্যাণকামী হয়ে থাকেন। সূরা ইয়াসিনে সেটিই আমরা লক্ষ্য করি। তিন তিনজন নবীর দীর্ঘ চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর এক ব্যক্তি ইসলাম কবুল করার পর সে তার জাতিকে ইসলামের দিকে ডাকেন। জবাবে তার জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করে। সে সময়ে তার মুখ থেকে বের হয়-‘হায়! আমার জাতির লোকেরা যদি বুঝতো কিসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মানিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন’। কোনো বদ দুআ বা অভিশাপ নয়, সে সময়েও সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তিটি তার জাতির কল্যাণ কামনা করেছে। অবশ্য তার জাতিকে আল্লাহ সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন।

বর্তমানে করোনা ভাইরাসে গোটা বিশ্ব আক্রান্ত। আমরাও তাদের অংশ। আল্লাহর সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে সবাই পরাস্ত। নিজেদের সাধ্যমত প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রয়োজন নিজেদের গুনাহ থেকে তাওবা-ইস্তেগফার এবং সকল নাফরমানি পরিহার করে আল্লাহর আনুগত্যের পথ অবলম্বন করা।

তাওবা এবং ক্ষমা প্রার্থনা আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে। আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে এই বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারি। এটি আল্লাহপাকেরই প্রতিশ্রুতি। আমাদেরকে এটিও বুঝতে হবে সামষ্টিক গজব ভালো-মন্দ সবশ্রেণির মানুষের উপর পতিত হয়। আল্লাহর নেক বান্দাদের জন্য এটি পরীক্ষা এবং সে ক্ষেত্রে ধৈর্যশীলদের মর্যাদা তিনি বাড়িয়ে দেন। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন।

Comments