Skip to main content

মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য

কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর শাহী মসজিদের খতিব আজকের জু’মায় আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর উপর দরুদ ও সালাম পেশের পর মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’ তিনি বলেন, এই ইবাদত বলতে কেবল নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত বা সুনির্দিষ্ট কিছু আচার অনুষ্ঠান নয়। ইবাদত বলতে গোলামী করা, দাসত্ব করা, আনুগত্য করা ও হুকুম মেনে চলাকে বলে। অর্থাৎ মানুষ শুধু আল্লাহরই হুকুম মেনে চলবে। আল্লাহর হুকুমের মধ্যে একদিকে আছে আদেশ এবং অন্যদিকে আছে নিষেধ। দুটোই সমভাবে পালনীয়। আংশিক পালন করলে হবে না। আল্লাহর দাবী তোমরা পূর্ণরূপে ইসলামে দাখিল হও।

ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। সমাজে তখনই শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে যখন সমাজে পূর্ণরূপে ইসলাম মেনে চলা হবে। মানব সমাজে যা ক্ষতিকর বা মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে এমন সকল আচরণ ও কর্ম ইসলাম হারাম করেছে। আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে বিরত থাকার নামও ইবাদত।

ইসলামে হারাম কাজসমূহের মধ্যে নগ্নতা-অশ্লীলতা-বেহায়াপনা-যিনা-ব্যাভিচার বড় ধরনের গুনাহ। এ সব পাপাচার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রে শান্তি বিনষ্ট করে। আল্লাহপাক পর্দা ফরজ করেছেন। ব্যক্তি পর্যায়ে পর্দা লঙ্ঘিত হলে ব্যক্তির জীবনে দুঃখ-কষ্ট নেমে আসে। যে লোক তার স্ত্রীকে বেপর্দায় চলাফেরার সুযোগ দেয়, দেখা যায় সেই স্ত্রী এক সময়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে বা স্বামীর বিদেশে থাকার সুযোগে তার বন্ধুর সাথে চলে যায়। বিদেশে থেকে স্ত্রীর নামে টাকা-পয়সা পাঠায় এবং একটি সুখের সংসার কল্পনা করে সে কঠোর পরিশ্রম করে, অথচ বাড়ি এসে দেখে স্ত্রী আর তার নেই। অহরহ এমনটি ঘটছে।

আল্লাহর রসুল (সা) নারীদেরকে পর্দার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। রসুল (সা) মি’রাজে গিয়ে জাহান্নামে নারীদের বেশি দেখেন এবং এর অন্যতম কারণ হলো পর্দাহীনতা। পর্দাহীন নারীর অভিভাবককে দায়ুস বলা হয় এবং দায়ুস কখনো জান্নাতে যাবে না। বর্তমান সমাজজীবনে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। ফলে নারী ও পুরুষ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ছে যা পরিবার ও সমাজে অশান্তি, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং আত্মহত্যার মত জঘন্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।

যে সমাজে জুলুম-নির্যাতন ও অশ্লীলতা-বেহায়াপনা প্রসার লাভ করে সেই সমাজে আল্লাহর গজব নেমে আসে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপি জুলুম-নির্যাতন ও অশ্লীলতা প্রসার লাভ করেছে। ফলে গজবও বিশ্বব্যাপি। আমরা কুরআন-হাদিসে লক্ষ্য করি, অতীতকালে বিভিন্ন অপরাধে এক একটি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। শেষ নবী মুহাম্মদ (সা)-এর দুআর বদৌলতে সমূলে ধ্বংস না করে মানুষকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহপাক বালা-মুছিবত দিয়ে থাকেন। জলে-স্থলে যে বিপর্যয় তা তোমাদের হাতের কামাই বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাস আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্ক বার্তা। আল্লাহ সবকিছুর নিয়ন্তক। তাঁর হুকুমের বাইরে কোনো কিছু ঘটা সম্ভব নয়। তাই এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর দেয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহরই কাছে ধর্ণা দিতে হবে এবং তাঁর সকল নাফরমানি পরিহার করে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই আনুগত্য করতে হবে।

মুসলিম সমাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু কার্যক্রম পালন করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পূর্বে অযু পবিত্র-পরিচ্ছন্ন থাকার খুবই কার্যকর পন্থা এবং নামাযের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে শৃঙ্খলা আসে। নামায আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানদের মন ও শরীর দুটোই পবিত্র থাকে এবং আল্লাহর উপর নির্ভরতা তাদেরকে হতাশা থেকে দূরে রাখে। পরিবারে শিশু-কিশোরদের নামাযে অভ্যস্ত করা এবং মেয়েদের পর্দায় রাখাসহ পরিপূর্ণভাবে ইসলাম পালনের জন্য খতিব মহোদয় তাঁর মুছল্লিদের প্রতি আহবান জানান। সংক্ষেপিত ও ঈষৎ পরিবর্তিত। শ্রুতি লিখনে- প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments