Skip to main content

জুমু’আ খুতবা (মুসলমান এক মধ্যপন্থী জাতি এবং তাওবার দরজা উন্মুক্ত)




                                                                                                   
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

তাকওয়া মসজিদে ২০/১০/২০১৭ তারিখ জুমুআ খুতবায় খতিব মহোদয় কুরআনের আয়াত (সূরা বাকারার ১৪৩ আয়াত) উদ্ধৃত করে বলেন যে, মুসলমান এক মধ্যপন্থী জাতি; আমাদের ধর্মে চরমপন্থা এবং শৈথিল্যের কোন সুযোগ নেই। বাড়াবাড়ি, সীমালঙ্ঘন, কাঠিন্য যেমন পছন্দনীয় নয়, আবার উদারতার নামে শৈথিল্য প্রদর্শনেরও কোন সুযোগ নেই। তাঁর পুরো আলোচনা ছিল তাওবাকে কেন্দ্র করে। তাওবার ব্যাপারে বনি ইসরাইলরা (মুসা আ.-এর অনুসারী) নিজেদের ওপরে বড় কাঠিন্য আরোপ করেছিল। তাদের তাওবার নিয়ম ছিল, যে অঙ্গের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হবে সেই অঙ্গ কেটে ফেলতে হবে। যেমন, হাতের দ্বারা অপরাধ হয়ে থাকলে হাত কেটে ফেলতে হত। এর ফলে অপরাধ থেকে ফিরে আসা তাদের জন্য কঠিন ছিল। পক্ষান্তরে ইসা (আ)-এর অনুসারীরা চরম শৈথিল্য প্রদর্শন করতো। তারা মনে করতো যে, তাদের পিতা যিশু শুলেবিদ্ধ হয়ে জীবনদানের মধ্য দিয়ে তাদের সকল পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন। ফলে অপরাধ করলে তাদের আর শাস্তিভোগ করতে হবে না। ইসলাম এই অবস্থার মাঝামঝি এক ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা দান করেছে। ইসলামে তাওবার দরজা উন্মুক্ত, অপরাধ সংঘটনের সাথে সাথে অনুতপ্ত হয়ে তাওবা করলে অর্থাৎ গুনাহ থেকে ফিরে আসলে পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য সে আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। আবার কারো সাথে বিশেষ সম্পর্ক বা বংশ মর্যাদার কারণে কাউকে ছাড়ও দেয়া হয়নি। তাওবা প্রসঙ্গে তিনি কুরআনের অনেক আয়াত ও হাদিস উদ্ধৃত করেন। বান্দাহ যখন দিনে অপরাধ করে তখন আল্লাহ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তাঁর বান্দার ফিরে আসার জন্য, আবার রাতে অপরাধ করলে তিনি দিনে অপেক্ষা করেন তাঁর বান্দার তাওবা করার জন্য। আল্লাহ প্রতিটি নেক কাজের ছাওয়াব প্রদান করেন ও বহুগুণ বাড়িয়ে দেন, কিন্তু অন্যায় করলে তাৎক্ষণিক গুনাহ না লিখে তাওবার জন্য অপেক্ষা করেন এবং তাওবা না করলে অন্যায়ের সমপরিমাণ গুনাহ লিখে থাকেন। বান্দাকে শাস্তিদান নয় বরং ক্ষমা করার মধ্যেই আল্লাহর যত খুশি। তাঁর বান্দাহ তাওবা করলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন। এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস তিনি উদ্ধৃত করেন। রসূল (সা) একটি উদাহরণ দেন, এক ব্যক্তি মরুভূমিতে তার একমাত্র বাহন উটের পিঠে মাল-সামান রেখে কোন গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জেগে সে দেখে যে,তার উটটি নেই। তার খাদ্য, পানি ও মাল-সামান সবই সেই উটের পিঠে। তখন সে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে ক্লান্ত হয়ে আবার সেই গাছের নিচে ফিরে আসে। সে তখন হতাশ হয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকে এবং এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জেগে মাল-সামানসহ উটটিকে তার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় পেয়ে সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে। কোন বান্দাহ গুনাহ করে তাওবা করলে আল্লাহপাক সেই উট হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তির মত খুশি হয়ে ওঠেন। বান্দাহ আল্লাহকে যেভাবে অনুভব করে আল্লাহ তার বান্দার কাছে সেভাবে ধরা দেন। অর্থাৎ বান্দাহ যখন আল্লাহকে দয়াময়, মেহেরবান, উদার ও ক্ষমাশীল হিসেবে মনে করবে আল্লাহ তার কাছে তেমনভাবেই ধরা দেবেন। তাই বান্দার উচিৎ নাফরমানিমূলক সকল কর্মকান্ড থেকে তাওবা করে আল্লাহর একান্ত অনুগত বান্দাহ হয়ে চলা। শয়তান প্ররোচনা দেয় আরো সময় আছে, এখন আনন্দ-স্ফুর্তি করে নাও, পরে তাওবা করা যাবে। মানুষের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তাওবার আর সুযোগ থাকে না। যেমন ফেরাউনের তাওবা গৃহিত হয়নি। বান্দাকে কাছে পাওয়ার জন্য আল্লাহপাক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। বান্দাহ এক বিঘত পরিমাণ এগিয়ে আসলে আল্লাহ এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যান, বান্দাহ আল্লাহর দিকে হেঁটে আসলে আল্লাহ বান্দার দিকে রহমতের ভান্ডার নিয়ে দৌড়ে যান। যে আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য এত দয়ার্দ, কত শত নেয়ামত দিয়ে তাকে ধন্য করেছেন সেই আল্লাহর নাফরমানির চিন্তা মন থেকে দূর করে আমরা সবাই আল্লাহর অনুগত বান্দাহ হয়ে যাই। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাওবা করে তাঁর নেক বান্দাহ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। ২১/১০/২০১৭ (সংক্ষেপিত)।শ্রুতিলিখনে-প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments