শিশুমন খুবই
আবেগপ্রবণ। সামান্যতেই গোস্যা করে বসে। ধমক দিয়ে বা বকে কোন কাজ করানো মোটেই সম্ভব
হয়ে ওঠে না। আমার নাতনীকে দিয়ে দেখছি বা বাচ্চাদের স্কুলে সাড়ে তিন বছর অধ্যক্ষ হিসেবে
দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেও লক্ষ্য করেছি। তাদেরকে শুধুই প্রশংসা করতে হবে। প্রশংসা করার
মধ্য দিয়ে যেটা সম্ভব শাস্তি বা ভয় দেখিয়ে তা কখনই সম্ভব নয়। বরং তাতে তার মাঝে আরো
জিদ চাপে বা পিতা-মাতা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এখন এটা একটি শ্লোগান-‘বাচ্চাদের শুধু হ্যাঁ বলুন।’ ইন্টারনেটে
টমাস আলভা এডিসন সম্পর্কীয় একটি লেখা পড়েছিলাম। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এডিসনের মাকে
উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে এডিসনকে বলেন, ‘তুমি চিঠিটা
না খুলে তোমার মাকে দিবে।’ এডিসন তার মাকে চিঠিটা দিয়ে জানতে চায় তাতে কী লেখা?
তার মা চিঠিটা খুলে অঝোরে কাঁদেন এবং এক পর্যায়ে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলেন, ‘আপনার পুত্র খুব মেধাবী, এই স্কুলটি তার জন্য অনেক ছোট এবং তাকে শেখানোর
মত যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি নিজেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করুন।’ তারপর থেকে শুরু হয় এডিশনের মা’র সংগ্রাম এবং
ঠিকই ছেলেকে তিনি গড়ে তোলেন।এই এডিসনই হন বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীদের একজন।।গ্রামোফোন,
ভিডিও ক্যামেরা ও বৈদ্যুতিক বাতিসহ বহু যন্ত্রের আবিষ্কারক এই মার্কিন বিজ্ঞানী। মা’র মৃত্যুর অনেক দিন পর এডিসন তাঁর মা’র পুরনো জিনিসপত্র
খোঁজা-খুঁজি করতে যেয়ে ভাঁজকরা অবস্থায় একটি কাগজ পান এবং খুলে দেখেন যে, তার স্যারের
দেয়া সেই চিঠি। তাতে লেখা ছিল-‘আপনার সন্তান স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন, সেই
এই স্কুলের উপযুক্ত নয়, আমরা কোনভাবেই তাকে আমাদের স্কুলে আর আসতে দিতে পারিনা।’ সেই চিঠিটা পেয়ে এডিসন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং ডায়েরিতে লিখেন,
‘টমাস আলভা এডিশন একজন স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন শিশু ছিলেন। একজন আদর্শ মায়ের
দ্বারা তিনি শতাব্দীর সেরা মেধাবী হয়ে উঠলেন।’ একটি পজিটিভ
কথা ও অনুপ্রেরণা একজন ব্যক্তির জীবনে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে, এডিসন তারই উদাহরণ।
তুমি পারবে
না, তোমার দ্বারা কিছু হবে না, তোমার বন্ধুরা পারে অথচ তুমি পারো না, এমন কথাবার্তায়
শিশুর কোন কল্যাণ নয়, বরং তাকে ধ্বংসই করে। শিশুকে সব সময় অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে। তুমি
অনেকের চেয়ে ভালো, তুমি আগের চেয়ে ভালো, তুমি ভালো ছেলে/মেয়ে, তুমি পারবে, তুমি করলে/পারলে
আমরা খুশি হয়ে যাই। শিশুমনে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলায় পিতা-মাতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব।
১১/১১/২০১৭
Comments
Post a Comment