জুমার খুতবা
০৭.০৮.২০২৩
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সাইয়াফ শুরুতে আল্লাহপাকের হামদ ও রসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করেন। তিনি বলেন, কুরআন মজিদে রয়েছে একদিকে আল্লাহপাকের হুকুম অর্থাৎ যেটা পালন করতে হবে আবার রয়েছে নিষেধ অর্থাৎ যেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে যত নির্দেশ রয়েছে তন্মধ্যে সর্বাধিক সংখ্যায় বলা হয়েছে নামাজের কথা। কখনো বলা হয়েছে তোমরা সালাত কায়েম করো, আবার বলা হয়েছে রুকুকারীগণের সাথে রুকু করো, আবার মুমিনদের গুণ বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে বলা হয়েছে ওরা খুশুখুজুর সাথে নামাজ আদায় করে। আবার নেতিবাচকভাবে বলা হয়েছে নামাজ আদায় না করাটা জাহান্নামিদের আচরণ। খতিব মহোদয় কুরআন মজিদ থেকে অসংখ্য আয়াত উদ্ধৃত করেন। খতিব মহোদয়ের আলোচনা থেকে এখানে কিছু উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন ব্যক্তি ঈমান আনার পরে তার প্রথম কর্তব্য হয় মুয়াজ্জিনের আজান শোনার সাথে সাথে মসজিদে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় করা। এই নামাজই প্রমাণ করে যে সে ব্যক্তি ঈমানের ঘোষণায় সত্যবাদী। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, নামাজ হলো ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্যকারী। অর্থাৎ যে নামাজ আদায় করে সে মুসলিম এবং যে আদায় করে না সে কাফের (অমান্যকারী)। নামাজ এমন একটি ইবাদত জ্ঞানবুদ্ধি লাভের পর থেকে মৃত্যু (হুঁশ থাকা শর্ত) পর্যন্ত একটি মুহূর্তের জন্য মাফ নেই। দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, বসে না পারলে শুয়ে, তাও না পারলে ইশারায় পড়তে হবে। সফরে থাকলে সংক্ষেপ করবে, যুদ্ধের ময়দানেও সে নামাজ পড়বে অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই একজন মুসলিম কখনই নামাজ বাদ দিতে পারবে না।
কুরআন মজিদ আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়াত (নির্ভুল জীবন যাপনের বিধান), এই কুরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য (বাকারা ১৮৫) হলেও কুরআন থেকে হেদায়াত তারাই পাবে যারা মুত্তাকি। সুরা বাকারার ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে মুত্তাকি তারাই যারা গায়েবে বিশ্বাস করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমরা যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। সুরা বাকারার ৪৩ নং আয়াতে আদেশসূচক শব্দ ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, জাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীগণের সাথে রুকু করো।’ জামায়াতের সাথে নামাজ আদায় করা আল্লাহপাকের হুকুম। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক হলো প্রভু ও গোলামের। আল্লাহর বাণী, ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমারই ইবাদতের (গোলামী) জন্য’- সুরা আযযারিয়াত ৫৬। নামাজ হলো আল্লাহর ইবাদতের সর্বোত্তম নমুনা এবং নামাজের মধ্য দিয়ে বান্দা বারবার আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে, আমরা তোমারই গোলামী করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই। নামাজ বারবার স্মরণ করে দেয় বলে নামাজকে কুরআন মজিদে জিকির বলা হয়েছে। কুরআনকেও জিকির বলা হয়। কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মানুষ আল্লাহর বিধিবিধান স্মরণ করে।
সুরা আনফালে (২ ও ৩ আয়াত) বলা হয়েছে, ‘সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই, আল্লাহর স্মরণ হলে যাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সম্মুখে পড়া হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর নির্ভর করে। তারা নামাজ কায়েম করে এবং যা কিছু রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করে। এ ধরনের লোকেরাই সত্যিকার মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট মর্যাদা, ভুল-ত্রুটির ক্ষমা ও উত্তম রিজিক।
দুনিয়া ও আখিরাতে সত্যিকার সফল হলেন মুমিনরা (সুরা মুমিনুন ১-১০)। আল্লাহপাকের বাণী, ‘নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মুমিনরা যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত হয় (খুশু- খুজুর সাথে নামাজ পড়ে)। সফলকাম মুমিনদের আরো কিছু গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বেহুদা কাজ থেকে দূরে থাকে, জাকাতের পন্থায় সক্রিয় থাকে, লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং নিজেদের নামাজসমূহের হেফাজত করে। সফলকাম মুমিনদের গুণাবলী শুরু করা হয়েছে নামাজ দিয়ে এবং শেষ করা হয়েছে নামাজ দিয়ে। হাশরের ময়দানে প্রথম হিসাব নেয়া হবে নামাজের।
সুরা মুমিনুনের মতো মায়ারিজেও (২৩-৩৫) মুমিনদের কিছু গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে এবং সেটিও শুরু করা হয়েছে এভাবে- যারা নামাজ পড়ে এবং নামাজের ব্যাপারে সবসময় নিষ্ঠাবান এবং যারা নামাজের হেফাজত করে। এরা সম্মানের সাথে জান্নাতে যাবে।
নামাজ কোনো অবস্থাতেই মাফ নেই। সেটি বোঝা যায় কসর ও যুদ্ধের সময়েও নামাজ পড়তে হবে এবং সেসময়ে নামাজ সংক্ষেপ করার কথা বলা হযেছে সুরা নেসা ১০১-১০৩ আয়াতে। নামাজের জন্য পবিত্রতা শর্ত। পানির অভাবে পবিত্রতার অজুহাত তুলে নামাজ মাফ নেই। সেক্ষেত্রে মাটির সাহায্যে তায়াম্মুমের বিধান স্বয়ং আল্লাহপাকই দান করেছেন (সুরা আল মায়েদাহ ৬, আন নেসা ৪৩)।
বর্তমান সমাজ পাপাচারে পূর্ণ। জুলুম-নির্যাতন, মাদকাসক্তি, ঘুষ-দুর্নীতি নানা অন্যায়ের মূলে রয়েছে আল্লাহকে ভুলে থাকা। নামাজ মানুষের মাঝে আল্লাহর স্মরণ জারি রাখে এবং মানুষকে অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে। আল্লাহর বাণী, ‘হে নবি! যে কিতাব তোমার ওপর নাজিল করা হয়েছে, তুমি তা তেলাওয়াত করো এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করো; নিঃসন্দেহে নামাজ মানুষকে অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে; পরন্তু আল্লাহ তায়ালার স্মরণ একটি মহান কাজ; তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা তা জানেন’- সুরা আনকাবুত ৪৫।
নামাজের গুরুত্ব, এর জোর তাগিদ আল্লাহপাক নিজেই তাঁর কিতাবে নানাভাবে দান করেছেন। নামাজ না পড়াকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে সুরা মুদ্দাস্সিরে উল্লেখ করা হয়েছে। খতিব মহোদয় তাঁর মুসল্লিদের নামাজে যত্নশীল হওয়া এবং পরিবারের সবাইকে নামাজ আদায়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আহবান জানান।
Comments
Post a Comment