Skip to main content

কবুল হজের বিনিময় জান্নাত

 বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 

স্বপ্নধারা হাউজিং জামে মসজিদে জুমা আদায় 

মসজিদটি উদ্বোধন হয়েছে ২৩ মার্চ ২০২৩। মাত্র দু'মাস বয়স হলো। বেশ উঁচুতে টিনের শেড, টয়লেট, ওজুখানা এবং যা যা অত্যাবশ্যক সবই রয়েছে। কোম্পানি প্রদত্ত পাঁচ কাঠা জমির ওপর  এলাকাবাসী সবাই মিলে মসজিদটি গড়ে তুলছে। শীঘ্রই এটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদে রূপ নেবে ইনশা- আল্লাহ। ছেলের বাসায় বেড়াতে এসে জুমা আদায় করলাম। এরপূর্বে দুই জুমা পড়েছি মোহাম্মদপুর মসজিদে আবরায়। সেটি বিশাল মসজিদ ও মাদ্রাসা কমপ্লেক্স। আমি সাধারণত যেখানেই জুমা পড়ি সেখানে খতিব মহোদয়ের বক্তৃতা (খুতবা) মনোযোগ দিয়ে শুনে ফেসবুকে শেয়ার করি।

আজ মোহাম্মদপুর স্বপ্নধারা জামে মসজিদের খতিব আলহাজ মাওলানা মুফতি কামরুল হাসান আল্লাহ তায়ালার হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.- এর শানে দরুদ ও সালাম পেশ শেষে হজবিষয়ক কুরআনের বেশ কিছু আয়াত ও হাদিস পেশ করেন। তিনি হজের মাসালা-মাসায়েল নয়, এর দর্শন, তাৎপর্য ও হাকিকত তুলে ধরেন।

কুরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে খতিব মহোদয় বলেন, বায়তুল্লাহ পর্যন্ত সফরের পাথেয় ও হজ পালনের সামর্থ্য যার রয়েছে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য হজ ফরজ করেছেন। হজ না করা কুফরি। আর আল্লাহ দুনিয়া জাহানের মুখাপেক্ষী নন। হাদিস উদ্ধৃত করে তিনি বলেন সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে হজ করে না তার মৃত্যু ইহুদি না নাসারা হয়ে হলো সেটি তাঁর দেখার নয়। তিনি আরো বলেন, মাবরুর হজের বিনিময় হলো জান্নাত এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি, হালাল উপার্জন ও রসুলুল্লাহ সা.-এর তরিকা মোতাবেক হজ আদায় করবে সে সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে।

খতিব মহোদয় বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর পছন্দের বিষয়য়াবলী কুরআন মজিদে উল্লেখ করে পরবর্তী কালের লোকদের জন্য উদাহরণ হিসেবে দান করেছেন। যেমন, আসহাবে কাহাফের ঘটনা। নিজেদের ঈমানকে হেফাজত ও দীন মানার লক্ষ্যে জালেম শাসক থেকে রক্ষা কল্পে গুহায় আশ্রয় এবং নবি-রসুলদের কাহিনী কখনো সবিস্তারে আবার কখনো সংক্ষেপে উল্লেখ করে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবধরনের ত্যাগ ও কুরবানি দিতে বান্দাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

হজ এমন একটি ইবাদত যার মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণ আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া হয়। আল্লাহ তায়ালার প্রতি ভালোবাসার পূর্ণ প্রকাশ হলো হজ। এই হজের সকল আনুষ্ঠানিকতা মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহিম আ.-এর চরম আত্মত্যাগের স্মরণ। হজরত ইব্রাহিম আ. ও তাঁর স্ত্রী হাজেরা আ. এবং ছেলে ইসমাইল আ.-এর স্মরণ হলো হজের আনুষ্ঠানিকতা। ইব্রাহিম আ. -এর জীবনে একের পর এক পরীক্ষা। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ তাওহিদবাদী, শিরকের প্রচণ্ড বিরোধী। তাঁর পিতা, স্বজাতি ও শাসকবর্গ সকলেই ছিল মূর্তিপূজক। নিজ হাতে মূর্তি ভেঙে তিনি নমরুদের রোষানলে পড়েন এবং শাস্তি হিসেবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হন। ঈমানের প্রশ্নে তিনি তাঁর জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করেন।

আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নমরুদের অগ্নি থেকে রক্ষা পেয়ে তিনি মাতৃভূমি ত্যাগ করেন। ঈমানের প্রশ্নে স্বদেশের ভালোবাসা অতি তুচ্ছ- ইব্রাহিম আ. সেটিই প্রমাণ করেন। এরপর পরীক্ষা আসে স্ত্রী ও বৃদ্ধবয়সে পাওয়া সদ্যজাত সন্তানকে নির্জন মরুভূমিতে রেখা আসা। মা হাজেরা আ. পেরেশান হয়ে শুধু জিজ্ঞেস করেন, এটা কি আল্লাহর হুকুম? জবাবে ইব্রাহিম আ. বলেন, হ্যাঁ। একথা শুনে মা হাজেরা আ. ধৈর্য ধারণ করেন। এক পর্যায়ে পানি ও সামান্য খাবার ফুরিয়ে গেলে পুত্র ইসমাইলের জীবন রক্ষার্থে মা হাজেরার সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ছোটাছুটি ও জমজম কূপের সৃষ্টি হয় এবং জমজম কূপকে কেন্দ্র করে সেখানে জনবসতি গড়ে উঠে। ইব্রাহিম আ.-এর জীবনে সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা আসে পুত্র ইসমাইল আ.-কে কুরবানি করার নির্দেশের মধ্য দিয়ে। 

পিতাপুত্র মিলে কাবাঘর পুননির্মাণ, তাওয়াফ, নামাজ আদায় এবং মানুষকে আহবান জানানো সবই আল্লাহ তায়ালার কাছে খুবই পছন্দনীয় আমল। হজের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সবই আল্লাহর তিন বান্দার স্মরণ। তাঁদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত স্মরণ করার জন্য কোনো আমল ফরজ, কোনটি ওয়াজিব, কোনটি সুন্নাত-মুস্তাহাব করে মুসলিম উম্মাহর মাঝে জারি করে দিয়েছেন। প্রিয়তম নবি মুহাম্মদ সা.-এর জীবনেও পরীক্ষার পর পরীক্ষা। মক্কায় তেরোটা বছর কাফেররা সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনে তাঁকে জর্জরিত করে তুলেছিল। তিনটি বছর কারাবরণের (শিহাবে আবু তালেব) মধ্য দিয়ে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গী- সাথিদের অবর্ণনীয় কষ্ট দেওয়া হয়েছিল।

হজের আনুষ্ঠানিকতা ও মক্কা-মদিনায় দেড়টা মাস অবস্থানের মধ্য দিয়ে একজন হাজির অন্তরে এমন উপলব্ধি জাগ্রত হয় যে ঈমানের দাবি পূরণ ও আল্লাহর দীন পালনের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারে না। স্বদেশভূমির মোহাব্বত, স্ত্রী ও সন্তানের মায়া, এমনকি নিজের জীবনকে বিসর্জন করতে সে প্রস্তুত। তাওয়াফ করার মধ্য দিয়ে সে শিরক অস্বীকার করে কাবাকেন্দ্রিক জীবনেরই ঘোষণা প্রদান করে। কুরবানি দানের সময় এ ঘোষণাই দান করে যে, 'নিশ্চয়ই আমার নামাজ, যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান, জীবন ও মৃত্যু আল্লাহরই জন্য।' হজ পালনের মধ্য দিয়ে একজন হাজি বারবার তাওহিদেরই ঘোষণা দিয়ে থাকে। এজন্যই হজ অনন্য, এর এতো ফজিলত এবং মাবরুর হজের বিনিময় জান্নাত। 

খতিব মহোদয় মাবরুর হজের কতিপয় শর্ত উল্লেখ করেন। 

এক. হজ হতে হবে নির্ভেজাল আল্লাহর উদ্দেশ্যে

দুই. রসুলুল্লাহ সা. -এর সুন্নাত মোতাবেক 

তিন. হালাল উপার্জনের মাধ্যমে 

চার. হজে কোনো ফাহেশা কাজ হবে না

পাঁচ. হজ পালনের মধ্যে কেউ যেন কষ্ট না পায়

খতিব মহোদয় সকলকে হজের নিয়ত করার আহবান জানান এবং যারা হজে গিয়েছেন তাদের সুস্থতা কামনা করেন ও হজ কবুলের জন্য দোয়া করেন।

Comments