হাদিসের পাঠ
হুমায়দী রহ. বর্ণনা করেন, খাব্বাব রা. বলেন, আমি একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খেদমতে হাজির হলাম। তখন তিনি তাঁর নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কাবাগৃহের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করছিলেন। যেহেতু আমরা মুশরিকদের পক্ষ থেকে কঠিন নির্যাতন ভোগ করছিলাম। তাই আমি বললাম, আপনি কি আমাদের (শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য) আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন না? তখন তিনি উঠে বসলেন এবং তাঁর চেহারা রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী ঈমানদারদের মধ্যে কারো কারো শরীরের হাড় পর্যন্ত সমস্ত মাংস ও শিরা উপশিরাগুলি লোহার চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে বের করে ফেলা হতো। কিন্তু এসব নির্যাতনও তাদের দীন থেকে বিমুখ করতে পারতো না। তাঁদের মধ্যে কারো মাথার মধ্যবর্তী স্থানে করাত স্থাপন করে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হতো। কিন্তু এ নির্যাতনও তাঁদেরকে দীন থেকে ফেরাতে পারতো না। আল্লাহর কসম, আল্লাহ্ তা’আলা অবশ্যই দীনকে পরিপূর্ণ করবেন, ফলে একজন উষ্ট্রারোহী সান’আ (শহর) থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে সে ভয় করবে না। বুখারি।
খাব্বাব ইবনে আরাত রা. মক্কায় ইসলাম গ্রহণ করার পর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছিলেন। পেশায় ছিলেন একজন কর্মকার। ইসলাম থেকে সরে আসার জন্য তাঁর উপর নানাভাবে নিপীড়ন করা হতো। এমতাবস্থায় তিনি রসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার জন্য ফরিয়াদ জানান।
রসুলুল্লাহ সা. জবাবে এই হাদিসটি বর্ণনা করেন। অতীত যুগে যারাই ঈমান আনয়ন করেছিল তাদের সকলকেই কীভাবে নির্যাতন করা হতো তারই বর্ণনা তিনি দান করেছেন। হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। বাতিলের (কুফরি শক্তির) ছলনার কোনো অভাব নেই। সুরা বুরুজে উল্লেখ করা হয়েছে, আগুনের গর্তে ঈমানদার জনগোষ্ঠীকে ধরে এনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং জ্বলেপুড়ে মরার বিভৎস দৃশ্য দেখে তারা উল্লাস করেছিল। আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করে বলেন, এই ঈমানদার জনগোষ্ঠীর কোনো অপরাধ নেই, অপরাধ তাদের একটাই, তারা পরাক্রমশালী আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে।
বর্তমানেও লক্ষ করা যায় সমাজে সবচেয়ে সৎ চরিত্রবান ও মুত্তাকি লোকজনের উপর নানাবিধ অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তাদের রুখতে না পেরে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য নানা কূটকৌশল করে যাচ্ছে। গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার সব তাদের একচেটিয়া। এই জুলুমের বদলা তাদের পেতেই হবে এবং বদলা হিসেবে জালেমদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব। আল্লাহর বাণী, যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব এবং আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি - সুরা বুরুজ।
রসুলুল্লাহ সা. মুমিনদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, কোনো জুলুমই ঈমানদারদের ঈমান থেকে সরাতে পারেনি এবং টিকে থাকার বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নিরাপদ সমাজ অর্থাৎ ইসলামের বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুল পাঠিয়েছেন দীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে। যারাই দীন বিজয়ের লক্ষ্যে চেষ্টা- প্রচেষ্টা করবে আল্লাহপাক তাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে জান্নাত দান করবেন (সুরা সফ)। আরো সুসংবাদ দিয়েছেন, আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়ের (সুরা সফ)।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সকল কুফরি শক্তি (প্রকাশ্য কুফর ও মুনাফিক) একাট্টা হবে। এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ তায়ালা নিষ্ঠাবান মুসলিম ও কাফের চিহ্নিত করবেন। আল্লাহপাক নানাভাবে বলেছেন, মুমিনদের প্রকৃত বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রসুল ও ঈমানদার জনগোষ্ঠী। আল্লাহ আমাদের রব, ইলাহ, অভিভাবক, শ্রেষ্ঠতম অভিভাবক এবং তিনিই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমাদের উচিৎ কেবল আল্লাহরই উপর নির্ভর করা। মুমিনদের কোনো ভয় নেই। মৃত্যু আমাদের আল্লাহরই কাছে পৌঁছে দিবে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেউন)।
Comments
Post a Comment