হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ি

 বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 

ফজরের নামাজ যথারীতি মসজিদে গিয়ে আদায় করি। লিফট বন্ধ থাকায় সাততলায় সিড়ি বেয়ে নামি ও উঠি। কোনো সমস্যা বোধ করিনি। ফেসবুকে কিছু সময় যায়। সাতটার দিকে মাথা ঘুরতে থাকে। ভাবলাম প্রেসার লো হয়েছে। এক গ্লাস শরবত খেলাম। একটু পরে স্যালাইন খেলাম। আটটার দিকে ভাত খেলাম লাউ ও শিং মাছ দিয়ে। কিছুক্ষণ পরেই বমি হয়ে গেল। শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরছিল। লতিফুর চেষ্টা করলো প্রেসার মাপার জন্য। কিন্তু ধারেকাছে যন্ত্র পাওয়া গেল না।

ছোট ভাই ডা. কামাল, ডা. শামীম ও ডা. রনিকে ফোন দিয়ে কাউকে পেলাম না। পরে কামাল জানিয়েছে যে হাসপাতালে গিয়ে দ্রুত ইসিজি করতে। ডা. শামীম জানালো, মামা অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তার দেখান। ডা. রনিও ফোন করেছিল।

মেয়েকে ফোন করলে অল্প সময়ের মধ্যে তার ননদ ডা. মোহসিনা ও দুই নাতি-নাতনিসহ হাজির হলো। মোহসিনা প্রেসার মেপে পেল ১৪০/৮০। খুব বেশি না হলেও আমার জন্য বেশি। 

জামাইয়ের গাড়িতে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে গেলাম। মোহসিনা দ্রুত টিকেট কাটা থেকে শুরু করে ডাক্তার দেখানো, বিভিন্ন টেস্টের ব্যবস্থা করে ফেললো। পেলাম মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ইলিয়াস ভুঁইয়াকে। মোহসিনার স্যার এবং তিনি খুবই আন্তরিক। প্রথমত তিনি একদিনের জন্য ভর্তি হতে বলেছিলেন। ইসিজি ও ইকো রিপোর্ট দেখে ব্লাডের রিপোর্টসহ আগামীকাল দেখাতে বলে বাসায় পাঠালেন। ইকো করার সময়, ডাক্তারের চেম্বারে ও বাসায় আসার পর মোট চারবার বমি হলো। মাথা ঘুরার সমস্যা এখনো রয়েছে। 

কিছুক্ষণ আগে খেয়ে বসে বসে নামাজ পড়লাম। বমির ঔষধ খাওয়ার পরে আর বমি হয়নি। এখন কিছুটা ভালো বোধ করছি। 

রোগ-ব্যাধি যে খুব খারাপ এমনটি নয়। সুস্থতা আল্লাহপাকে বড়ো নেয়ামত, অসুস্থ হলে সেটা  উপলব্ধি করা যায়। এজন্য প্রয়োজন সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। পরিবার যে কত অপরিহার্য সেটিও বোঝা যায়, বিশেষ করে স্বামী -স্ত্রী, ছেলে-মেয়ের পেরেশানি ও খেদমত প্রাপ্তির মাধ্যমে। আর আল্লাহ তায়ালা এজন্যই তাদেরকে উত্তরাধিকার করেছেন।

আমার বয়স ৭০। আল্লাহপাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা যে আমি মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার সাহেব সমস্যা জানতে চাইলে তাঁকে বললাম, আমি তো কোনো ঔষধ খাই না। না প্রেসার, না ডায়াবেটিস আর না অন্য কোনো ঔষধ। আমি আল্লাহর কাছে দীর্ঘ জীবন নয়, সুস্থ ও কর্মক্ষম জীবন চাই। মৃত্যুকে অতো ভয় লাগে না। আমার বিশ্বাস, আমার আল্লাহ আমার সাথে ভালো ব্যবহারটাই করবেন। না, আমার কোনো নেক আমলের বিনিময়ে নয়। আল্লাহর প্রতি আমার শিরকমুক্ত বিশ্বাস ও তাঁর সম্পর্কে সুধারণা। আমি আল্লাহকে অত্যন্ত দয়ার্দ্র  হিসেবে অনুভব করি। আমি তাঁর বিদ্রোহী ও অকৃতজ্ঞ বান্দা নই। আমি বিশ্বাস করি, কেবল বিদ্রোহী ও আল্লাহর বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী ব্যক্তিবর্গের জন্যই জাহান্নাম প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। আল্লাহর অনুগত বান্দাদের ক্ষমা করার জন্য তিনি নানা উপায় তালাশ করবেন। 

ফেসবুকের বদৌলতে আমার অনেক বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা আমার কল্যাণ কামনা করেন এবং আমিও তাঁদের কল্যাণ চাই। পরস্পর কল্যাণ কামনাই আমাদের দীন।

আমি আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে সুস্থতার জন্য দোয়া চাই।