Skip to main content

রাজনীতিতে সহিংসতা : দায়ী কে?

 দিন দিন রাজনীতি সহিংস হয়ে উঠছে। প্রশ্ন এর জন্য দায়ী কে? সভাসমাবেশ করা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার পরিবর্তনের স্বাভাবিক পন্থা হলো সুষ্ঠু নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয় তা গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মহলও সেটাই মনে করে। কেয়ারটেকার সরকারের দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের উচিত গণদাবি মেনে নিয়ে বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসা। 

ইউরোপ-আমেরিকার মতো সভ্য দেশে কখনো পরিস্থিতি এতদূর গড়ায় না। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকার পরিবর্তন প্রায়ই স্বাভাবিক পন্থায় হয় না। এর পেছনে প্রধান কারণ গণতন্ত্রহীনতা। গণতন্ত্রের পরমত সহিষ্ণুতা ও উদারতা আমাদের মাঝে নেই। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে কী ঘটতে পারে তার উদাহরণ  আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা এসব থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না।

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান যখন সাড়ম্বরে উন্নয়ন দশক উদযাপন করছিলেন তখনই জনগণ তাঁর  স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল। উন্নয়ন নয়, গণতন্ত্রই একটি দেশে শান্তি, স্বস্তি ও  স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি। পোলান্ডের শ্রমিক নেতা (পরে প্রেসিডেন্ট) লেস ওয়ালেসাকে বলতে শুনেছি, উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এক বাটি ঝোলেও আমি তৃপ্ত হবো যদি আমাকে কথা বলার অধিকার দেওয়া হয়।

এবারে বিরোধী দলের আন্দোলন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় চলছে। ২৮ তারিখের মহাসমাবেশ ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। স্মরণকালের মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি মাথাগরম কোনো কর্মসূচী না দিয়ে ২৯ তারিখ ঢাকার প্রবেশ পথে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, সরকারি দল ২৮ ও ২৯ তারিখ দুই দিনই শান্তি সমাবেশের নামে চরম উস্কানিমূলক কর্মসূচি দেয়। ২৮ তারিখ তাদের শান্তি সমাবেশে দুই গ্রুপের মারামারিতে একজন নিহত হয়। নিজেদের মধ্যে হওয়ায় তেমন কোনো উত্তাপ ছড়ায়নি। এরই নাম শান্তি সমাবেশ।

২৯ তারিখ পুলিশের লাঠিপেটায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানের আহত হওয়ার দৃশ্য দেশবাসী ও বিশ্ববাসী দেখেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে গাড়িতে আগুন দেওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এতকিছুর পরও হরতালের মতো কর্মসূচি না দিয়ে বিরোধী দল আগামী সোমবার সভাসমাবেশের মতো নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছে। আরও মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ রবিবারে কর্মসূচি দেওয়ায় বিএনপি মহাসচিব জানালেন, তারা সংঘাত চায় না। তাই রবিবারে পরিবর্তে সোমবারে তাদের কর্মসূচি পালিত হবে। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিভাগীয় ও জেলা শহরে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য জনগণ দেখেছে। শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে ফেরার পথে পুলিশের লাঠিচার্জ ও গণগ্রেফতারের ঘটনা জনগণের চোখের সামনেই ঘটেছে। কোনো কিছুতেই বিরোধী দলের আইন অমান্য ও সহিংসতা ছিল না। জনগণ দেখেছে সরকারের এক তরফা বাড়াবাড়ি ও উস্কানীমূলক কথাবার্তা। মিটিং মিছিল করা নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার এবং আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সংস্থাসমূহের দায়িত্ব নিরাপত্তা বিধান করা।

সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করা হলে এ কথা বলতেই হয়, এবারের বিরোধী দলের আন্দোলন অত্যন্ত নিয়মানুগ ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিবিড়ভাবে পর্যাবেক্ষণ করছে সরকার বা বিরোধী দলের কর্মতৎপরতা। সহিংসতা কারো জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না। সরকারের বোধোদয় হোক ও এক অনিশ্চিয়তা থেকে দেশকে উদ্ধার করার জন্য সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে কেয়ারটেকার ইস্যুতে এক টেবিলে বসা জরুরি বলে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা উপলব্ধি করি।

আমরা চাই, রাজনীতির অঙ্গনে উদারতা, সহনশীলতা ও ক্ষমাশীলতা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য এক নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সবার আন্তরিকতা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাজনীতিবিদদের মাঝে সমঝোতার মানসিকতা দান করুন।

Comments