Skip to main content

রাষ্ট্রের কাজ জুলুম না করা এবং জুলুম বন্ধ করা

 মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছে। একটি রাষ্ট্র বা সরকারের মৌলিক কাজ হলো দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করা এবং জনগণের জানমাল ও সম্মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পাপাচারী লোকজন অপরের জানমাল ও সম্মান যাতে ক্ষুণ্ণ করতে না পারে সেজন্য রাষ্ট্র বা সরকারের কাজ হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। দুর্ভাগ্য, আমাদের সরকার উল্টো পথে চল। মামলা-মোকদ্দমার ঘনঘটা এবং বারবার জেলগেট থেকে আটক কোনো সভ্য দেশের পরিচায়ক হতে পারে না। 

আমাদের দেশে মামলা হাজারে হাজার নয় বরং লাখে লাখে। এই যেখানে অবস্থা সেখানে এই দেশটির পরিচিতি কী দাঁড়াতে পারে? নিশ্চয়ই সবাই বলবে চোর-বাটপার ও অসভ্যদের দেশ। বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকায় কয়েদির অভাবে জেলখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বিপরীতে  আমাদের দেশে নতুন নতুন জেলখানা তৈরি হচ্ছে এবং জেলখানায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ কয়েদি রয়েছে। গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত রাজনৈতিক যতো মামলা রয়েছে তাতে সবাই যদি আদালতে হাজির হয় এবং আদালত জামিন না দেয় তাহলে  সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জেলখানায় রূপান্তর করলেও সকল আসামিকে আবদ্ধ রাখা সম্ভব হবে না।

সম্প্রতি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আর কোনো হয়রানিমূলক মামলা হবে না। এর মানে কী? অপরাধ সংঘটন নয় সরকারের ইচ্ছায় এসব মামলা। একবার এটর্নি জেনারেল মহোদয় বলেছিলেন, মামলা হতে আর কতক্ষণ? আমরা কি কোনো সভ্য দেশের নাগরিক? 

একটি মুসলিমপ্রধান দেশে মামলা-মোকদ্দমা ও জনহয়রানি অকল্পনীয়, যেখানে আল্লাহর রসুল সা. মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে শিরকের সাথে তুলনা করেছেন। আর জানা কথা, এসব মামলার সাথে মিথ্যা জড়িয়ে আছে এবং যারা এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাদের পক্ষে আর মুসলিম থাকা সম্ভব নয়। জুলুম প্রসঙ্গে কুরআন ও হাদিস থেকে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করি। আল্লাহ বলেন, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে- সুরা হুমাজা। মানুষকে একটু অপমান করা ও পেছনে নিন্দাবাদ করে সম্মান হানি করার শাস্তি যদি নিশ্চিত হয় (তাদের শাস্তি হুতামা এবং সেটি আল্লাহর আগুন), তাহলে গুম-খুন ও জেল- জুলুমের শাস্তি কী হবে?

মামলাবাজ যারা তারা গোয়েবল্সকে নিজেদের গুরু হিসেবে গ্রহণ করেছে। ঐ শয়তানটার কথা, একটা মিথ্যা বারবার বললে সেটা সত্যে পরিণত হয়ে যায়। গ্রামের এক ক্ষুদ্র কর্মী থেকে শুরু শীর্ষ নেতা-নেত্রী অনর্গল মিথ্যা বলে। পরকালকে অবিশ্বাস করার কারণেই এটি সম্ভব। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, সবচেয়ে দরিদ্র ব্যক্তি সেই যে নামাজ-রোজার মতো কিছু ভালো কাজ করার পরও মানুষের প্রতি জুলুম করে। কিয়ামতের দিন  মজলুমকে জুলুমের বদলা পরিশোধ করতে গিয়ে সে নিঃস্ব (আমলশূন্য) হয়ে পড়বে। অবশেষে মজলুমের গুনাহ তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 

আল্লাহ তায়ালা নিজে তাঁর বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না এবং জুলুৃম তাঁর নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন; সাথে সাথে কেউ তাঁর বান্দার প্রতি জুলুম করবে সেটিও সহ্য করেন না। মুমিন বান্দাদের প্রতি জুলুম তাঁর কাছে অসহনীয়। তিনি বলেন, যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব এবং আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি- সুরা বুরুজ। 

আল্লাহপাক জালেমকে এসব জুলুমের বদলা হিসেবে আখেরাতে জাহান্নাম তো দেবেনই, দুনিয়াতেও দেবেন, শুধু অপেক্ষার পালা। আল্লাহ তায়ালা সবার মাঝে উপলব্ধি দান করুন এবং তওবা করে পরিশুদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। ১৫.০৬.২০২৩

Comments